ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার কলেজ শিক্ষকদের গণহারে ক্যাডারভুক্তি নিয়ে অসন্তোষ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬

এবার কলেজ শিক্ষকদের গণহারে ক্যাডারভুক্তি নিয়ে অসন্তোষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণহারে নামসর্বস্ব মানহীন বেসরকারী কলেজ জাতীয়করণের বিতর্কের পর এবার ওই কলেজের শিক্ষকদের ‘বিসিএস ক্যাডার’ স্বীকৃতি নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষা প্রশাসনে। বিসিএস পরীক্ষা ছাড়া মানের বিচারের প্রশ্নবিদ্ধ বেসরকারী শিক্ষকদের আত্মীকরণ বিধিমালার দোহাই দিয়ে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন সরকারী কলেজ শিক্ষকরা। ‘নো বিসিএস, নো ক্যাডার’ সেøাগান নিয়ে বিক্ষুব্ধ সরকারী কলেজ শিক্ষকরা সমাবেশ থেকে জাতীয়করণ হওয়া কলেজ শিক্ষকদের ‘নন-ক্যাডার’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) চত্বরে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। সরকারী কলেজ শিক্ষকরা বলেছেন, শিক্ষার সম্প্রসারণে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে জাতীয়করণ হওয়া কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তি চলবে না। জাতীয়করণ হওয়া কলেজের শিক্ষকদের ‘ক্যাডার’ মর্যাদা না দিয়ে তাদের ‘নন-ক্যাডার’ হিসেবে সরকারী চাকরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। এছাড়া ওইসব শিক্ষকের চাকরি শুধু ওই জাতীয়করণ হওয়া কলেজেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কারণ সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে তারা সকল পরীক্ষায় যোগ্যতার বিচারে মানোত্তীর্ণ। অন্যদিকে যেনতেনভাবে চাকরি নিয়ে এসেছে জাতীয়করণকৃত কলেজের শিক্ষকরা। তাই এ ধরনের শিক্ষকদের চাকরি ‘ক্যাডার’ বলে গণ্য করা যাবে না। এটা বিসিএস শিক্ষা সমিতি মেনে নেবে না। তারা আরও বলেন, জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের ‘ক্যাডারে’ অন্তর্ভুক্ত করা হলে অনাগত বিসিএসে যোগ দেয়া ক্যাডারদের পদোন্নতি পিছিয়ে যাবে। কেননা, জাতীয়করণকৃত শিক্ষকরা মাঝখানে ঢুকে যাবেন। আগামী লেকচারার পদোন্নতি তারা পাবেন। এমনকি সহযোগী ও অধ্যাপক পদে যেহেতু পদ কম, তাই ভবিষ্যতে কোন না কোন বড় কলেজ থেকে উল্লেখিত পদে যাবেন। এতে ক্যাডার শিক্ষকদের সুযোগ সংকুচিত হবে। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকরা জ্যেষ্ঠতা হারাবেন। মাউশিতে আয়োজিত সমাবেশে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সরকারী কলেজ, শিক্ষা বোর্ড, অধিদফতর থেকে আসা কয়েক হাজার বিসিএস ক্যাডারভুক্ত শিক্ষক যোগ দেন। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকারের সভাপতিত্বে সমাবেশে ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, সমিতির মহাসচিব মোঃ শাহেদুল খবির চৌধুরী, অধ্যাপক সুকুমার দত্ত, অধ্যাপক মুজাহিদ বিল্লাহ ফারুকী, অধ্যাপক অলিউল্লাহ আজমতগীর, মাসুদা বেগম, আবু বকর মোল্লা, খান রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। জানা গেছে, সরকারী হওয়া কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তি ও জ্যেষ্ঠতা নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবনস্থায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি জাতীয়কৃত কলেজের শিক্ষকদের নন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছে। বর্তমানে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক বিভিন্ন সরকারী কলেজ ও দফতরে চাকরিরত। দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই বলছেন, এমপিওভুক্ত ও বেসরকারী কলেজের নিয়োগ প্রক্রিয়া যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ ছিল। বেশিরভাগ শিক্ষক টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পেয়েছেন। অদক্ষরাও টাকা দিয়ে সহজেই নিয়োগ পেয়ে গেছেন। অথচ এসব শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণের পর যদি তাঁরা সরাসরি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হন তাহলে মেধার কোন মূল্য থাকবে না। কারণ বিসিএস দিয়ে চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের সবাই মেধাবী। কয়েক লাখ প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে স্বল্পসংখ্যক শিক্ষক ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পান। অথচ সবাই এখন একই মর্যাদা পাবে, এটা মেনে নেয়া যায় না। শিক্ষক সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, সরকার শিক্ষার এ সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। আমি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের সমস্যার বিষয়টি জানি বুঝি। অবশ্যই জাতীয়করণ হওয়া কলেজের শিক্ষকদের নন-ক্যাডার ঘোষণা করতে হবে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি আই কে সেলিমুল্লাহ খন্দকার বলেন, শিক্ষার সম্প্রসারণে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে জাতীয়করণ হওয়া কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তি চলবে না। জাতীয়করণ হওয়া কলেজের শিক্ষকদের ‘ক্যাডার’ মর্যাদা না দিয়ে তাদের ‘নন-ক্যাডার’ হিসেবে সরকারী চাকরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। তিনি আরও বলেন, সরকারী কর্মকমিশনের মাধ্যমে তারা নানা পরীক্ষায় যোগ্যতার বিচারে মানোত্তীর্ণ। অপরদিকে যেনতেনভাবে চাকরি নিয়ে এসেছে জাতীয়করণকৃত কলেজের শিক্ষকরা। তাই এ ধরনের শিক্ষকদের চাকরি ‘ক্যাডার’ বলে গণ্য করা যাবে না। এটা বিসিএস শিক্ষা সমিতি মেনে নেবে না। সমাবেশে সরকারী কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, জাতীয়কৃত বেসরকারী কলেজ শিক্ষকদের সরকারী বিধি মোতাবেক সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদানে তাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু কোন অবস্থায় নতুন জাতীয়করণকৃত বেসরকারী কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত করা যাবে না। জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারদের সঙ্গে কিছুতেই জাতীয়করণ করা কলেজের সাধারণ শিক্ষকদের সমন্বিত করা যাবে না। শিক্ষক নেতারা তাদের দাবি তুলে ধরে বলেছেন, নতুন জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত না করে তাদের জন্য পৃথক বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়া পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ, শিক্ষা ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি, ১৯৮৩ সালের এনাম কমিটির প্যাটার্ন মোতাবেক প্রাপ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক চূড়ান্তকৃত প্রায় ১৪ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি, পদসোপান প্রণয়ন ও পূর্ণ গড় বেতনে অর্জিত ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে। এদিকে সমাবেশের সময় জুতা পায়ে মাউশির শহীদ মিনারে ওঠার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতৃবৃন্দ। তবে শিক্ষকরা বলছেন, অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে এমন হয়েছে। এজন্য তারা ক্ষমা প্রার্থী।
×