ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বারো মাসই গাছে ঝুলছে আম

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

বারো মাসই গাছে ঝুলছে আম

ডিএম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ অবস্মরণীয় বিষয়, অগ্রহায়ণে থোকা থোকা কাঁচা-পাকা আম। পাশাপাশি একই গাছের অন্য ডগায় নতুন মুকুল বা বোল। স্বাভাবিক নিয়মে এখনও কাঁচা কিংবা পাকা আম আসতে পাঁচ-ছয় মাস বাকি। কিন্তু থেমে নেই প্রকৃতির এক অস্বাভাবিক বিস্ময়। গাছ ভরা আম, যাকে এককথায় এ অঞ্চলের মানুষ বারোমাসি আম বলে আখ্যায়িত করে থাকে। কিন্তু ইতোপূর্বে এ আম সাম্রাজ্যে যে ছিটেফোঁটা দু-একটি বারোমাসি আমগাছ দেখা গেছে তাতে বছরে দুবার ফল পাওয়া যায়। কিন্তু এই গাছে বছরের প্রতিটি মাসেই ইচ্ছা করলে কাঁচা বা পাকা আম পাওয়া যাবে। এক ডগার আম শেষ না হওয়ার অনেক আগেই অপর ডগায় মুকুল কিংবা আমের ছোট ছোট গুটি দেখা যাচ্ছে। আবার আমগাছটিতে আগে এ ধরনের ফল ধরার কোন নজির ছিল না। মালিক এটি বারোমাসি আম বলেও গাছ বহাল কিংবা চারা গাছ লাগাননি। কিন্তু প্রকৃতি একেবারে এককভাবে কোন বাছ-বিচার না করে একটি অসম সমস্যা বা উৎপাদনকে সামনে নিয়ে এসেছে। শুধু তাই নয়, বারোমাসি আমে বছরের এই সময়ের ফলনের আমে মিষ্টির পরিমাণ কম ও আঁশযুক্ত হয়ে থাকে। কিন্তু এই আমে মিষ্টির পরিমাণ খুবই বেশি, স্বাভাবিক আমের মৌসুমের মতো। পাশাপাশি একেবারে আঁশমুক্ত সুস্বাদু ও একটা নতুন ধরনের গন্ধে ভরা আমেজ রয়েছে। বিশিষ্ট কৃষিবিদ হর্টিকালচারিস্ট কল্যাণপুর ফার্মের উপ-পরিচালক ড. সাইফুর রহমান বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তার অতীত জীবনে ও গবেষণামূলক কার্যকলাপের মধ্যে বারোমাসি আমের এ ধরনের ফলন বা বপন দেখেননি। খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ও মিষ্টতার পরিমাণ ২২ থেকে ২৪ ভাগ, যা স্বাভাবিক সময়ের এই অঞ্চলের ক্ষীরসাপাতকেও হার মানিয়েছে। গাছটি যদি তার উৎপাদনে এ ধারা বা বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে পারে তবে আম ফলের জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের আম ফলনের চিত্র। এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন গবেষক ড. সাইফুর রহমান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউপির খানপাড়া গ্রামে প্রকৃতির এই অসম্ভবের দেখা পাওয়া যাবে। এলাকাটি রহনপুর থেকে পার্বতীপুর আড্ডাতে যাওয়ার পথে, অনেক ভেতরে। পুরো খটখটে লালমাটির ভরা বরেন্দ্র এলাকা। মালিকের নাম জাকির হোসেন খান। তিনি পরিবার নিয়ে অবস্থান করেন বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে। জাকির খান জানান, তিন বছর আগে এক প্রতিবেশীর আমবাগানের একটি সাধারণ গুটি জাতের ডগা এনে ব্লেফট গ্রাফটিং করেছিলেন আম্রপালির কয়েকটি ডালে। কয়েক বছর পর আকস্মিকভাবে নিয়মিত আম ধরা শুরু হয়। অসময়ে মুকুল দেখে অনেকটা বিস্মিত হয়েছিলেন গাছের মালিক। কিন্তু দেখেন যে, আম শেষ না হতেই আবার মুকুল এসে গুটি ঝুলে পড়ে, যাতে বছরে তিনবার করে ফল ধরা শুরু হয়। এবার গাছের মালিক জাকির খান একই গাছের অপর কয়েকটি ডালে পূর্বের মতো সুরমা ফজলির ডগা এনে একই পদ্ধতিতে গ্রাফটিং করলে আমের সাইজ বড় হতে থাকে। এর জন্য আলাদা কোন শ্রম বা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়নি। একই ধারায় ফুল-ফল আসছে আর বছরজুড়ে পাকা আম পাওয়া যাচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থিত পূর্বের আম গবেষণাগার যা বর্তমানে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাগার, তার বিজ্ঞানীরা এ ধরনের উৎপাদনে অনেকটাই হতবাক হয়ে পড়েন। কারণ তারা আমগাছ ও উৎপাদন নিয়ে কয়েক যুগ ধরে গবেষণা করেও এ ধরনের কোন জাত এখন পর্যন্ত উদ্ভাবন করতে পারেননি।
×