ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত ও জ্বালানি সপ্তাহ

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

বিদ্যুত ও জ্বালানি সপ্তাহ

বুধবার ‘অদম্য বাংলাদেশ’ শিরোনামে জাতীয় বিদ্যুত ও জ্বালানি সপ্তাহ-২০১৬ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন উপলক্ষে এ আয়োজন করা হয়। সন্দেহ নেই, বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। অঘোষিত হলেও এ আয়োজনের একটা বড় উদ্দেশ্য বিদ্যুত উৎপাদনে সরকারের বিগত দিনের সাফল্য এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে দেশবাসীকে অবহিত করা। বিদ্যুত সঙ্কট মোকাবেলা ও বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ সরকারের দৃশ্যমান সাফল্য রয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুত নিশ্চিত করার রোডম্যাপ রয়েছে সরকারের। তারই ধারাবাহিকতায় উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করেছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে এই সক্ষমতা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট না হলেও বাস্তবতার নিরিখে এ অগ্রগতি আশাজাগানিয়া। বিদ্যুত হচ্ছে দেশের অন্যতম চাহিদাগুলোর একটি। অতীতে দেশে বিদ্যুতের ক্রান্তিকাল চলছিল। শুধু তাই নয়, বহু সমস্যায় জর্জরিত ছিল এই বিদ্যুত খাতটি। নানা সময়ে দুর্নীতির কালো মেঘ ঢেকে রেখেছিল এই সেক্টরটিকে। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর বর্তমান সরকারের কাছে বিদ্যুত একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয়। শুরু থেকেই এই খাতটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয় সরকার। নেয় নানামুখী পদক্ষেপ। অঞ্চলভিত্তিক বেশ কয়েকটি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করে সরকার। সরকারী ও বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় এসব বিদ্যুত কেন্দ্র পরিচালিত হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। সৌরবিদ্যুতও এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশে। প্রক্রিয়া চলছে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উপাদনের বিষয়টি। বর্তমানে রামপাল ও রূপপুরের মতো বড় ধরনের প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে। প্রতিদিনই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে, বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। বিদ্যুত ছাড়া কোন দেশের সমৃদ্ধি অর্জন অসম্ভব। কৃষি, শিল্প থেকে শুরু করে দৈনন্দিন সবকিছুই বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। যে কোন দেশের উন্নয়নের প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে জ্বালানি ও বিদ্যুত। এ খাতে সক্ষমতা না থাকলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব নয়। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে হলে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। আগামীতে বিশ্বের শীর্ষ ১১টি অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাংলাদেশেরও একটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রশ্ন হচ্ছে, বিদ্যুত ও জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন না ঘটিয়ে কিভাবে সরকার নির্ধারিত সময়ে এ লক্ষ্য অর্জন করবে। কেবল প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স আর তৈরি পোশাক রফতানি করে মধ্যম আয়ের দেশ গড়া সম্ভব নয়। দেশকে উন্নত করতে হলে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। আর বিনিয়োগের মূল শর্ত হচ্ছে, নিরবচ্ছিন্নভাবে জ্বালানি ও বিদ্যুত সরবরাহের নিশ্চয়তা। আরেকটা বিষয় উল্লেখ্য যে, বিদ্যুত উৎপাদনে লক্ষণীয় উন্নতি হলেও বিদ্যুতের অপচয় রোধে, সঞ্চালন ও বিতরণ অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সে মাত্রায় অগ্রগতি হয়নি। তাই বিদ্যুতের ব্যবহারে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। ভুললে চলবে না, দেশের উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী এখনও বিদ্যুত সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এদের বঞ্চিত রেখে উন্নয়নের সুফল শতভাগ পাওয়া যাবে না। দেশে জ্বালানি চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। গ্যাসের মজুদও কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৫০ সাল নাগাদ গ্যাসের মজুদ শেষ হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের জ্বালানি পরিকল্পনা ঢেলে সাজাতে হবে। বিদ্যুত ও জ্বালানি সপ্তাহ পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য বিদ্যুতের অপচয় রোধ ও সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহারে জনসচেতনতা সৃষ্টি। পাশাপাশি গুরুত্ব দিতে হবে বিতরণ পর্যায়ে অপচয় রোধের বিষয়টিও। আধুনিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এ খাতের ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে হবে। এতে গ্রাহকসেবার মান বাড়বে, অর্থনৈতিক উন্নয়নও হবে ত্বরান্বিত।
×