ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে ‘হুজি আস্তানায়’ র‌্যাবের অভিযান ॥ আটক ৫

প্রকাশিত: ২০:০৮, ৮ ডিসেম্বর ২০১৬

চট্টগ্রামে ‘হুজি আস্তানায়’ র‌্যাবের অভিযান ॥ আটক ৫

অনলাইন ডেস্ক॥ চট্টগ্রামের কর্নেল হাট এলাকায় একটি বাড়ি ঘিরে কয়েক ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র‌্যাব, দুই দফায় আটক করা হয়েছে পাঁচজনকে। র‌্যাব বলছে, এ কে খান ও কর্নেলহাটের ওই বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার পাঁচজন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজিবি) সদস্য। র‌্যাব-৭ এর স্টাফ অফিসার এএসপি সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, বুধবার রাতে চট্টগ্রামের এ কে খান এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে অস্ত্রসহ দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই আজ বৃহস্পতিবার ভোরে কর্নেলহাটের মুকিম তালুকদার বাড়ি এলাকায় নির্মাণাধীন ওই দোতলা বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষে বেলা ১১টার দিকে র্যায়বের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “দুই দফায় আটক ওই পাঁচজন হুজির সদস্যম। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।” র‌্যাব ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য্ অনুযায়ী, গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণাধীন ওই তিন তলা ভবনের দোতলার বাসা ভাড়া নেয় কয়েকজন। তারা বলেছিল, ডিসেম্বরের শুরুতেই তারা পরিবার নিয়ে আসবে। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, হুজি সদস্যরা চট্টগ্রামে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে র্যা বের কাছে তথ্য ছিল। ওই তথ্যতের ভিত্তিতে র‌্যাব একে খান গেইট এলাকা থেকে তাজুল ইসলাম ও নাজিম উদ্দিন নামে দুজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে উত্তর কাট্টলি মুকিত তালুকদার বাড়ি এলাকায় এই আস্তানার কথা জানতে পারেন তারা। সেখানে অভিযান চালিয়ে হাফেজ আবুজর গিফারি, নূরে আলম ও ইফতেশাম আহমেদ নামে তিনজনকে আটক করা হয়। “কিছুদিন আগে হুজিবি নেতা মুফতি মাঈনুল ইসলামকে যখন আটক করা হয় তখন ঢাকায় তাদের প্রধান সমন্বয়ক তাজুল ইসলামের নাম আসে। সে-ই এখন চট্টগ্রামে হুজিকে সংগঠিত করার চেষ্টায় আছে। কারাগারে থাকা হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও রউফের সঙ্গে নাজিম উদ্দিনের ঘনিষ্ঠতা ছিল।” র‌্যাব বলছে, আবুজর গিফারি কুষ্টিয়ায় সংগঠনের সমন্বয়ক। নূরে আলম ও এহতেশাম দীর্ঘদিন ধরে হুজির সঙ্গে যুক্ত। তাদের কয়েকজনের বিষয়ে র‌্যাবের কাছে তথ্য ছিল। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, প্রথম দফায় আটক তাজুল ও নাজিমুদ্দিনের কাছ থেকে দুটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছিল। আর ওই আস্তানায় সাতটি ম্যাকগাজিন, ১২টি হাতে তৈরি গ্রেনেড (ইম্প্রোভাইজড ডিভাইস), ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া যায়। মনির হোসেন নামে স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানান, ওই বাড়ির মালিকের নাম মনসুর আহমেদ। আটক যুবকেরা কিছুদিন আগে ওই বাসা ভাড়া নেয়। তাদের গভীর রাতে বাসায় ঢুকতে দেখা যেত। নুরুল আলম নুরু নামের আরেকজন বলেন, সকাল ৬টার দিকে র্যােব এসে স্থানীয়দের জঙ্গি আস্তানার কথা জানায়। পরে বাড়ির দরজায় গিয়ে নারীদের বেরিয়ে আসতে এবং পুরুষদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা দরজায় আঘাত করার পরও তারা সাড়া না দেওয়ায় র্যা ব দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। মুফতি মাহমুদ বলেন, তারা যখন বেরিয়ে আসতে বলছিলেন, তখনই বাড়ির ভেতরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে ভেতরে ঢুকে দেখা গেছে, বেশ কিছু ইলেক্ট্রেনিক ডিভাইস তারা পুড়িয়ে ফেলেছে। অভিযান শেষে ওই বাড়িতে ঢুকে উগ্র মতবাদের কিছু বই, ছাই, বেয়ারিং বল, তার, ছুরি ও চাপাতি দেখতে পান সাংবাদিকরা। র‌্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ বলেন, অন্য জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের গ্রেপ্তারের কারণে হুজি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। “এই পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে সংগঠিত করে নাশকতার মাধ্যমে সংগঠনের সদস্যদের উজ্জীবিত করাই ছিল হুজির উদ্দেশ্য।” এর অংশ হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুট এবং প্রিজন ভ্যানের হামলা চালিয়ে নিজেদের নেতাদের উদ্ধারের পরিকল্পনা ছিল বলে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার কথাও জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।
×