ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাকিদের টাকা বিতরণ

সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশ থেকে গেছে- দাবি থেকে পিছু হটেছে মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৮ ডিসেম্বর ২০১৬

সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশ থেকে গেছে- দাবি থেকে পিছু হটেছে মিয়ানমার

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ মিয়ানমারে বিজিপি চৌকিতে হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশ থেকে সেখানে গেছে বলে দেশটির সরকারের এমন দাবি থেকে পিছু হটেছে মিয়ানমার। সম্প্রতি বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন সীমান্ত এলাকা সফরে এসে সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সুতরাং এখানে দেশী-বিদেশী কোন সন্ত্রাসী অপতৎপরতা চালানোর কোন সুযোগ নেই। আমরা কারও শক্র নই, সীমান্তের সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক রয়েছে। হয়ত তাদের বিশ্বাসে ঘাটতি রয়েছে, তাই এমনটি চিন্তা করছে। তিনি আরও বলেছেন, ইতোমধ্যে মিয়ানমার থেকে আসা গুলিবিদ্ধ দুই অপরাধীকে ধরে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সীমান্তরক্ষীদের (বিজিপি) কাছে হস্তান্তর করেছি। বিজিবি মহাপরিচালকের বক্তব্য এবং সেখানকার (মিয়ানমার) জঙ্গল থেকে রোহিঙ্গা যুবকদের উদ্দেশে সেনা বাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আরএসওর আহ্বান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইন্টারনেটে পোস্ট করা ভিডিও দেখে মিয়ানমারের মতো পাল্টে গেছে। দেশটির গহীন জঙ্গলে অবস্থানকারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বিজিপি চৌকিতে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে বলে সেনা বাহিনীর অপারেশন কর্মকর্তারা আপাতত ধারণা করেছেন বলে ওপার থেকে পাওয়া বিশেষ সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা (আরএসও এবং এআরএম) মিয়ানমারের গহীন জঙ্গল থেকে এসে মংডুর কাউয়ারবিলে বিজিপি চৌকিতে হামলা চালিয়েছে। সেনা সদস্যরা আরও শক্তি সঞ্চার ঘটিয়ে ওসব পাহাড়ে অভিযান চালাতে পারে বলে ওপার থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে। রোহিঙ্গা নেতারা জানান, মিয়ানমারে দোষ করেছে কয়েকজন, অথচ ফল ভোগ করতে হচ্ছে সেখানে বসবাসকারী সবাইকে। ঐ দোষের কারণে দেশ ত্যাগ করে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। গোপনে ঢুকে পড়েছে অন্তত ১৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। কিছু কিছু পরিবার ক্যাম্পের আশপাশে অবস্থান নিলেও অন্যরা কক্সবাজার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে। সচেতন মহল জানিয়েছেন, ১৯৭৮ সাল থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ে সেই থেকে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। দুটি ক্যাম্পে আশ্রিতরা ছাড়াও প্রায় ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অবৈধভাবে অবস্থান করছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তারা আরও বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ (আরএসও) বারবার দোষ করবে, এ কারণে দলে দলে রোহিঙ্গারা এ দেশে এসে আশ্রয় খুঁজবে, এ যেন উদোর পি-ি বুদোর ঘাড়ে। এদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংস নির্যাতনের শিকার হয়ে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আরও আটটি নৌকা ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গাদের নৌকাগুলো ফেরত পাঠানো হয় মিয়ানমারে। টেকনাফ-২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী জানিয়েছেন, টেকনাফ উপজেলার নাফ নদীর তিনটি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা বহনকারী আটটি নৌকার প্রতিটিতে ১২ থেকে ১৫ জন রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষ ছিল। বিজিবির সদস্যদের বাধার মুখে নৌকাগুলো মিয়ানমারে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বলেন, গত ১ নবেম্বর থেকে মঙ্গলবার ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত টেকনাফের আনোয়ার মৎস্য খামার, ২, ৬ ও ৭ নম্বর সøুইসগেট, লম্বাবিল, তুলাতলি, লম্বাবিল হাউসের দিয়া, কাটাখালী, উলুবনিয়া, ঝিমংখালী, ওয়াব্রাং, লেদা, মোচনি, দমদমিয়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ২২২টি নৌকায় ২ হাজার ২৫০ জন রোহিঙ্গাকে প্রতিহত করা হয়েছে। ইতোপূর্বে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তার দায়ে ১৩ জন দালালকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ ও তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। একাধিক সূত্র জানায়, তিনদিন ধরে উখিয়ার কুতুপালং বস্তিতে এক পাকিস্তানী নাগরিকদের হাতে নগদ টাকা বিলি করে চলছে। প্রতি রাতে ১২টার পর ওই পাকি নাগরিক ক্যাম্পে এসে হাজির হলে শুরু হয় নগদ টাকা বণ্টনের কাজ। বস্তির সভাপতিকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে এ টাকা বিলি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) বাংলাদেশের সমন্বয়কারী কথিত মাস্টার আয়ুবকে ধরতে হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশ। সে টেকনাফ থানার পলাতক আসামি। ৩১ জুলাই টেকনাফের শাপলাপুরে এক বিদেশীসহ কয়েকজন আরএসও ক্যাডারকে নিয়ে গোপন বৈঠক করেছিল। ওই বৈঠক থেকে আরএসও নেতা হাফেজ ছলাহুল ইসলাম, মৌলভী ছৈয়দ করিম ও মোঃ ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করে বিজিবি-পুলিশ যৌথ বাহিনী। ওসময় আরএসও লিডার আয়ুব পালিয়ে যায়। একটি সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, রাখাইন রাজ্যে প্রায় ১১ লাখ সরকারী হিসেবে (৮ লাখ) রোহিঙ্গা বসবাস করছে। রোহিঙ্গাদের সবাই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত। প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ও ৫ লাখ রোহিঙ্গা সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে বসবাস করছে। জাতিসংঘের (ইউএনএইচসিআর) ভাষ্যমতে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৩২ হাজার ৫শ’ রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসাবে নিবন্ধিত, বাকিরা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় অনিবন্ধিতভাবে বসবাস করছে। জাতিসংঘের তথ্য মতে রোহিঙ্গারা বিশ্বের সব চেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী। মূলত রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের বিতাড়ন করে এককভাবে সেখানকার অন্য জনগোষ্ঠীকে প্রধান্য প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে তাদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে চলছে।
×