ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুচির প্রতি জাতিসংঘ ॥ মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে ৭০ ব্রিটিশ এমপির আহ্বান

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে রাখাইনে যান, ব্যবস্থা নিন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে রাখাইনে যান, ব্যবস্থা নিন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতা আউং সান সুচিকে দেশটির রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা বিজয় নামবিয়ার বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, কট্টরপন্থীদের প্রতি কঠোর এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তায় আক্রমণাত্মক অবস্থানের বদলে রক্ষণাত্মক হতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অস্বীকৃতি স্থানীয়দের হতাশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিরাশ করেছে। এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে ৭০ ব্রিটিশ এমপি যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহলের ‘নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’ রাখাইন প্রদেশে বিভক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে সুচি অভিযোগ করার এক সপ্তাহের মাথায় জাতিসংঘের এ বক্তব্য এলো। বিজয় নামবিয়ার বলেন, আমাদের উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সরকারের পদক্ষেপই সঙ্কটের সমাধান এবং আন্তর্জাতিক স্থিতি বজায় রাখতে পারে। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সুচিকে রাখাইনে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে বলেন। এর আগে গত শুক্রবার চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে এক সাক্ষাতকারে সুচি মিয়ানমারের রাখাইনে বৌদ্ধদের সঙ্গে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরোধ বাড়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দোষারোপ করেন। সুচি বলেন, আমি খুব খুশি হব যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সব সময় বড় ধরনের অসন্তোষ ছড়ানোর কারণ তৈরি না করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাল সম্পর্ক গড়ার জন্য অগ্রগতি আনতে এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমাদের সহযোগিতা করে। সুচি ওই সাক্ষাতকারে বলেন, পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলার বিষয়টি এড়িয়ে সবাই যদি শুধু পরিস্থিতির নেতিবাচক দিকে মনোযোগ দেয় তাহলে তা কোন সুফল বয়ে আনবে না। বিরোধপূর্ণ ওই অঞ্চলে গিয়ে মঙ্গলবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে আইনের মধ্যে অভিযান চালানোর আহ্বান জানান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। রোহিঙ্গা-রাখাইন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে করণীয় নির্ধারণে কাজ করছে আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশন, সেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের লোকও রয়েছে। রাখাইনের এ সমস্যা নোবেলজয়ী সুচির রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম বড় সঙ্কট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েই তার দল এ বছরের শুরুতে ক্ষমতায় আসে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নীরব থাকায় মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সুচির সমালোচনা হচ্ছে নানান মহল থেকে। তার নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার দাবিও উঠেছে। এর আগে ২০১২ সালেও রাখাইনে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। সেবার শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর থেকে দুই সম্প্রদায় রাখাইন অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আলাদাভাবে বসবাস করে আসছিল। মিয়ানমার সীমান্তে সামরিক বাহিনীর অভিযানের পর হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক বসতবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। অনেকেরই ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বসতভিটা ছেড়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এদের মধ্যে অনেকেই সীমান্ত পার হয়ে আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে এসেছেন। আবার অনেকেই বাংলাদেশে আসার জন্য সীমান্তে অপেক্ষা করছেন। গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় সে দেশের ৯ সীমান্ত পুলিশের মৃত্যুর পর আশপাশের এলাকাগুলোয় ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোয় শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সেনাবাহিনীর অভিযানে রাখাইন প্রদেশে ১২শ’র বেশি ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সহিংসতায় ৮৬ জনের মৃত্যুর খবর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করলেও নিহতদের মধ্যে ৬৯ জনকে সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে দাবি করেছে তারা। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এদিকে দমন অভিযানের মুখে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, মিয়ানমার সীমান্তের ঘটনায় ইতোমধ্যেই প্রায় ২১ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। ৭০ ব্রিটিশ এমপির আহ্বান ॥ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাছে জরুরী মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ৭০ জন পার্লামেন্ট সদস্য। এই ৭০ জন এমপির স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পররাষ্ট্র দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী টুইটারে খবরটি নিশ্চিত করেছেন। টুইটারে বিবৃতিটিও পোস্ট করেছেন তিনি। বিবৃতিতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর সাম্প্রতিক নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মিয়ানমার সীমান্তে সাম্প্রতিক সহিংসতার নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে লক্ষ্য করে সহিংসতার অবসান চাই। রোহিঙ্গাদের কাছে পূর্ণাঙ্গ মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অনুমোদন দিতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারেরও অবশ্যই যোগ দেয়া দরকার বলে উল্লেখ করেন তারা। সহিংস পরিস্থিতি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের যথাসম্ভব সহায়তার জন্যও আহ্বান জানানো হয়।
×