ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শ্রীহীনতা কাটল চার বছরের

দঃ আফ্রিকা থেকে এলো এক জোড়া বাঘ, পূর্ণতা পেল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

দঃ আফ্রিকা থেকে এলো এক জোড়া বাঘ, পূর্ণতা পেল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চিড়িয়াখানার প্রধান আকর্ষণ বাঘ। আর দেশটি যদি হয় বাংলাদেশ তবে তো বাঘ ছাড়া চলেই না। কারণ এ দেশের জাতীয় পশুর নাম বাঘ, যা বিশেষায়িত হয়ে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার হিসেবে। অথচ চার বছর বাঘহীন ছিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। দেশের বিভিন্ন চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চিঠি চালাচালি করেও সুরাহা হয়নি। অতঃপর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা বাঘে পূর্ণ হলো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার রয়েল বেঙ্গল টাইগারের খাঁচা। শুক্রবার সকালে একজোড়া বাঘ আসে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। এতেই আগ্রহ বেড়ে যায় দর্শনার্থীদের। উৎসুকরা ভিড় করেন নতুন অতিথি দেখতে। কর্তৃপক্ষ এগুলোকে খাঁচায় পুরেছে। বাঘ দুটি অনেক দূর পাড়ি দিয়ে এলেও আচরণে একবারেই স্বাভাবিক। বশ মানাতে বেগ পেতে হবে না বলে মনে করছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। নতুন অতিথিদের আগমনে বেলুন দিয়ে সাজানো হয় খাঁচা। প্রথম দিন খেতে দেয়া হয় মুরগি। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর মঞ্জুর মোরশেদ জানান, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কার্গো উড়োজাহাজে বাঘ দুটি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে। সকল প্রক্রিয়া শেষে রাত ৩টার দিকে স্থলপথে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় বাঘবাহী বিশেষায়িত ট্রাক। সকাল সোয়া ১০টার দিকে এগুলো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আসে। প্রথমে খাঁচা থেকে বের করে বাঘ-বাঘিনীকে রাখা হয় ছোট একটি খাঁচায়। এরপর দুপুরে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিনের উপস্থিতিতে বাঘ দুটিকে বড় খাঁচায় ঢোকানো হয়। চুক্তি অনুসারে আগামী পনেরো দিন এগুলো থাকবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে। এরপর উন্মুক্ত হবে দর্শনার্থীদের জন্য। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জন্য বাঘ দুটি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হলেও এগুলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার প্রজাতির। বাংলাদেশের ঢাকাসহ বিভিন্ন চিড়িয়াখানা এবং ডুলাহাজরা সাফারি পার্কের সঙ্গে যোগাযোগ এবং চেষ্টা করেও বাঘ পাওয়া যায়নি। ফলে চার বছর শূন্য থাকে বাঘের খাঁচা। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনতে হলো বাংলাদেশের জাতীয় পশু ‘বাঘ।’ চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, ৩৩ লাখ টাকায় কেনা বাঘ দুটি বয়সে একেবারেই তরুণ। এরমধ্যে পুরুষ বাঘের বয়স ১১ মাস এবং বাঘিনীর বয়স ৯ মাস। বয়স কম হওয়ায় এই বাঘ অনেকদিন দর্শকদের আকর্ষণ হিসাবে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। আমদানি করা দুটি বাঘের ওজন কেমন তা জানাতে পারেননি কিউরেটর। তবে তিনি জানান, বাঘসহ খাঁচার ওজন ৪২১ কেজি। খাঁচার ওজন বাদ দেয়া হলে নিরূপিত হবে বাঘের ওজন। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর আরও জানান, চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাঘ দুটো সংগ্রহ করে ‘মাফুয়ানে গেইম রিসোর্ট’ থেকে। এটি একটি ব্রিডিং প্রতিষ্ঠান। অনেকটাই বাচ্চা বাঘ-বাঘিনীর এখনও নাম রাখা হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও তারা একইসঙ্গে থাকত। ফলে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব রয়েছে। সে কারণে সখ্যতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে বেগ পেতে হবে না। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার পরিবেশের সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে যাবার পর তাদের বিয়ের আয়োজন করা হবে। চিড়িয়াখানায় বাঘ না থাকলে তার পূর্ণতা আসে না। বিশেষ করে বাংলাদেশ হলে তো কথাই নেই। জাতীয় পশু বাঘ। অথচ চার বছর ধরে বাঘ ছিল না চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। সর্বশেষ বাঘিনী ছিল ‘পূর্ণিমা’, যেটি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর মারা যায়। এর আগে ২০০৭ সালের ১১ জুলাই মারা যায় বাঘ ‘চন্দ্র’। তার বয়স হয়েছিল দশ বছর। তারও আগে ২০০৬ সালের ৩ নবেম্বর বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যায় ২৩ বছর বয়সী বাঘ ‘ভীম’। এটি ছিল দেশের সবচেয়ে বড় বাঘ। একবার খাঁচা থেকে বেরিয়ে গিয়ে বেশ আলোচিত হয়েছিল সেটি। চিড়িয়াখানায় বাঘ আসায় বেশ খুশি দর্শনার্থীরা। কেননা, বাঘহীন চিড়িয়াখানা মানে অপূর্ণতা। সেই অপূর্ণতা ও শ্রীহীন শূন্য খাঁচায় আসা বাঘ পূর্ণতা এনে দিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাকে।
×