ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ সৃষ্টির আদি উৎস নূরে মুহাম্মদী

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ সৃষ্টির আদি উৎস নূরে মুহাম্মদী

আল্লাহ্ হচ্ছেন খালিক আর সব কিছু হচ্ছে মখলুক। যত মখলুকাত আছে সে সবের স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ্। একটি বহুল প্রচলিত হাদিস রয়েছে, যা হাদিসে কুদ্সীর অন্তর্গত। সেই হাদিসখানির মর্মকথা হচ্ছে : আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ছিলেন গুপ্তধন। তিনি আপন মহিমা ও গরিমায় মহিমান্বিত অবস্থায় বর্তমান ছিলেন। তিনি আপন কুদরতের মহিমা বিকশিত করার লক্ষ্যে, তাঁর খালিক সিফাতের বহির্প্রকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে তিনি এক স্বচ্ছ সমুজ্জ্বল নূরের উন্মেষ ঘটালেন। এই নূর অস্তিত্বপ্রাপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি জগতের সূচনা হলো। সেই নূর থেকে সৃষ্টি হলো পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি জগতের নতুন নতুন মখলুক। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু আপন নূরের ফয়েযের কুদরতি তাজাল্লী হতে যে নূরের উন্মেষ ঘটালেন সেই নূরকেই বলা হয় নূরে মুহাম্মদী। একটি বিবরণে আছে যে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ্ আমার নূরকে প্রথম সৃষ্টি করেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : হযরত আদম (আ)-এর পয়দা হওয়ার চৌদ্দ হাজার বছর পূর্বে আমি আমার রবের সান্নিধ্যে নূর ছিলাম। হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর বরাত দিয়ে আবদুর রাজ্জাক একটি হাদিস সনদসহ বিবৃত করেছেন। হাদিসখানির উদ্ধৃতি বহু নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে বিধৃত ও আলোচিত হয়েছে। হাদিসখানি বেশ দীর্ঘ, যা সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার জন্য অতি প্রয়োজনীয় তথ্যসমৃদ্ধ। সেই বিখ্যাত হাদিসখানি হচ্ছে এরূপ : হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বলেন : আমি একদিন আরয করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার আব্বা-আম্মা আপনার জন্য কুরবান হোন। আমাকে এই তথ্যটি জানিয়ে দিন যে, আল্লাহ্ তায়ালা কোন্ জিনিসটি প্রথম সৃষ্টি করেন? হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বললেন : আল্লাহ্ তায়ালা সকল বস্তু সৃষ্টির পূর্বে তাঁর নূর থেকে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেন। অতঃপর সেই নূর আল্লাহ্র ইচ্ছানুযায়ী তাঁর কুদরতে সজোরে ঘূর্ণায়মান ছিল। সেই সময়টাতে লওহ ছিল না, কলম ছিল না, জান্নাত ছিল না, দোজখ ছিল না, ফিরিশতা ছিল না, আসমান ছিল না, যমিন ছিল না, সূর্য ছিল না, চন্দ্র ছিল না, জিন ছিল না, মানুষ ছিল না- কিছুই ছিল না। অতঃপর আল্লাহ্ সৃষ্টি করার ইরাদা করলেন। সেই নূরকে চার ভাগে বিভক্ত করলেন। প্রথম ভাগ থেকে সৃষ্টি করলেন কলম, দ্বিতীয় ভাগ থেকে সৃষ্টি করলেন লওহ, তৃতীয় ভাগ থেকে সৃষ্টি করলেন আরশ।... পূর্বেই বলেছি, হাদিসখানি দীর্ঘ। এখানে তার অংশ বিশেষ পেশ করা হলো। সম্পূর্ণ হাদিসখানি পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সে নূর মুবারক অর্থাৎ নূরে মুহাম্মদীই হচ্ছে সৃষ্টি জগতে প্রথম সৃষ্টি, আর সেই নূর মুবারক থেকেই সমস্ত সৃষ্টি জগত সৃষ্টি হয়েছে। এই হাদিসখানি উদ্ধৃত করে হযরত আশরাফ আলী থানবী (র) রচিত ‘নশরুতীব্ ফিযিক্রিন্নাবিয়্যাল হাবীব’ গ্রন্থে মন্তব্য করা হয়েছে যে, এই হাদিস দ্বারা এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, নূরে মুহাম্মদী হলো আল্লাহ্ তায়ালার সর্বপ্রথম সৃষ্টি, কেননা যেসব জিনিসের ব্যাপারে প্রথম সৃষ্টি হওয়ার বিবরণ পাওয়া যায়, সে সব সৃষ্টি যে নূরে মুহাম্মদীর পরে তা এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত ও প্রতিভাত হয় (দ্র. মাওলানা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম কর্তৃক উপরিউক্ত গ্রন্থের তরজমা ‘যে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা’, পৃষ্ঠা ১)। হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত একখানি হাদিস থেকে জানা যায় যে, সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন : ইয়া রাসুলুল্লাহ্, আপনি কোন্ সময় নবুওতপ্রাপ্ত হন? তিনি বললেন : যখন আদম (আ) রুহ্ ও দেহের মধ্যখানে। এর দ্বারা এটাই বোঝা যায় যে, হযরত আদম (আ)-এর পয়দা হওয়ার বহু পূর্বেই প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম নবুওতপ্রাপ্ত হন (দ্র. ঐ পৃষ্ঠা-২)। এ ছাড়াও বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, হযরত আদম (আ)-এর কপালে এই নূর মুবারক দীপ্যমান হয়। তাঁর থেকে হযরত আদম (আ)-এর তৃতীয় সন্তান হযরত শীস (আ)-এর কপালে এই নূর স্থিত হয়। এমনিভাবে পরম্পরার ধারাবাহিকতায় পুরুষানুক্রমে এই নূর মুবারক হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতবা সাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়া সাল্লামের আব্বা আবদুল্লাহ্ হয়ে তাঁর আম্মাজান আমিনার মধ্যে স্থিত হয়। আর এমনিভাবে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সুবহে সাদিকের এক মুবারক মুহূর্তে সেই নূর মুবারক মানবরূপে পার্থিব জগতে আবির্ভূত হন। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন : ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর ইবন খতীব কাস্তালানী, মওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, প্রফেসর মাওলানা আবদুল খালেক, সাইয়েদুল মুরসালীন প্রভৃতি)। কীলানী আয়নুল উজুদ ধারণা উপস্থাপন করে এবং ইবনুল আরাবী আয়নুস সাবিত ধারণা উপস্থাপন করে নূরে মুহাম্মদীর ওপর বিস্তর ব্যাখ্যা পেশ করেছেন। ইবনুল আরাবী ‘ফুসুসুল হিকাম’ গ্রন্থে নূরে মুহাম্মদীকে বাস্তব সত্তাসমূহের বাস্তব সত্তা বা সৃষ্ট সত্তাসমূহের আদি সত্তা বলে উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন পর্যায়ে নূরে মুহাম্মদী সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতে কারিমায় নূর প্রসঙ্গ এসেছে। কোন কোন আয়াতে কারিমায় নূরের উল্লেখ এমনভাবে এসেছে যে, অনেকেই তার ব্যাখ্যা পেশ করতে গিয়ে বলতে চেয়েছেন যে, সেই নূরের উল্লেখ নূরে মুহাম্মদীর দিকেই ইঙ্গিত করে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহ্র নিকট হতে এক নূর এবং স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট এসেছে (সূরা মায়িদা : আয়াত ১৫)। এই আয়াতে কারিমায় যে নূরের উল্লেখ রয়েছে, এই নূরের পরিচয় তুলে ধরে বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে ভাষ্য উপস্থাপিত হয়েছে। ইমাম কাতাদা রহমাতুল্লাহি আলায়হির মতে, এই নূর হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নূর মুবারক অর্থাৎ নূরে মুহাম্মদী। তফসিরে নূরুল কোরানে এই আয়াতে কারিমার ব্যাখ্যায় মাওলানা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম লিখেছেন : নিঃসন্দেহে তোমাদের নিকট আল্লাহ্ পাকের তরফ থেকে এসেছে নূর এবং সুস্পষ্ট গ্রন্থ। এখানে ‘নূর’ অর্থ নূরে মুহাম্মদী তথা হযরত রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আর কিতাব তথা পবিত্র কুরআন (দ্র. তফসিরে নূরুল কোরান, ষষ্ঠ খ-, পৃ. ১৬৭)। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছেÑ তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহ্র নূর নির্বাপিত করতে চায়। কাফিরগণ অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ্ তাঁর নূরের পূর্ণ উদ্ভাসন ব্যতীত অন্য কিছু চান না (সূরা তওবা : আয়াত ৩২)। এই আয়াতে কারিমার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামা সানাউল্লাহ পানিপথী উল্লিখিত নূরের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে : এই নূরের অর্থ হলো তওহীদের স্পষ্ট দলিল অথবা কুরআন মজীদ অথবা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নবুওয়ত ও রিসালাত। সূরা সাফ্ফেও ইরশাদ হয়েছে : ওরা আল্লাহ্্র নূর ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায় কিন্তু আল্লাহ্ তাঁর নূর পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেন যদিও কাফিররা তা পছন্দ করে না। তিনিই তাঁর রসূলকে প্রেরণ করেছেন হিদায়াত ও সত্য দীনসহ সকল দীনের ওপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের জন্য, যদিও মুশরিকগণ তা অপছন্দ করে। (সূরা সাফ্ফ : আয়াত ৮-৯)। সূরা নূরে ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহ্ আসমানসমূহ ও পৃথিবীর নূর, তাঁর নূরের মিছাল হচ্ছে, যেন একটি মিশকাত (দীপাধার) যার মধ্যে আছে এক মিসবাহ (প্রদীপ), প্রদীপটি একটি কাচের আবরণের মধ্যে স্থাপিত, কাচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্রসদৃশ, একে প্রজ্বলিত করা হয় মুবারক জয়তুন বৃক্ষের তেল দ্বারা যা প্রাচ্যেরও নয়, প্রতীচ্যেরও নয়, আগুন তাকে স্পর্শ না করলেও যেন তার তেল উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে, নূরের ওপর নূর (নূরুন ’আলা নূর) আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা তাঁর নূরের দিকে পথনির্দেশ করেন। আল্লাহ্ মানুষের জন্য মিছাল দিয়ে থাকেন এবং আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে মহাজ্ঞানী। (সূরা নূর : আয়াত ৩৫)। বেশ কয়েকজন তফসিরকার এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এই আয়াতে কারিমায় নূরে মুহাম্মদীর মিছাল দেয়া হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রা)-এর জিজ্ঞাসার জবাবে হযরত কা’ব আহ্বার বলেছিলেন, এই আয়াতে আল্লাহ্ তাঁর নবীর অবস্থা সম্পর্কে মিছাল দিয়েছেন। এক ভাষ্যে ব্যক্ত হয়েছে যে, মিশকাত শব্দ দ্বারা হযরত রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সিনা মুবারককে বোঝানো হয়েছে, আর কাচ দ্বারা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কল্ব মুবারককে বোঝানো হয়েছে। ‘মিসবরাহ’ শব্দ দ্বারা তাঁর নবুওয়াত বোঝানো হয়েছে (বিস্তারিত তথ্যের জন্য মাওলানা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম রচিত তফসিরে নূরুল কুরআন, অষ্টাদশ খ-, পৃষ্ঠা ২৪৪-২৪৫ দেখা যেতে পারে)। একটি বিবরণ হতে জানা যায় যে, হযরত রসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আমি ইবরাহীমের দু’আ, ঈসার খোশ খবর এবং আমার আম্মার গর্ভাবস্থার স্বপ্ন। তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, একটি নূর বের হয়ে সিরিয়ার প্রাসাদগুলো উদ্ভাসিত করল। হযরত রসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যে নূর ছিলেন, সে সম্পর্কে বেশ কয়েকখানি হাদিস রয়েছে। হযরত আয়িশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহা বলেছেন : হযরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আলোতে যেমন দেখতে পেতেন, অন্ধকারেও তেমনি দেখতে পেতেন। সামনে-পেছনে সমানভাবে দেখতে পেতেন। (তিরমিযী শরীফ)। মাওলানা আযীযুল হক কর্তৃক অনূদিত বুখারী শরীফের সপ্তম খ- সিরাতুনবী সঙ্কলনের তৃতীয় পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে, সর্বপ্রথম সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম। চতুর্থ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে, নিখিল সৃষ্টি হযরতের খাতিরে। সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তায়ালারই সৃষ্ট হকিকতে মুহাম্মদীয়ার প্রতি স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালার এমন আকর্ষণ ও ভালবাসা যে, আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন ওই হকিকতে মুহাম্মদীয়ার প্রদর্শনী করবেন এবং অন্যকে দেখাবেন তাঁর ভালবাসার প্রিয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে। সেই প্রদর্শনী করতে গিয়েই আল্লাহ্ তায়ালা এই বিশ্বভুবনসহ কুল-মখলুকাত তথা অসংখ্য অগণিত বস্তু সৃষ্টি করেন (দ্র. ঐ ৪) হযরত সালমান ফারসী রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণিত একটি হাদিস আছে যে, একদা হযরত জীবরাঈল নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট হাজির হয়ে বললেন : আপনার রব সংবাদ পাঠিয়েছেন-এটা সত্য যে, ইবরাহীম আমাকে খলীল বানিয়েছিলেন। আমি তো গ্রহণ করেছিলাম, কিন্তু আপনাকে স্বয়ং আমি হাবীব বানিয়েছি। আমার নিকট আপনার চেয়ে সম্মানী কোন কিছু সৃষ্টি করিনি। আর আমি শপথ করে বলছিÑ নিখিল বিশ্ব এবং তার সব কিছু আমি সৃষ্টি করেছি এই উদ্দেশ্যে যে, তাদের কাছে প্রকাশ করব আপনার গৌরব এবং আমার নিকট আপনার যে কত মর্যাদা। আপনি না হলে আমি নিখিল বিশ্ব সৃষ্টি করতাম না (দ্র. ঐ, পৃষ্ঠা ৫)। প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাব ঘটানোর জন্য তাঁর মর্যাদার বিরাটত্ব প্রকাশ করার জন্যই বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ হচ্ছেন রাব্বুল আলামীন আর তাঁর হাবীব হযরত মুহম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতাবা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন রহমাতুল্লিল আলামীন। আল্লাহ্র ভালবাসা পাবার জন্য আগে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু তাঁর প্রিয় হাবীবকে উদ্দেশ করে ইরশাদ করেছেন : আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহর ভালবাসা পেতে চাও তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ্ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ্ মাফ করে দেবেন। (সূরা আলে-ইমরান : আয়াত ৩১)। কুরআন মজীদে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে ‘সিরাজাম মুনীরা’ বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : হে নবী। আপনাকে তো প্রেরণ করা হয়েছে সাক্ষ্যদাতারূপে, সুসংবাদদাতারূপে, সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহ্র দিকে তাঁরই অনুমতিক্রমে আহ্বানকারীরূপে এবং সিরাজাম মুনীরারূপে। (সূরা আহ্যাব : আয়াত ৪৫-৪৬)। নূরে মুহাম্মদী বিষয়ে বহু সাহিত্যকর্ম রয়েছে। বাংলা ভাষাতে এই বিষয়ে বেশ কয়েকখানি পুস্তক-পুস্তিকা রচিত হয়েছে। বাংলায় প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে নূর নবী বলা হয় এই ধারণা থেকেই। নূরনামা নামে বাংলা ভাষায় একাধিক কাব্য রচিত হয়েছে ষষ্ঠদশ, সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে। নূর কন্দিল নামেও কাব্য রচিত হয়েছে সেকালে। লেখক : পীর সাহেব, দ্বারিয়াপুর শরীফ উপদেষ্টা, ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা) সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
×