ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

মাহির আত্মকথা

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৮ ডিসেম্বর ২০১৬

মাহির আত্মকথা

মাহিয়া মাহি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকাশে এক উজ্জ্বল তারকা। রাত ভোর হলেও দিনের আলোতে পরিষ্কার দেখা যায় এমনি জ্বলন্ত তারকা। মাহিকে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় কারণ, যখন দেশীয় চলচ্চিত্রের ভাগ্যাকাশে নায়িকা নামের তারাগুলো মিট মিট করে জ্বলছে। কোন কোনটি আবর খসে পড়ছে। এরই মধ্যে চেনা আকাশে তেজি আলোক রশ্মি নিয়ে নতুন তারার আবির্ভাব ঘটে আমাদের শূন্যলোকে। তাঁর অগ্নি তেজ, সঙ্গে ভালবাসার রং ইতোমধ্যে ভক্ত দর্শকের হৃদয় ভরিয়েছেন সুন্দরীতমা মাহিয়া মাহি। ২০১৬ সাল। তাঁর এই ছোট জীবনে ঘটেছে সব থেকে উল্লেখযোগ্য রথবদল। চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার যখন দুরন্ত পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে তখনই শক্ত হাতে লাগাম টানলেন বিয়ে নামের স্বপ্নের পিঁড়িতে বসে। বিয়ে করলেন নিজ বলয়ের বাইরের কক্ষপথে। বিয়ের খবর হলো। হই-হই রই-রই পড়ে গেল। ওই বুঝি খসে পড়ল জ্বলন্ত তারকাটি। কিন্তু না। এটা যে ভুলোক। তাই তো কবি লিখেছেন চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়। আসলেই তাই। মাহি ফিরেছেন তার আকাশে উজ্জ¦ল মহিমায়। সম্প্রতি দীর্ঘ আলাপচারিতার সঙ্গী ছিলেন এই চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। শুরুতেই কথা হয়, নতুন সংসার নতুন কাজের উদ্যমতা নিয়ে। প্রশ্ন রাখি কীভাবে সামলাচ্ছেন এক সঙ্গে দুই অধ্যায়? উত্তরে, ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক। সংসারের দিকটা বেশ ভালভাবেই অপু (মাহির স্বামী) সামলাচ্ছে। সামলাতে যেটা হচ্ছে তা হলো আমার ক্যারিয়ার ও কাজ। আসছে নতুন বছর আপনাকে দর্শক কতগুলো নতুন সিনেমায় পাবে? তা বলা মুসকিল কারণ ঢাকা এ্যাটাক ইতোমধ্যে ৯০ ভাগ শেষ। বাকি হারজিত, পলকে পলকে তোমাকে চাই এর কাজও ৬০-৭০ ভাগ শেষ। ছবি রিলিজের ব্যাপারটা পরিচালক, প্রযোজকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। মাহিয়া মাহি ২০১২ সালে ভালবাসার রং সিনেমা দিয়ে রূপালী পর্দা রাঙিয়েছেন। এই রঙের আভায় খুব অল্পসময়ে বোনে জান দেশী চলচ্চিত্রের হাই প্রোফাইল চিত্রনায়িকা। স্বাভাবিকভাকে দেখা যায় বড় পর্দায় নায়িকা হতে, ক্রোড়পত্রের প্রচ্ছদ মডেল, র‌্যামে হাঁটা কিংবা ছোট-বড় নাটকে কাজ করার এক-আধটু অভিজ্ঞতা রেফারেন্স হিসেবে কাজে আসে। সে ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন অলিগলি না মাড়িয়ে সরাসরি চিত্র নয়িকার মহাসড়কের যাত্রী হন তিনি। এটা ব্যতিক্রম। সাহসী অভিষেক। কীভাবে সম্ভব? আসলে সিনেমায় কাজ করার আগে ওরকম কেন কিছু ফিল করি নাই। তবে হ্যাঁ টিভিসি কিংবা নাটকে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। যখন সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পাই তখন ভেবেছি কাজটা করলে নাটক করার ক্ষেত্রে একটা চেনা জানা হবে। এই ভেবে শুরু করা। পরে যখন সিনেমাটা শেষ করলাম। তখন মনে হলো ওয়াও! খুব ভাল হয়েছে। এরপর চিত্রনায়িকা। আমি এখানেই থাকতে চাই। কথাটার মধ্যে অধিকার ও আবেগ মিশ্রিত ছিল। বিয়ের আগে স্বামী পারভেজ মাহমুদ অপুকে যে ভাবে জানতেন, বিয়ের পর সেই মানুষটির কোন বদল ঘটেছে কি না? ও কেবল আমার ভাল পরিচিত ছিল। অনেক ভাল করেই লক্ষ্য করেছি। মানুষ হিসেবে সে খুব ভাল। অন্যদের মধ্যে যে সমস্যাগুলো সচরাচর সেগুলো ওর মধ্যে নেই বললেই চলে। সব থেকে বড় কথা সে আমাকে খুব ভাল ম্যানেজ করতে পারে। যে কারণে পরিবার যখন আমার বিয়ের সিদ্ধান্ত নিল তখন ওকেই পছন্দ করা হলো। আর বদল যা ঘটেছে তা হলো আগে আমি ওকে দূর থেকে অল্প জানতাম এখন কাছে থেকে জানছি। সব মিলিয়ে সে এখন আমার ভাল বন্ধু ও জীবন সঙ্গী। মাহি জন্মেছেন ঢাকায়। শৈশব বেড়ে ওঠা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবটাই কেটেছে তার উত্তরার ৯ নং সেক্টরে। পৈত্রিক নিবাস রাজশাহী। বছরান্তে এক বার যাওয়া পরে। এখন সে সিলেটের পুত্রবধূ। বিষয়টা কিভাবে উপভোগ করছেন? ঢাকা আসলে একটা যান্ত্রিক শহর। একটা ফ্ল্যাট কিংবা একটা বাসাবাড়ির মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। আমরা পাশের বাসার মানুষটিকেও কখনও চেনা জানা হয় না। সে দিক থেকে সিলেট অকেবারেই অন্যরকম। সবুজ প্রকৃতি। নির্মল আবহাওয়া। আর জানেনই তো সিলেট পুণ্যভূমি। বর্তমানে ভারত বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হচ্ছে একাধিক চলচ্চিত্র। আমাদের দর্শকরাও তুলনামূলক ভাল আগ্রহ নিয়ে হলে যান সিনেমা দেখতে। এতে করে দেশীয় চলচ্চিত্র ও শিল্পীদের কোন অগ্রগতি হচ্ছে কি? এ ব্যাপারে ভালমন্দ কিছুই বলব না। তবে ভাল সিনেমা হলে সবাই দেখবে। সবাই কাজ করবে। ব্যস এ-টুকুই। মাহি এ যাবত সব থেকে বেশি পারিশ্রমিক নেয়া চিত্র নায়িকা। বিষয়টা কীভাবে উপলদ্ধি করেন, এ ক্ষেত্রে কোন দায়বদ্ধতা কাজ করে কি? ধরা যাক কেন একটা প্রোডাকশন আমাকে নিয়ে কাজ করতে চায় তাদের বাজেট যদি ২০ লাখ টাকা। সিনেমার গল্পও ভাল। কিন্তু পুরো সিনেমা অল্প বাজেটে ওয়ার্কআউট করবে কীভাবে। তবে ক্ষেত্রবিশেষ গল্পের ওপর নির্ভর করে। একটা সময় ছিল বাংলা সিনেমায় নায়ক-নায়িকাদের আলাদা-আলাদা ইমেজ ছিল যে কারণে কেবল তাদের নামে হল থাকত হাউসফুল। কিন্তু এখন আর সেই ইমেজের খুব কাউকে দেখা যায় না। এটা কেন? একটা সময় ছিল আমাদের বেশির ভাগ দর্শক ছিল বিটিভির। যে কারণে কাউকে স্টাবলিশ করা ওতটা জটিল ছিল। ভাল হোক মন্দ হোক দর্শকদের বিটিভিতে বন্দী হতে হতো। এখন কিন্তু সে যুগ নেই চাইলেই রিমট দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাংলা চ্যানেল শেষ করা দায়। এটা একটা বড় কারণ। শিল্পী সঙ্কটও একটা বিষয়। নিজেকে লেডি এ্যাকশন কন্যা নাকি প্রেমিকা সুকন্যা কোনটাতে উপভোগ করেন? দুইটাই। আপনার অভিনীত প্রিয় সিনেমা? দবির সাবের সংসার। আপনাকে না জানিয়ে আপনার বিপরীতে অপু ভাইকে কোন সিনেমার নায়ক করা হলে কেমন লাগবে? এটা হবে আমার সব থেকে পচা সিনেমা আমি হেসেই এগোতে পারব না। বাকিটা কী হবে জানি না। ধন্যবাদ। মাহিয়া মাহি বিয়ের পর কিছুকাল বিরতির পর আবার শুরু নিজের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার হাতে রয়েছে একাধিক নতুন সিনেমার কাজ। সেগুলো নিয়েই নতুন উদ্যমে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জনপ্রিয় এই চিত্রনায়িকা।
×