ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়

নাসিক নির্বাচনে কোন অনিয়ম বরদাশত করবে না ইসি

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬

নাসিক নির্বাচনে কোন অনিয়ম বরদাশত করবে না ইসি

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের আর মাত্র ১৩ দিন বাকি। এরমধ্যেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের লিফলেট বিলি, গণসংযোগ, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি, পোস্টার ঝুলানো, তৈরিকৃত কৃত্রিম প্রতীক বসানোসহ নানামুখী প্রচারে নির্বাচনী মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে। নির্বাচনী পোস্টারে নগরীর প্রধান সড়কসহ অলিগলি ভরে গেছে। বৃহস্পতিবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে নির্বাচন কমিশন। মতবিনিময় সভায় প্রার্থীরা অবাধ, সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। মতবিনিময় সভায় ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, মানুষ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে এবং ফলাফল মেনে নেব। গণমানুষকে নিয়ে আমি গতবারও জয়ী হয়েছিলাম, এবারও জয়ী হব ইনশাল্লাহ। তবে বিএনপি দলীয় প্রার্র্থী সাখাওয়াত হোসেন খান নির্বাচনের আবারও সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী জানিয়েছেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন অপরাধ ও অনিয়ম হলে বরদাস্ত করা হবে না। নতুন ৭৫ হাজার ভোটার আইডি কার্ড ছাড়াই ভোটার সিøপ নিয়েই ভোট দিতে পারবেন। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ডাঃ আইভী (নৌকা) বিকেলে নগরীর ১৭নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে গণসংযোগ করেন। এছাড়াও বিএনপি দলীয় প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নগরীর বিভিন্ন স্থানে ও মহানগরীর সিদ্ধিরগঞ্জে গণসংযোগ করেন। নির্বাচন কমিশনান জাবেদ আলীর সঙ্গে মেয়র প্রার্থীদের মতবিনিময় সভা ॥ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাত মেয়র প্রার্থীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব) মোঃ জাবেদ আলী। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেনÑ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ নুরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার মঈনুল হক ও র‌্যাব-১১ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক কামরুল হাসান। মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী (নৌকা), বিএনপি দলীয় প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন (ধানের শীষ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্র্থীমাহবুবুর রহমান ইসমাইল (কোদাল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাসুম বিল্লাহ (হাত পাখা), ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি এজহারুল ইসলাম (মিনার), এলডিপির কামাল প্রধান (ছাতা), কল্যাণ পার্টির প্রার্থী রাসেল ফেরদৌস (হাতঘড়ি) উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী মতবিনিময় সভায় বলেন, আমি ২০০৩ ও ২০১১ সালে কঠিন ও প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে জনগণের সমর্থনে নির্বাচিত হয়েছি। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হিসেবে কোন সুবিধা নিচ্ছি না। প্রশাসন দিতে চাইলেও নেব না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে- যাতে মানুষ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়ে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারে। বিগত দিনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াতের অভিযোগ প্রসঙ্গে আইভী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে সদর উপজেলার কুতুবপুর ও গোগনগর ইউনিয়ন, বন্দর উপজেলার মুসাপুর, কলাগাছিয়া, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। সদর, বন্দর ও সোনারগাঁও উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপির। সাখাওয়াত হোসেন আমাকে ভাল করেই চিনেন, আমি পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার লোক নই। আমার কোন কর্মী পোস্টার ছিঁড়বে তো দূরের কথা, কারও সঙ্গে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলবে এমন লোকও নাই। আমি চাই একটি সুন্দর ও স্বচ্ছ নির্বাচন হোক। আমার সঙ্গে শত, হাজার, লাখ মানুষ আছে। তারাই আমার শক্তি। গতবারের মতো সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আমি এবারও দাবি করছি। আমার মনে হয় অন্যান্য প্রার্থীর চেয়ে এই জিনিসটা আমার বেশি দরকার। কারণ আমি কিসের উপর দাঁড়িয়ে আছি, কি নির্বাচন করছি, কেন নির্বাচন করছি এবং কিভাবে নির্বাচন করছি, তা মনে হয় আমার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জবাসী খুব ভাল করে অনুধাবন করতে পারেন। সুতরাং আমি আবারও দাবি করব সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ নির্র্বাচনের। মানুষ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে এবং ফলাফল মেনে নেব। গণমানুষকে নিয়ে আমি গতবারও জয়ী হয়েছিলাম, ইনশাল্লাহ এবার গণমানুষ আইভীকে বিজয়ী করবে। অস্ত্রধারী যেই হোক না কেন, সে যদি আমার আপন ভাই হয় তাকেও যেন প্রশাসন গ্রেফতার করে। আমি প্রশাসনের কাছ থেকে কোন ধরনের আনুকূল্য চাই না। সাখাওয়াত হোসেনের তুলনায় আমার জীবনের ঝুঁকিও বেশি। আমি আমার জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি করছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে- সাখাওয়াত হোসেন খান ॥ মতবিনিময় সভায় বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান তার বক্তব্যে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের এই নির্বাচনে সরকারের ক্ষমতার পরিবর্তন হবে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে যেসব নির্বাচন হয়েছে সেগুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে অনাস্থা রয়েছে। ইসি তাদের বিদায় বেলায় এই নির্বাচনে মানুষকে স্বস্তি দিয়ে যাবেন এবং দুর্নাম ঘোচাবেন। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও দলের অন্যান্য এমপিদের নিয়ে সভা করেছেন কীভাবে দলের প্রার্থীকে জেতানো যায়। প্রধানমন্ত্রী নিজেই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। অতীতে নারায়ণগঞ্জকে কলঙ্কিত করেছে এমন সন্ত্রাসীদের কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি। নারায়ণগঞ্জে অনেক লোককে অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে, সেগুলো নির্বাচনের আগে জমা নিতে হবে। প্রশাসন থেকে দলবাজ কর্মকর্তাদের অন্তত পক্ষে নির্বাচনকালীন সময়ে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলা রয়েছে। নির্র্বাচন পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের যাতে পুলিশ হয়রানি না করে সে বিষয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা চান। অন্য মেয়র প্রার্থীরা মতবিনিময় সভায় যা বললেন ॥ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, সরকার দলীয় প্রার্থীকে জেতানোর জন্য প্রশাসন যাতে কাজ না করে এ বিষয়ে তিনি ইসিকে সতর্ক থাকতে বলেন। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী রাশেদ ফেরদৌস বলেন, ভোটাররা যাতে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এলডিপির প্রার্থী কামাল প্রধান বলেন, গত শুক্রবার জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা এসেছে এবং রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করেছে। গণমাধ্যমে খবর এলেও নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা এজহারুল হক তার বক্তব্যে বলেন, মানুষের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে তারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে কিনা। এই শঙ্কা দূর করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন করার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন তাই করা হবে- নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী ॥ নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব) জাবেদ আলী মতবিনিময় সভায় প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনের সময় কোন অপরাধ অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন করার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন তাই করা হবে। ভোটারা যাতে নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে এর মধ্যেই জেলা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা সেই মোতাবেক কাজ করছে। তিনি বলেন, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা যদি আচরণ বিধি মেনে নির্বাচনী প্রচার চালান তবেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে। ডাঃ আইভী ও সাখাওয়াতের গণসংযোগ ॥ মতবিনিময় সভার আগে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন নগরীর উত্তর চাষাঢ়া, চাঁদমারী, মিশনপাড়া, ডনচেম্বার এলাকায় এবং বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা গণসংযোগ ও প্রচার চালান। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৭নং ওয়ার্ডের পাইকপাড়া, ভূঁইয়াপাড়া, লামাপাড়া, বউবাজার ছোট কবরস্থান ও বড় কবরস্থান এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচার চালান। গণসংযোগকালে উভয় প্রার্থীই ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন।
×