ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাল জরুরী বৈঠক

থার্ড ক্যারিয়ার চালু হলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা বিমানের

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

থার্ড ক্যারিয়ার  চালু হলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা বিমানের

আজাদ সুলায়মান ॥ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে যে কোন এয়ারলাইন্সে হজযাত্রী বহন করার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় আনন্দের বন্যা নেমেছে বেসরকারী হজ এজেন্সিগুলোর মালিকদের মাঝে। পক্ষান্তরে এতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ব্যবসা হারাবে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সও। থার্ড ক্যারিয়ার চালু হলে হজযাত্রীরাও যে দুর্ভোগের শিকার হবেন- সেটা নিয়েও উদ্বিগ্ন হজ অফিস। এ অবস্থায় বিমান ও সৌদিয়া তাদের ব্যবসায় কৌশলগত পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা যায়। আগামীকাল রবিবার এ বিষয়ে পরবর্তী কর্মপন্থা বের করতে জরুরী বৈঠকে বসছে বিমানের শীর্ষ কর্তারা। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন এম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেছেন, থার্ড ক্যারিয়ার চালু হলে বিমান ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। হজ এজেন্সিজ সংগঠন হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহার জনকণ্ঠকে বলেছেন, আদালতের এ ঐতিহাসিক রায় অমান্য করার কোন সুযোগ নেই। আগামী হজ মৌসুমেই থার্ড ক্যারিয়ার চালুর মাধ্যমে এ রায় কার্যকর করা হবে। এদিকে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে হজের প্রি রেজিস্ট্রেশন শুরু হচ্ছে। এ রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই হজ এজেন্সির দালালরা মাঠ পর্যায়ে হজযাত্রী সংগ্রহের কৌশল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে এবার হজের খরচ অনেক কম হবে। থার্ড ক্যারিয়ার চালু হওয়ায় টিকেট প্রতি কমপক্ষে তিন শত ডলার কমে যাবে। সেটা প্যাকেজের আওতায় নিয়ে আসার জন্য হাব থেকে জোর উদ্যোগ নেয়া হবে। প্যাকেজ ঘোষণায় মোট ব্যয় না কমানোর প্রস্তাব থাকলেও এজেন্সিগুলো নিজেরাই কম টাকায় হজযাত্রী সংগ্রহ করবে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। বিমান সূত্র জানিয়েছে- থার্ড ক্যারিয়ার নিয়ে দুটো রিট হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সরকার একটিতে হেরে গেলেও বিমানের রিট এখনও শুনানি হয়নি। সে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে বিমান। থার্ড ক্যারিয়ার চালু হলে বিমানের ব্যবসায় ভয়াবহ ধস নামবে বলে জানিয়েছে বিমানের শীর্ষ কর্তারা। শুক্রবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের একজন পরিচালক জনকণ্ঠকে বলেন, আদালতের রায় মেনে যদি থার্ড ক্যারিয়ার চালু করা হয় তাহলে বিমানের ব্যবসায় বড় ধরনের আঘাত আসবে। বর্তমানে দেশের লক্ষাধিক হজযাত্রী বিমান ও সৌদিয়া বহন করে। এতে বিমান সমান অর্ধেক অর্ধ লক্ষাধিক হজযাত্রী বহন করে যে লাভ করে, তা দিয়ে সারাবছরের লোকসান কাটিয়ে লাভের ধারায় টিকে থাকছে। বিমান টিকে থাকার অন্যতম উৎস হজ। বছরে কমপক্ষে দুই থেকে তিনশত কোটি টাকা লাভ করে একক ইভেন্ট হজ থেকে। এবারও বিমান অর্ধ লক্ষ হাজী বহন করেছে। এখন থার্ড ক্যারিয়ার চালু হলে বিমান আগামী হজের সময় ত্রিশ হাজার হজযাত্রী পাবে কিনা সন্দেহ। এই অবস্থায় বিমানকে এখনই সিদ্বান্ত নিতে হবে কিভাবে থার্ড ক্যারিযার সঙ্কট মোকাবিলা করা যায়। এ ক্ষেত্রে মার্কেটিং পলিসিতে বড় ধরনের কৌশলগত পরিবর্তন আনতে হবে। আগামীকাল রবিবারের বৈঠকেই নতুন কর্মকৌশল ঠিক করার জন্য বৈঠকে বসছেন কর্তারা। থার্ড ক্যারিয়ারের ধাক্কা সামাল দিতে না পারলে বিমানকে চরম খেসারত দিতে হবে বলে জানিয়েছেন খোদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক । এদিকে থার্ড ক্যারিয়ার চালু হলে হজযাত্রীরা বড় ধরনের হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাবেক হজ অফিসার বজুলল হক বিশ্বাস। তিনি জানান, থার্ড ক্যারিয়ারে তো ঢাকা থেকে সরাসরি কোন হজযাত্রীকে জেদ্দা নিতে পারবে না কেউ। এ সুযোগ কেবল মাত্র দুটো এয়ারলাইন্স বিমান ও সৌদিয়ার। কাজেই বাধ্য হয়েই এমিরেটসকে হজযাত্রী নিয়ে নামতে হবে আবুধাবী, কাতারকে দোহায়, ইতিহাদকে আবুধাবীতে। সেখানে ওই ফ্লাইট ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকবে, আর বয়স্ক হাজীরা ভেতরে বসে অস্বস্তিতে সময় কাটাতে বাধ্য হবেন। এতে কোন সন্দেহ নেই। এ জন্য আমি মনে করি ভাড়া কিছুটা বেশি হলেও ঢাকা থেকে যারাই সরাসরি জেদ্দা নিয়ে যেতে পারবে তাদের ফ্লাইটেই হজযাত্রীদের চড়াটা নিরাপদ ও আরামদায়ক হবে। হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহার বলেছেন, এ রায় অমান্য করার কোন সুযোগই নেই বিমান ও সৌদিয়ার। যদি তারা না মানে সেটা হবে আদালত অবমাননা। এটা তো ন্যায়বিচারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিমান ও সৌদিয়া কেন একচেটিয়া ব্যবসা করবে ? এ দুটো এয়ারলাইন্স একচেটিয়া তাদের ইচ্ছামতো অতি মুনাফা করার জন্য হাজীদের কাছ অস্বাভাবিকহারে টিকেটের দাম কাটে। হজযাত্রীরা বাধ্য হয়েই এ দুটোর বাইরে যেতে পারেন না। এতে তাদের সেবার মান নিয়েও অনেক প্রশ্ন ওঠে। এখন সেবার মান নিয়ে এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা হবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। থার্ড ক্যারিয়ার চালু হলে হজযাত্রীদের তৃতীয় দেশের এয়ারপোর্টে হেস্তনেস্ত হবার আশঙ্কা সম্পর্কে জানতে চাইলে- তিনি বলেন, আজকের দুনিয়ায় এখন আর ততোটা অনিয়ম করা সম্ভব নয়। কেননা, থার্ড ক্যারিয়ারের এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে পৃথিবীর সেরা তিনটি হচ্ছে ইতিহাদ, এমিরেটস ও কাতার। এদের সেবা দুনিয়াব্যাপী স্বীকৃত। সৌদিয়া এয়ারলাইন্সতো বাংলাদেশের হজযাত্রীদের মানুষই মনে করে না। এবারের হজ মৌসুমেও তো হাজীদের পাঁচ শতাধিক লাগেজ আসেনি। থার্ড ক্যারিয়ারে এয়ারলাইন্সগুলোর নিজ নিজ দেশের এয়ারপোর্টে একটা স্টপওভার থাকবে। সেটা দু’ঘণ্টার বেশি হলে হজযাত্রীদের হোটেলে নিয়ে গিয়ে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এতে হয়রানির কি আছে ? গত বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপীল বেঞ্চ বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স হজযাত্রী পরিবহন করবে সরকারী এমন সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রাখেন। বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বিমান বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়া অন্য কোন পরিবহন হজযাত্রী বহন করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন হজ এজেন্সিস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সহ-সভাপতি আব্দুল কবির খান ও মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহসহ রেজাউল ইসলাম নামের এক হজযাত্রী। একই বছরের ২৯ জুলাই বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নিয়ে রুল জারি করেন। রুলে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে হজযাত্রী পরিবহনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নেয়া সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চায় আদালত। এরপর ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ হাবিবুল গণির হাইকোর্ট বেঞ্চ সরকারী সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে হজযাত্রীরা যে কোন এয়ারলাইন্সে করে হজে যেতে পারবেন বলে রায় দেন। রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আবেদন করেন। আপীল বিভাগ সে আবেদন খারিজ করে দিলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকল।
×