ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছন্দ ধরে রাখলে নিউজিল্যান্ডকে হারানো সম্ভব ॥ মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

ছন্দ ধরে রাখলে নিউজিল্যান্ডকে হারানো সম্ভব ॥ মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইতোমধ্যেই ১২ জন ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়ায় গেছেন। আজ ২২ জনের প্রাথমিক স্কোয়াডে থাকা বাকিরাও যাবেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ সিরিজের আগে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনিং ক্যাম্পটা বেশ কার্যকর হবে বলে মনে করেন টি২০ ও ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভিন্ন কন্ডিশনে চ্যালেঞ্জিং হবে বাংলাদেশের জন্য খেলাটা। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের হারানোটাও অনেক কঠিন। কিন্তু ভাল খেললে সেটা সম্ভব বলে মনে করছেন মাশরাফি। শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সকালে আসন্ন নিউজিল্যান্ড সিরিজ নিয়ে আরও অনেক কথা বলেছেন মাশরাফিÑ প্রশ্ন ॥ হোম সিরিজগুলো জেতার পর এবার বাইরের চ্যালেঞ্জ শুরু হচ্ছে, কী আশা করছেন? মাশরাফি ॥ সত্যিকার অর্থে, আমরা শেষ বছর অধিকাংশ ম্যাচই হোমে খেলেছি। বেশিরভাগ ম্যাচও আমরা জিতেছি। আমরা এক-দুই-দেড় বছর আগে যে টার্গেট করেছি, হোমে অন্তত ৮০ ভাগ ম্যাচ জেতার। আল্লাহর রহমতে আমরা সে জায়গায় সফলতা পেয়েছি। এখন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ যে হোমের বাইরে গিয়ে খেলা। অনেক প্রতিষ্ঠিত দলের জন্যও এটা চ্যালেঞ্জিং। সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। আর নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে ভিন্ন। মনে করি একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে। আমরা ভাল খেলার স্মৃতিগুলো যদি ওখানে নিতে পারি, জাতীয় দলে যেভাবে খেলেছি ওই আত্মবিশ্বাস নিয়ে যদি খেলতে পারি তাহলে মনে হয় ভাল ফল আসবে। প্রশ্ন ॥ হোম সিরিজে জয় পাওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল বাইরের সিরিজে লক্ষ্যমাত্রাটা কী? মাশরাফি ॥ আসলে প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর বাইরেও জিততে কঠিন হয়ে যায়। নিউজিল্যান্ড এখানে যখন আসবে তখন অবশ্যই এটা তাদের জন্য কঠিন। আমরা যখন যাব তখন আমাদের জন্য কঠিন। সবকিছুই আলাদা। তারপরও আমরা চাইব সর্বাধিক ম্যাচ জিততে। তবে এটা বলাও যেমন কঠিন, করাও ততটাই কঠিন। আমরা যেখানেই খেলি সেখানেই জিততে হবে সেটা চাওয়া থাকে, মানুষের প্রত্যাশা থাকে। ওই জায়গা থেকে আমরা ভাল কিছু চেষ্টা করব। আমি যদি বলি তাহলে কেন ৫০ শতাংশের বেশি হবে না? যারা ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট তারা সবাই বোঝে এটা অনেক কঠিন কাজ। তবে আমরা চেষ্টা করব। প্রশ্ন ॥ নিউজিল্যান্ডে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করলে ভাল হতো কিনা? মাশরাফি ॥ হয়তোবা করা যেত। আমি যেটা শুনেছি নিউজিল্যান্ডে ওই সময় সুযোগ পাওয়া যায়নি। আমি নিজেও নিশ্চিত না। খেলার মধ্যে ছিলাম। তাই অস্ট্রেলিয়ায় করা হয়েছে। তবে উদ্যোগটা খুবই ভাল। অন্তত আমরা কাছাকাছি কোথাও চেষ্টা করছি। প্রশ্ন ॥ অনুশীলন ক্যাম্প ও প্রস্তুতি ম্যাচ কতটা উপকারী হবে? মাশরাফি ॥ সমস্যাগুলো ভাগাভাগি করা যাবে। ভাল জিনিসগুলো আলোচনা হবে। এটা কাজ করতে সুবিধা করবে। ২০১৫ সালের আগে ১৫ দিনের একটা ক্যাম্প হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। ওটা কিন্তু আমাদের কাজে দিয়েছে। তারপর শেষ বিশ্বকাপের কথা যদি বলেন আমরা চিটাগাং ও খুলনায় ক্যাম্প করেছি। হয়ত কন্ডিশন ভিন্ন ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের জন্য এটা কাজ করেছে। এটাও কাজ করবে। প্রশ্ন ॥ শহীদ ও শফিউল ইনজুরিতে পড়ার কারণে এখন পেস আক্রমণটা কেমন হবে বলে মনে করছেন? মাশরাফি ॥ ইনজুরি নির্দিষ্ট খেলোয়াড় কিংবা দলের জন্য সবসময়ই খারাপ। আমরা এখন প্রায়ই শুনি যে আমাদের ব্যাকআপ প্লেয়ার এখন অনেক। কিন্তু আমি ব্যাকআপ প্লেয়ার দেখি না। কারণ আপনি যদি সাকিবের সঙ্গে কাউকে রিপ্লেস করতে চান, প্লেয়ার নাই। তামিমের রিপ্লেস করতে গেলে কঠিন। শফিউল অবশ্যই অনেক ভাল ফর্মে ছিল। এটা অবশ্যই আমি মনে করি আমাদের জন্য অনেক খারাপ এবং নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের জন্যও অনেক খারাপ। এই মুহূর্তে তাদের ইনজুরিগুলো অবশ্যই প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে যারা টপফর্মে আছে তাদের ইনজুরিগুলো অবশ্যই প্রভাব রাখে। মুস্তাফিজকে যদি দেখেন তাকে ইংল্যান্ড সিরিজে আমরা ইনজুরির কারণে পাইনি। কিছু না কিছু ক্ষতি হয়েছে। আমরা হয়তো দুইটা টেস্টই জিততে পারতাম তাকে পেলে। হয়তোবা ওয়ানডে সিরিজটিও জিততে পারতাম। প্রশ্ন ॥ সাকিবের পারফর্মেন্সের শতভাগ দিতে না পারা এবং সৌম্য সরকারের অফফর্ম? মাশরাফি ॥ সত্যি কথা বলতে কি, সাকিব বিশ্ব ক্রিকেটের উচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটার, এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ওর মতো ক্রিকেটারের কাছে যেটা হয়, সবসময় উচ্চ পর্যায়ের পারফর্মেন্স প্রত্যাশিত থাকে। কিন্তু সবসময় ওই পর্যায়ের পারফর্ম করা কঠিন। কিন্তু ও সবসময় নিজেকে প্রমাণ করেছে, সঠিক সময়ে নিজেকে প্রমাণ করেছে। আর জাতীয় দলের ক্ষেত্রে সে সবসময়ই সেরা। আমার বিশ্বাস ও ব্যাট হাতে অবশ্যই কামব্যাক করবে। আর সৌম্য সরকার গত দেড়বছর ওভাবে রান করতে পারেনি। কোন ফরমেটেই হয়তোবা রান করেনি। কিন্তু একটা বড় রান বা বড় ইনিংস ওকে পাল্টে দিতে পারে। প্রশ্ন ॥ হোম সিরিজগুলোতে সিনিয়রদের সঙ্গে তরুণরাও ভাল করেছে। বিদেশের মাটিতে সিনিয়রদের দায়িত্বটা কি একটু বেশি থাকবে? মাশরাফি ॥ প্রথমত আমরা বাইরে খেলি আর দেশেÑ সবসময়ই সিনিয়র প্লেয়ারদের একটা প্রভাব থাকে। চেষ্টা করব জুনিয়র যারা আছে তাদের যেন সিনিয়ররা সহায়তা করতে পারে। একইসঙ্গে কঠিন সময়ে যেন এগিয়ে আসতে পারে। তবে হ্যাঁ, কঠিন হচ্ছে কন্ডিশন। এখানে ধরেন সমর্থক থাকে অনেক। সেক্ষেত্রে জুনিয়ররাও অনেক সময় ফ্লো পেলে মানিয়ে নিতে পারে। কারণ সবকিছুই নিজেদের দিকে থাকে। কিন্তু বাইরে সবসময় এগুলো আলাদা থাকে। তবে আমাদের জুনিয়ররা মানসিকভাবে অনেক শক্ত, যতটুকু কাছ থেকে দেখেছি। তারা হয়তোবা হিসেবে জুনিয়র কিন্তু ক্রিকেটে তারা অনেক সময় সিনিয়রদের মতো দায়িত্ব পালন করে। প্রশ্ন ॥ সর্বশেষ কয়েকবারের মোকাবেলায় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আমরা জিতেছি। এবার লক্ষ্যটা কী? মাশরাফি ॥ এটা আসলে বলা খুব কঠিন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের হারান অনেক কঠিন। অনেক বড় বড় দলও পারে না। তবে আমরা বলছি না আমরাও পারব না। ভাল খেলতে পারলে সেটা সম্ভব। কিন্তু কাজটা অনেক কঠিন, সেটাও ঠিক। প্রশ্ন ॥ নিউজিল্যান্ডে আমাদের স্পিন বোলিং অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। নিউজিল্যান্ডের পেস আক্রমণটা সামলানো কত কঠিন হবে? মাশরাফি ॥ আমি মনে করি, চ্যালেঞ্জটা সব জায়গাতেই কঠিন। যেমন আপনি যেটা বললেন টপঅর্ডার ব্যাটিং, সর্বোপরি ব্যাটিং অর্ডারটাই যদি বলেন, বোলিং বলেন, ওখানে আমার যতদূর মনে হয় ৩০০-৩৫০ স্কোর থাকবে, করতে হবে। আমাদের একটা ধারণা আছে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা মানে সিমিং কন্ডিশন; এটা পুরোপুরি ভুল। হয়তো বা টেস্টে কিছুটা থাকতে পারে। তবে সেখানে আমরা বাংলাদেশে যেটা করি, আমরা এত রানের বেশিদূর যেতে পারব না, সেক্ষেত্রে বোলিং-ব্যাটিং দুইপক্ষকেই ভাবতে হবে যেন এই রান পর্যন্ত করা যায় কিংবা এত রানের মধ্যে বেঁধে ফেলা যায়। তাহলে নিরাপদ থাকা যাবে।
×