ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে ৫ হুজি জঙ্গী গ্রেফতার ॥ বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬

চট্টগ্রামে ৫ হুজি জঙ্গী গ্রেফতার ॥ বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে আবারও জঙ্গীদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকায় অস্ত্র, বোমা ও জিহাদী বইসহ পাঁচ জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার এবং হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি মাঈনুল ইসলামের শিষ্য বলে জানায়। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে তারা ওই এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে গত ১ ডিসেম্বর থেকে সেখানে অবস্থান করে। জানা গেছে, বুধবার রাতে নগরীর একে খান এলাকা থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ দুইজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত তাজুল ইসলাম ও নাজিম উদ্দিন স্বীকার করে যে, তারা হরকাতুল জিহাদের সদস্য। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব সেভেনের ইন্টেলিজেন্স টিম বৃহস্পতিবার সকালে ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে তালুকদারপাড়ার হাজী মনসুরের বাড়ি থেকে আরও তিন জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো নুরে আলম, ইফতেশান আহমেদ ও হাফেজ আবুজার গিফারি। তারা র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের গোপন তথ্য সংবলিত ল্যাপটপ পুড়িয়ে ফেলে। কিন্তু ওই কক্ষ থেকে দুটি বিদেশী পিস্তল, পিস্তলের গুলি ও রাইফেলের গুলিসহ জিহাদী বই, আটটি বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। র‌্যাবের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, একে খান মোড় থেকে বুধবার রাতে গ্রেফতারকৃতদের তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়। গ্রেফতারকৃতরা মাঈনুল ইসলামের শিষ্য হিসেবে প্রশিক্ষণ যেমন নিয়েছে, তেমনি নাশকতার প্রস্তুতিও অব্যাহত রেখেছে। অভিযানের সময় ওই বাড়ির মালিক মনসুরকে খুঁজে পায়নি র‌্যাব। তবে তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কারণ মনসুরই কক্ষটি কোন ধরনের তথ্য-উপাত্ত না নিয়ে ভাড়া দিয়েছে। ফলে জঙ্গীদের সঙ্গে মনসুরের সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা, তাও খুঁজে দেখছে র‌্যাব। জঙ্গীরা নবেম্বরের মাঝামাঝি বাসাটি ভাড়া নেয়। কিন্তু ১ ডিসেম্বর থেকে ৩ জন এ বাসায় অবস্থান নেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাড়া নেয়ার সময় তারা পরিবার নিয়ে বসবাসের কথা জানিয়েছে। অথচ র‌্যাবের অভিযানে ওই বাসা থেকে তিন জঙ্গী সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। সেখানে সংরক্ষিত ছিল অস্ত্র, গুলি, জিহাদী বই, বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ নাশকতার কাজে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন উপকরণ। তবে র‌্যাবের অভিযান চালানোর বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তাদের কাছে থাকা ল্যাপটপটি পুড়িয়ে বিনষ্ট করে ফেলে। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গী সদস্যরা জানিয়েছে, নাশকতার বিভিন্ন তথ্য ও নক্সা সংরক্ষিত ছিল ওই ল্যাপটপে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত ভিডিও ছিল ল্যাপটপে। নুরে আলমের বাড়ি নীলফামারী ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, র‌্যাবের অভিযানে চট্টগ্রামে গ্রেফতার হুজি জঙ্গীদের মধ্যে একজন নীলফামারীর নিখোঁজ হওয়া নুরে আলম (২৩) বলে জানা গেছে। সে গত প্রায় আট মাস আগে নিজ বাড়ি হতে অপহরণ হয়েছিল বলে পরিবারের পক্ষে দাবি করা হয়। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে ওই অভিযানের খবর টেলিভিশনে ছবিসহ দেখতে পেয়ে নুরে আলমের পরিবার তাকে শনাক্ত করে। পরিবারের লোকজন বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের নিশ্চিত করে বলেছে, নুরে আলমকে গত ১১ এপ্রিল রাতে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে নীলফামারী শহরের উকিলের মোড় মহল্লার নিজ বাড়ি হতে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল। এ ঘটনায় নুরে আলমের মা নুরনাহার বেগম ১২ এপ্রিল নীলফামারী থানায় একটি জিডি (নম্বর ৫৯৫) এবং ১৪ এপ্রিল নীলফামারী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অজ্ঞাত আসামি করে একটি অপহরণের পিটিশন মামলা (নং-৩০/১৬) দায়ের করেন। পরবর্তীতে আদালতের ওই পিটিশনটি নীলফামারী থানায় অগ্রগতি করলে সেটি ১৯ এপ্রিল নীলফামারী থানায় অপহরণ মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয় (মামলা নম্বর ১১)। জানা যায়, নুরে আলম নীলফামারী সরকারী কলেজের রসায়ন বিভাগের অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও জেলা শহরের পৌর এলাকার উকিলের মোড় মহল্লার মৃত আব্দুল কাদের ওরফে ইয়াকুব আলীর ছেলে। পাশাপাশি সে উকিলের মোড় দারুস সালাম হাফেজিয়া মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ স¤পাদক। এসবের পাশাপাশি নুরে আলম তার উকিলের মোড় বাসভবনের সামনে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মোবাইলের ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশ এজেন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান পরিচালনা করত। নূরে আলমের ছোট ভাই কামরুল ইসলাম নয়ন তার মূঠোফোনে ধারণ করা বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের ঘটনার টেলিভিশনে প্রচারিত খবর ও নূরে আলমের ছবি দেখিয়ে সেটি তার ভাই বলে নিশ্চিত করেন সাংবাদিকদের। তিনি বলেন, প্রায় আট মাস আগে নিজ বাড়ি হতে ‘অপহরণের পর তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় মা থানায় প্রথমে জিডি এবং পরে আদালতের মাধ্যমে অপহরণ মামলা দায়ের করেছিল।’ নূরে আলমের মা নুরনাহার বেগম জানান, ছেলে চট্টগ্রামে ধরা পড়েছেÑ এটি টেলিভিশনের খবর ও ছবি দেখে জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, ১১ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে তিনটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকারে প্রায় ৪০ জন সাদা পোশাকের লোক আসেন তাদের নীলফামারী শহরের উকিলের মোড় বাসভবনে। তাদের পরনে জিন্সের প্যান্ট, গেঞ্জিসহ বিভিন্ন রঙের শার্ট পরা ছিল। আমি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা আমাকে ধমক দিয়ে জানায়, আমরা প্রশাসনের লোক, ওকে নিয়ে যাচ্ছি, ২০ মিনিট পর দিয়ে যাব। থানায় আমরা ফোন করতে চাইলে আমাদের ফোন কেড়ে নেয়া হয়। এরপর তারা ঘুম হতে তুলে নূরে আলমের ঘর থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার পর রাতেই স্থানীয় থানা ও র‌্যাব ক্যাম্পে যোগাযোগ করলে তারা কিছু জানেন না বলে আমাকে জানায়। এ ঘটনায় তিনি ১২ এপ্রিল সকালে নীলফামারী সদর থানায় একটি জিডি ও ১৪ এপ্রিল আদালতে একটি অপহরণের পিটিশন মামলা দায়ের করেছিলেন। এছাড়া ১৯ এপ্রিল নুরে আলমকে অপহরণের অভিযোগ তুলে এবং তার সন্ধানসহ ফিরে দেয়ার দাবিতে নীলফামারী সরকারী কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের সহপাঠী ও কলেজের শিক্ষার্থীরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। অপরদিকে ২২ এপ্রিল উকিলের মোড় দারুস সালাম হাফেজিয়া মাদ্রাসার কমিটি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও মানববন্ধন করেছিল। এছাড়া নুরে আলমকে ফিরে পেতে গত ১৩ জুন বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেছিল মা নুরনাহারসহ পরিবারের সদস্যরা। সেই সংবাদ সম্মেলনে নুরে আলমের মা উল্লেখ করেছিলেন, তার ছেলে যদি কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তার বিচার হোক। এতে আদালতের যে কোন রায় মেনে নিতে প্রস্তুত থাকবেন তিনি। কিন্তু তিনি তার ছেলের সন্ধান চান। তাই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে তার নিখোঁজ ছেলের সন্ধানসহ তার কোলে ফেরতের দাবি করেছিলেন। নুরে আলমরা তিন ভাই, এক বোন। বাবা আব্দুল কাদের ওরফে ইয়াকুব আলী কয়েক বছর আগে মারা যান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নীলফামারী সদর থানার ওসি মোঃ বাবুল আকতার বলেন, ‘চট্টগ্রামে র‌্যাবের অভিযানে আটক নূরে আলম নীলফামারীর উকিলের মোড় থেকে নিখোঁজ হওয়া নূরে আলম বলে তার পরিবারের লোকজন নিশ্চিত করেছেন।’
×