ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গাইডলাইন প্রকাশ

এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে অর্থসংস্থান প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬

এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে অর্থসংস্থান প্রয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে (এসডিজি) সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ দিয়েছেন সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ের নীতি নির্ধারকরা। এ জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে এনজিও, সিভিল সোসাইটি এবং উন্নয়ন সহযোগীদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সমন্বিতভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য কৌশল হিসেবে সরকারের তরফে নেয়া হয়েছে ‘গোটা সমাজ’ (হোল অব সোসাইটি) এ্যাপ্রোচ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ২০২০ সাল মেয়াদে এসডিজির বিভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়ন বিষয়ক একটি গাইডলাইন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের অধীন ১৬৯টি সূচক অর্জনে সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় টার্গেট ঠিক করা হয়েছে। এসব টার্গেট অর্জনে জিইডি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে প্রধান ও সহযোগীর দায়িত্ব দিয়ে ‘ম্যাপিং অব মিনিস্ট্রিস বাই টার্গেটস ইন দ্য ইম্পলিমেন্টশন অব এসডিজি এ্যালাইনিং উইথ সেভেনথ ফাইভ ইয়ার প্ল্যান’ শীর্ষক এ গাইডলাইনটি তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সরকারের ৪১ মন্ত্রণালয়/বিভাগকে এসডিজির আলোকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কী করতে হবে এবং মূল দায়িত্ব, সহযোগী দায়িত্ব কে পালন করবে ১৩২ পৃষ্ঠার গাইডলাইনে তা বলে দেয়া হয়েছে। গাইডলাইন অনুযায়ী, এসডিজির ১ নম্বর লক্ষ্য (দারিদ্র্যবিমোচন) লক্ষ্য অর্জনে নেতৃত্ব দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আরসহ নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে জিইডি। সরকারের ২০ অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এ লক্ষ্য অর্জনে সরাসরি কাজ করেব। গাইডলাইনে ২০২০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের হার ৪ শতাংশ কমিয়ে ৮ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার টার্গেট ঠিক করা হয়েছে। গাইডলাইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সূচক অর্জনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে তুলনামূলকভাবে বেশি রাখতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, ইআরডি সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন, ইউএনডিপির বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুর্খাজি, ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা এসডিজি অর্জনে জিইডির গাইডলাইনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব রোডম্যাপ তৈরি ও তা বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্ব¡পূর্ণ প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, এমডিজির (২০০০-১৫) বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হয়েছে। এখন ২০৩০ সাল মেয়াদী এসডিজির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের রোল মডেল হওয়ার সুযোগ আছে। এজন্য সবার আগে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নির্মূল করতে হবে। তিনি বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় জিইডির গাইড লাইনে এসডিজি অর্জনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে যে টার্গেট দেয়া হয়েছে তা অর্জনে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এনজিও সুশিল সমাজ ও উন্নয়ন সহযোগীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মন্ত্রী। পররাষ্টমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, এসডিজির অনেক আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিশন ২০২১ ঘোষণা করেছেন। এখন এসডিজি অর্জনে একযোগে কাজ করার বিষয়টি সুসমন্বিত হতে হবে। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তের অপ্রতুলতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। সভাপতির বক্তবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সাম্প্রতিক এক হিসাবে দেখা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রম খাতে ব্যবস্থাপকদের ৩৭ শতাংশই বাংলাদেশী। অর্থাৎ বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও এগিয়ে যাচ্ছে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারলে ২০৩০ সালের আগেই এসডিজি অর্জিত হবে। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এসডিজির কয়েকটি লক্ষ্য অর্জনে ব্যাপক অর্থসংস্থান প্রয়োজন। এজন্য বাংলাদেশকে নিজস্ব সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসডিজির ৪টি লক্ষ্য- দারিদ্র্য দূর করা, ক্ষুধা নির্মূল, কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি এবং বৈষম্য কমানোর বিষয়গুলোকে বিশেষ মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন। হোসেন জিল্লুর রহমান শিক্ষা ক্ষেত্রে গুণগতমান নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে এ খাতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মতো বিশাল উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। এজন্য তিনি আগামী অর্থবছরের বাজেটে এক হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বরাদ্দ রাখার পরামর্শ দেন।
×