ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুগ্ধতা ছড়াতে চান মুগ্ধা...

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

মুগ্ধতা ছড়াতে চান মুগ্ধা...

রুমেল খান ॥ আগামী বছরের ১৯ এপ্রিল পালন করতে যাচ্ছেন নিজের ১৮তম জন্মদিন। যদিও চেহারা দেখে বয়স ১৩-১৪’র বেশি বলে মনে হয় না। এই কৃষ্ণকলির মুখশ্রী দর্শনেই যে কারোরই হৃদয়ে মুগ্ধতার আবেশ ছড়াতে বাধ্য। মজার ব্যাপার হচ্ছেÑ তার নামটাও হচ্ছে মুগ্ধা। মুগ্ধা আগ্রে। ভারতীয় এই সপ্তদর্শী সুদর্শনার মূল পরিচয় তিনি একজন শাটলার। ঢাকায় এসেছেন ‘ইউনেক্স-সানরাইজ আন্তর্জাতিক ওপেন ব্যাডমিন্টন চ্যালেঞ্জে’ অংশ নিতে। গত বছরও এসেছিলেন। সেবার এককে প্রথম রাউন্ডেই হেরে বিদায় নিয়েছিলেন (সিঙ্গাপুরের প্রতিপক্ষের কাছে, নামটা মনে করতে পারলেন না)। এবার অবশ্য উন্নতি হয়েছে অনেকটাই। এককে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খেলতে পেরেছেন। তার জয়যাত্রা রুখে দেন ভিয়েতনামী প্রতিপক্ষ থি সেন গুয়েন। পরাভূত হলেও এখানেই থেমে যেতে চান না তিনি। এগিয়ে যেতে চান আরও অনেকদূর। পৌঁছুতে চান অভীষ্ট লক্ষ্যে। মহারাষ্ট্র প্রদেশের নাগপুরে জন্ম নেয়া (সেখানেই নিবাস) শাটলারকন্যা মুগ্ধা খুব অল্প বয়সেই হাতে তুলে নেন র‌্যাকেট। এ প্রসঙ্গে মুগ্ধার স্মৃতিচারণ, ‘খুব ছোটবেলাতেই বাবার উৎসাহে ব্যাডমিন্টন খেলতে শুরু করি। বাবা পেশাদার শাটলার ছিলেন না। শখের বশেই খেলতেন এবং ভালই খেলতেন। আমিও প্রথমে শখের বশেই খেলতে শুরু করি। পরে ভালমতো নিয়ম-কানুন জেনে সিরিয়াসলি খেলা শুরু করি। সেটা ২০০৮ সালের কথা।’ দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মুগ্ধা পড়ে মহারাষ্ট্রের এলইডি কলেজে। ব্যাডমিন্টন খেলার সুবাদে ভারতের বাইরে এ নিয়ে তিনবার বিদেশ সফর করা হলো মুগ্ধার। দুবারই বাংলাদেশে। একবার ভিয়েতনামে এবং সেটা এ বছরেই। ভিয়েতনামের টুর্নামেন্টের রেজাল্ট ছিল কোয়ালিফাইং রাউন্ডে চীনের য়িং মেই চিউংয়ের কাছে হেরে বিদায়। বাকি তিনটি টুর্নামেন্ট খেলেন ভারতে। সেগুলো চলতি বর্ষেই। সেগুলোর ফলও খুব একটা আহামরি নয় (একটাতে প্রথম রাউন্ড, বাকি দুটোই কোয়ালিফাইং রাউন্ডে বিদায়)। তাই বলে একেবারে সাফল্যহীনাও নন মুগ্ধা। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন শেষ আটে। মহারাষ্ট্রের র‌্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় সেরা হয়েছেন বার তিনেক। স্কুল পর্যায়ের টুর্নামেন্টে জিবি স্কুলে দু’বার এবং ডিএসও টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনবার (প্রতিটিতেই দলগত ইভেন্টে)। ব্যাডমিন্টন খেলায় আদর্শ কে? ‘আমার ব্যাডমিন্টন কোচ স্যার জিবি ভারগেস।’ সাইনা নেওয়াল কেন নয়? তিনি তো ভারতের সেরা মহিলা শাটলার। বিশ^ব্যাপীও জনপ্রিয়। ‘অবশ্যই সাইনা একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শাটলার। তার খেলা একবার স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসেও উপভোগ করেছি। তাকে পছন্দ করি। স্প্যানিশ নারী শাটলার ক্যারোলিনা মারিনও আমার খুব প্রিয়। তবে জিবি স্যার আমাকে ব্যাডমিন্টনের সবকিছু শিখিয়েছেন। তার ব্যাডমিন্টন একাডেমিতেই ব্যাডমিন্টন শিখছি এখনও, ২০১২ সালে এখানে ভর্তি হয়েছিলাম।’ মুগ্ধার ব্যাখ্যা। কথায় আছে, জীবনে বড় হতে গেলে স্বপ্নটাও হতে হবে অনেক বড়। মুগ্ধাও তাই। ব্যাডমিন্টনে ভবিষ্যত লক্ষ্যটা অনেক বড় মুগ্ধার, ‘২০২০ টোকিও অলিম্পিকে অংশ নিয়ে এককে স্বর্ণপদক জেতাতে চাই মাতৃভূমি ভারতকে। সেই সঙ্গে হতে চাই ভারতের এক নম্বর শাটলার।’ বাংলাদেশ কেমন লাগল? ‘খুব ভাল। এখানকার খাবার ও আবহাওয়া আমাদের দেশের মতোই। এখানকার মানুষের আন্তরিকতা ও সহযোগিতার মনোভাব সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়।’ ক্যারিয়ারে কোন স্মরণীয় ম্যাচ? ‘কেরালার ত্রিভান্দ্রামে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া জাতীয় টুর্নামেন্টে এ্যাঙ্কেল ইনজুরি নিয়ে খেলেও এককের একটি ম্যাচে জিতেছিলাম।’ ব্যাডমিন্টন ছাড়া মুগ্ধার প্রিয় খেলা একটিই, টেবিল টেনিস। যদিও খেলাটি কিভাবে খেলতে হয় তা জানেন না। তবে দেখতে খুব পছন্দ করেন আর কি। ক্রিকেট তো ভারতের এক নম্বর জনপ্রিয় খেলা, তাহলে ক্রিকেট কেন নয়? ‘প্রথমত ক্রিকেট খেলতে পারি না। দ্বিতীয়ত সময়ের অপচয় হয় বলে খেলাটি উপভোগের নয় বরং বিরক্তির’ মুগ্ধার জবাব। তবে ব্যক্তিত্ব ও পৌরুষদীপ্ত চেহারার জন্য ভালবাসেন বিরাট কোহলিকে। আনুশকা শর্মার তাহলে কি হবে? ‘কিছুই হবে না। বিরাটকে নীরবে ভালবেসে যাব। হা হা হা।’ অবসরে গল্প-উপন্যাসের বই পড়তে ভালবাসেন মুগ্ধা। সিডনি শেলটেন তার প্রিয় লেখক। আরেকটি স্বপ্ন আছেÑ ব্যাডমিন্টন খেলে বিশে^র সবাইকে মুগ্ধ করতে চান মুগ্ধা। তার সেই সুনীল স্বপ্ন পূরণ হবে কি?
×