ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত উৎপাদনে মাইলফলক- বর্ণিল আলোক উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬

বিদ্যুত উৎপাদনে মাইলফলক- বর্ণিল আলোক উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আঁধারের মাঝে আকস্মিক আলোর ঝলকানি। না এ শুধু আলোর ঝলকই নয় আলোর উৎসব আলোকের উৎসব। সক্ষমতা অর্জনের উৎসব। আঁধার ভেঙ্গে বাংলাদেশের আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার উৎসব। বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের মাইলফলক স্পর্শের বিষয়টি স্মরণীয় হয়েই থাকবে ঢাকা নয় সারাদেশের মানুষের কাছেই। হাতিরঝিলে যেমন লাখো লাখো মানুষ আলোক উৎসবে সামিল হয়েছিল তেমনি টেলিভিশনের সামনে বসে এই উৎসব দেখেছে গোটা বাংলাদেশ। সন্ধ্যা থেকেই অধীর আগ্রহে অন্ধকার হাতিরঝিলে অপেক্ষা করছিল। আগেভাগেই ঘোষণা ছিল আজ সন্ধ্যা বেলা আলোয় মাতবে ঢাকার আকাশ। আয়োজন যেমন বিশাল। উৎসব উপভোগে মানুষের আগ্রহও তেমনি। হাতিরঝিলের সব রাস্তার বাতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। হাতিরঝিলজুড়ে এমন আয়োজনতো আলোয় ভাসবার জন্যই। শিশু থেকে বৃদ্ধ কিংবা মাঝ বয়সী কেউ কি ঘরে ছিল। না, এই আয়োজনের খবর যাদের কাছে ছিল তাদের ঘরে থাকার উপায় কোথায়? সব থেকে আনন্দে ভেসেছে শিশুরা। জীবনে এমন আনন্দ উপভোগের আয়োজনতো বার বার করা যায় না। হাতেগোনা দু’একবার আসতে পারে। যেমন এসেছিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। তাই মিস করতে চায়নি কেউই। সারাদেশে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের মাইলফলক স্থাপনে আলোক উৎসবের আয়োজনের কথা ছিল বুধবার। তবে সর্বসাধারণের দেখার সযোগ করে দিতে বৃহস্পতিবার সময় বদলে তা সরিয়ে আনা হয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে হাতিরঝিলে। ঢাকায় এমন জায়গা কোথায়, হাতির ছিল ছাড়া। মূল উৎসবের মঞ্চ ঠিক করা হলো হাতিরঝিলের রামপুরা প্রান্তে কিন্তু কি গুলশান কি মগবাজার কি অন্য কোন প্রান্ত সব খানেই তো লোকে লোকারণ্য। মানুষ আর মানুষ। সব স্রোত এসেছে আলোর নাচন দেখতে। দেশে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। এই অর্জনকে ঘিরে উৎসব করতে যাচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। গত ২০১৩ সালে সরকার ১০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য অর্জন করে। তবে এবার মূল উৎপাদনের সঙ্গে শিল্পকারখানায় নিজস্ব উদ্যোগে স্থাপিত কেন্দ্র ক্যাপটিভ পাওয়ারকে যোগ করা হচ্ছে। সন্ধ্যা ঠিক ৬টা ৩৭ মিনিট। ঘোষণা এলো এই এখন আলোক উৎসবের উদ্বোধন করবেন বিদ্যুত জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। মুহূর্তে লাখো কণ্ঠে গর্জে ওঠা একটিই নাম বাংলাদেশ বাংলাদেশ। এরপর বঙ্গবন্ধুর সেই আহ্বান। যে আহ্বানে ’৭১-এ মহান মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। এমন দিনে জাতির জনককে স্মরণ করা হবে না তাই কি হয়। বিদ্যুত বিভাগ এবং বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, এখন দেশের মোট স্থাপিত বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১৩ হাজার মেগাওয়াট। তবে কেন্দ্রের ক্ষমতা কমে যাওয়ায় নিট উৎপাদন ১২ হাজার ৪০৫ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতও রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের এসব আর কোন মাথাব্যথার কারণ নয়। তারা এখানে আলোর উৎসব দেখতে এসেছেন। মাঝখানে বড় বড় ইংরেজী হরফে লেখা ১৫ হাজার। এর চারপাশ জুড়ে শুরু হলো আলোর ঝলকানি। আতশবাজিতে আকাশে আনন্দের ঝর্ণাধারা। একই সঙ্গে সবুজ লেজার রশ্নির বর্ণিল ছটা। রাতের আকাশকে আরও বর্ণিল শোভায় সাজালো। এত সবুজ নয় বাংলাদেশের প্রাণ। প্রাণের মেলা। শিশুদের সে কি উচ্ছ্বাস। দিড়িম- দিড়িম- দিম এমন গগন প্রকম্পিত শব্দে ভয় পাওয়ার বদলে উল্টো চিৎকার করেছে। আনন্দে চিৎকার করেছে। আজ ঘরে বসে থাকলে জীবনের ষোলোআনাই যেন মিছা মনে হতো। এই উৎসব শেষ হলো সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে। আর হাতিরঝিলের আলো জ্বলে উঠল সন্ধ্যা ৬টা ৫৭ মিনিটে। মাত্র ১৮ মিনিটের আয়োজন কিন্তু বহুদিন মনে রাখার মতো বহুদিন উচ্ছ্বাস করার মতোই ছিল এই আয়োজন। ২০১৩ সালের নবেম্বরে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। ওই বছর ডিসেম্বরে উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১০ হাজার ২৪৫ মেগাওয়াট। গত তিন বছরে আরও প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াটের নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে উৎপাদনে আসে ৬৩৫ মেগাওয়াট, পরের বছর ২০১৫তে উৎপাদনে আসে এক হাজার ৩৭৫ মেগাওয়াট, আর চলতি বছর এখন পর্যন্ত উৎপাদনে এসেছে ৯২৭ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র। হিসাব-নিকাশ যাই হোক এই আলোর ঝলকের মতো একদিন দেশের প্রতিটি ঘরেই আলো পৌঁছাবে বিজলির আলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো ঘোষণা করেছেনই সবার ঘরে আলো পৌঁছে দেবেন ২০২১ এর মধ্যে। যখন আলোয় হাসবে গোটা বাংলাদেশ।
×