ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপিএলের ফাইনালে রাজশাহীকে হারাল ৫৬ রানে

ঢাকাই চ্যাম্পিয়ন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

ঢাকাই চ্যাম্পিয়ন

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের চতুর্থ আসরের শিরোপা জিতেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। শুক্রবার ফাইনাল ম্যাচে ৫৬ রানে রাজশাহী কিংসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল ঢাকা। ম্যাচে টস জিতে রাজশাহী আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঢাকা ব্যাটিং করার সুযোগটি পেয়ে ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫৯ রান করে। এভিন লুইস (৪৫) ও কুমার সাঙ্গাকারা (৩৬) ব্যাট হাতে ঝলক না দেখালে এত রান স্কোর বোর্ডে যোগও করতে পারত না ঢাকা। ফরহাদ রেজা দুর্দান্ত বোলিং করেন। ৩ উইকেট তুলে নেন। জবাবে ১৭.৪ ওভারে ১০৩ রান করতেই গুটিয়ে যায় রাজশাহী। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন মুমিনুল হক। টার্গেট ১৫০ বা তার বেশি হয়েছে। সেই টার্গেট অতিক্রম করে এবার বিপিএলে বরিশাল ও রাজশাহীই জিততে পেরেছে। ঢাকার বিপক্ষেই রাজশাহী লীগ পর্বে ১৮৩ রানের টার্গেটে জিতেছিল। এবার আর পারল না রাজশাহী। লীগ পর্বে ঢাকাকে দুইবারই হারিয়েছিল রাজশাহী। এবার হেরে গেল। সেই সঙ্গে ঢাকা প্রতিশোধ নিল। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নও হলো। ২০১২ ও ২০১৩ সালে যথাক্রমে বিপিএলের প্রথম ও দ্বিতীয় আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গে জড়িত থাকায় দলটিকে বাদ দেয়া হয়েছে। আর ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এবার ঢাকা ডায়নামাইটস শিরোপা জিতল। ফাইনাল ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এমনটিই আশা করা হয়েছিল। কিন্তু কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা, উত্তেজনা, উত্তাপই মিলল না। যা উত্তাপ ‘ঢাকা, ঢাকা’ রব তুলে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকরাই দেখালেন। রাজশাহী ক্রিকেটাররাতো কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই দেখাতে পারলেন না। ঢাকার ছুড়ে দেয়া টার্গেটও ফাইনাল ম্যাচে কম ছিল না। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে এ টার্গেট অতিক্রম করাও কঠিন। রাজশাহীতো আবার ১৫ রানেই এক উইকেট হারিয়ে বসেছিল। দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুল ও সাব্বির মিলে ভালই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ৬২ রান হতেই রানআউট হয়ে গেলেন সাব্বির। সুন্দর ব্যাটিং করছিলেন। ২৬ রানও করে ফেলেন। কিন্তু মুমিনুলের সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়ে আউট হয়ে যান। ৪ রান যোগ হতেই সাকিবের বলে এলবিডাবলিউ হয়ে যান মুমিনুল (২৭)। বিপদে পড়ে যায় রাজশাহী। প্যাটেল নামতেই আউট হয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু নাসির ক্যাচ ধরতে পারেননি। আজব এক কা- করলেন। ক্যাচ না ধরে উল্টোদিকে ঘুরে গেলেন। আরেকটি উইকেট তুলে নিতে অবশ্য খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয়নি ঢাকাকে। ১০ রান যোগ হতেই সানজামুল ইসলামের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ব্রাভোর তালুবন্দী হন ফ্রাঙ্কলিন। তখন এমনই অবস্থা হয়, এরপর সামি আউট হলেই ম্যাচ হাত থেকে বের হয়ে যাবে। রাজশাহী যে চাপে পড়ে যায়। তাই ঘটল। যেই ৮৭ রানে ৬ রান করে সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে গেলেন সামি, আরও ৬ রান যোগ হতেই ২ উইকেটের পতনও ঘটে গেল। ৯৩ রানেই ৭ উইকেটের পতনে তখন জিততে ৩৩ বলে ৬৭ রানের দরকার ছিল। বোঝাই যাচ্ছিল, নিশ্চিত হারের শঙ্কাতেই পড়ে গেছে রাজশাহী। ফরহাদ রেজা ব্যাট হাতে নামলেন। আর সাজঘরে ফিরলেন। যখন জিততে ৫৮ রান দরকার, এমন মুহূর্তে রানআউট করতে গিয়ে উইলিয়ামসের ডান হাতের কনুইয়ে বল মেরে দিলেন ব্রাভো। তাতে ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন উইলিয়ামস। রিটায়ার্ড হার্ট হন। শেষ পর্যন্ত ১০৩ রানের বেশি করতেই পারল না রাজশাহী। ঢাকাও শুরুতে ৪২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায়। এরপর লুইস ও সাঙ্গাকারা মিলে দলকে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। লুইসতো মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। সাঙ্গাকারা আরেক প্রান্ত আগলে রাখেন। দুইজন মিলে দলকে ৮৩ রানেও নিয়ে যান। ৪১ রানের জুটিও গড়েন। ১০ ওভারেই ৮২ রান করে ফেলে ঢাকা। ৮৩ রান হতেই ত্রাতা হয়ে হাজির হন ফরহাদ রেজা। লুইসকে আউট করে দেন। এরপর ডোয়াইন ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেল, সাকিব, আলাউদ্দিন বাবুকে নিয়ে ছোট্ট ছোট্ট জুটি গড়েন সাঙ্গাকারা। যা দলকে বড় সংগ্রহের পথেই এগিয়ে নিয়ে যায়। অবশ্য রাজশাহী ফিল্ডারদের ফিল্ডিং মিসের মহড়াও দেখা মিলে। একের পর এক ক্যাচ মিস। ফিল্ডিং মিস করেন রাজশাহী ফিল্ডাররা। শেষ পর্যন্ত এক বল বাকি থাকতে সাঙ্গাকারা আউট হন। ততক্ষণে ঢাকা ১৫৫ রান করে ফেলে। শেষ বলে সানজামুল বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে ১৫৯ রানে নিয়ে যান। যা ঢাকাকে জয়ের আশাও দেখায়। জিতেও যায় ঢাকা। শিরোপাও প্রথমবারের মতো নিজেদের করে নেয়। সাকিব আল হাসানও প্রথমবার অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জেতেন। স্কোর ॥ ঢাকা ডায়নামাইটস-রাজশাহী কিংস ফাইনাল ম্যাচ টস ॥ রাজশাহী (ফিল্ডিং)। ঢাকা ইনিংস ১৫৯/৯; ২০ ওভার (মেহেদী ৮, লুইস ৪৫, নাসির ৫, মোসাদ্দেক ৫, সাঙ্গাকারা ৩৬, ব্রাভো ১৩, রাসেল ৮, সাকিব ১২, বাবু ১, সানজামুল ১২, রাহী ০; রেজা ৩/২৮)। রাজশাহী ইনিংস ১০৩/১০; ১৭.৪ ওভার (সোহান ৫, মুমিনুল ২৭, সাব্বির ২৬, প্যাটেল ১৭, ফ্রাঙ্কলিন ৫, সামি ৬, ধ্রুব ৪*, মিরাজ ১, রেজা ২, উইলিয়ামস ৪ (রি. হা.), অপু ১; রাহী ২/১২, সানজামুল ২/১৭, সাকিব ২/৩০)। ফল ॥ ঢাকা ডায়নামাইটস ৫৬ রানে জয়ী।
×