ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রযোজনা ‘বীরাঙ্গনার বয়ান’ নাটকের ৫০তম প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রযোজনা ‘বীরাঙ্গনার বয়ান’ নাটকের ৫০তম প্রদর্শনী

সাজু আহমেদ ॥ এই সময়ের অন্যতম নন্দিত প্রযোজনা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘বীরাঙ্গনার বয়ান’। শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের ১৯তম প্রযোজনা এই নাটকের গল্পে অনিবার্যভাবে তুলে ধরা হয়েছে একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের নারী নির্যাতন ও সমসাময়িক নানা বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের বিবরণে নির্যাতিত নারীর সংখ্যা কিংবা নির্যাতনকে মুখ্য বিষয় হিসেবে উপস্থাপিত হয়ে থাকে। কিন্তু এর মাত্রা ও প্রভাব স্বাধীন বাংলাদেশে কিভাবে পড়েছে সে দিকটি এখন পর্যন্ত উপেক্ষিত রয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নয়। এ কারণে নির্যাতন এতটা প্রবল হওয়ার পরও একটি গ-ির মধ্যে আবর্তিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিম-লেও একে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। ১৯৭১ সালের পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার নারীগণকে স্বাধীনতার অব্যহতি পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধিতে ভূষিত করে সম্মানিত করেন। এমনি কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে নাটকে। শিল্পকলা একাডেমিতে ৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া মনোড্রামা উৎসবের প্রথম দিন এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ‘বীরাঙ্গনার বয়ান’ নাটকের ৫০তম প্রদর্শনী হয়। নাটকটি রচনা করেছেন রওশন জান্নাত রুশনী। নির্দেশনা দিয়েছেন দেবাশীষ ঘোষ। আর নাটকে প্রাণবন্ত একক অভিনয় করেন রওশন জান্নাত রুশনী। শব্দ নাট্যচর্চাকেন্দ্রের প্রধান খোরশেদুল আলম জানান, ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ নাটকটি প্রথম মঞ্চে আসে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ২৪টি এবং ভারতে নাটকটির ২৫টি মঞ্চায়ন হয়েছে। অল্প সময়ে নাটকটির ৫০তম প্রদর্শনী করতে পেরে যথেষ্ট নাটকের কলকুশলীরা। ‘বীরাঙ্গনার বয়ান’ নাটকের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে নির্দেশক দেবাশীষ ঘোষ বলেন, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, উত্তাল শাহবাগ চত্বর; একাত্তরের যুদ্ধপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে লাখো জনতা সোচ্চার হয়। এর কিছু দিন পর ‘বীরাঙ্গনার বয়ান’ নাটকটি রচিত হয়। শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের দল প্রধান খোরশেদুল আলম এবং নাটকটির নাট্যকার রওশন জান্নাত রুশনীর অনুরোধে নাটকটি নির্দেশনার দায়িত্ব নিয়ে নিজের বিবেকের কাছে কিছুটা দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র। স্বাধীনতার চার দশক পর শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র প্রযোজিত ‘বীরাঙ্গনার বয়ান’ নাটকটি মঞ্চে আনার সাহসী পদক্ষেপের পিছনে রয়েছে; মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা বলে তিনি মনে করেন। প্রসঙ্গত, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ৮ দিনব্যাপী এ উৎসবে দেশের ৬টি, ভারতের দুটি, চীনের একটি এবং ভিয়েতনামের একটিসহ মোট ১০টি নাটক মঞ্চায়ন হচ্ছে। উৎসবে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে স্বপ্নদলের ‘হেলেন কেলার’ এবং এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ধ্রুপদী এ্যাক্টিং এ্যান্ড ডিজাইন স্কুলের প্রযোজনা ‘নভেরা’ নাটক মঞ্চস্থ হয়। উৎসবের তৃতীয় দিন আজ শনিবার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে চীনের গুয়াংজো গাঁওজিয়া অপেরা ট্রুপ পরিবেশন করবে ‘দ্য গবর্নমেন্ট ইন্সপেক্টর’, একইদিন স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে সাধনার প্রযোজনা ‘সীতার অগ্নিপরীক্ষা’। চতুর্থ দিন কাল রবিবার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ভিয়েতনামের লে নক থিয়েটার মঞ্চস্থ করবে ‘দ্য মিস্ট্রেস অব দ্য ইন’, পঞ্চম দিন ভারতের আমতা পরিচয় দলের নাটক ‘এলাদিদি’, ষষ্ঠদিন পদাতিক নাট্য সংসদের (টিএসসি) ‘গহনযাত্রা’, সপ্তম দিন ভারতের উইংস থিয়েটারের ‘হেলেন’ এবং উৎসবের সমাপনী দিন ঢাকা থিয়েটারের ‘পঞ্চনারী আখ্যান’ মঞ্চস্থ হবে। ৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার একাডেমির নন্দন মঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধনী দিনে নন্দন মঞ্চে ইসলাম উদ্দিন পালাকার ও তার দলের পরিবেশনায় ‘অতুলা সুন্দরী’ পালা মঞ্চস্থ হয়।
×