ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি

প্রচারে অংশ নিতে খালেদা শীঘ্রই নারায়ণগঞ্জ যাবেন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৮ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রচারে অংশ নিতে খালেদা শীঘ্রই নারায়ণগঞ্জ যাবেন

শরীফুল ইসলাম ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে শীঘ্রই নারায়ণগঞ্জ যাবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তিনি বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় বক্তব্য রাখবেন। তার গণসংযোগকালে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ ও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক লোকজন জড়ো করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক শোডাউন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সূত্র মতে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জ সফরে যাওয়ার আগেই দল ও জোটের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে করা কমিটিগুলোকে সক্রিয় করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই এসব কমিটির নেতারা নিয়মিত নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে প্রচার জোরদার করেছেন। আর কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে স্থানীয় নেতাকর্মীরাও নির্বাচনী প্রচারে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। এদিকে খালেদা জিয়ার নারায়ণগঞ্জ সফরের দিন ব্যাপক শোডাউনের লক্ষ্য নিয়ে ইতোমধ্যেই রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জে বেশ ক’টি প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। আরও ক’টি প্রস্তুতি সভা আজ-কালের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনার একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে বিএনপি। এ কমিটির প্রধান সমন্বয়ক করা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। আর দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনকে সদস্য সচিব করা হয়। ওইদিন নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কমিটি ঘোষণা করেন। এ সমন্বয় কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ ও শহীদুল ইসলাম বাবুল এবং বিএনপির সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের। এ কমিটির নেতারা ইতোমধ্যেই নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করে প্রচারে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের পক্ষে প্রচার ও জনগসংযোগের জন্য ২০ দলীয় জোটের তিনটি টিম গঠন করা হয় ৬ ডিসেম্বর। তবে জামায়াতের সম্মতিতেই সমালোচনা এড়াতে কৌশলে এ কমিটিতে ওই দলের প্রতিনিধি রাখা হয়নি। ওইদিন নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের মহাসচিবদের বৈঠকে এ টিম গঠন করা হয়। এ ৩ টিমের কর্মকা-ের আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেবেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার। আর সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়াকে। ৩টি টিমের মধ্যে ক-গ্রুপে রয়েছে বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি) ও ডেমোক্র্যাটিক লীগ (ডিএল)। খ-গ্রুপে রয়েছে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, পিপলস লীগ (পিএল) ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল। গ-গ্রুপে রয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ। খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার দিন ওই এলাকায় ব্যাপক শোডাউনের লক্ষ্যেই এতসব কমিটি করে কমিটিগুলোতে থাকা নেতাদের সক্রিয় করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হতে চায় বিএনপি। আর এজন্যই এ নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে দলটি। বিগত দিনের সরকারবিরোধী আন্দোলন ব্যর্থ হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বেকায়দায় থাকা বিএনপি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবেও ঘুরে দাঁড়াতে চায়। কেন্দ্র করে দেয়া কমিটি ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের টার্গেট নিয়ে আরও অর্ধশতাধিক কেন্দ্রীয় নেতাকে প্রচারে অংশ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। লন্ডন থেকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও তার ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে এ নির্বাচনের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি এবার প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে কেন্দ্রীয় নেতাকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সক্রিয় থাকার দায়িত্ব দিয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কিছু সিনিয়র নেতাকে দিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি করা হলেও এর বাইরে এ নির্বাচন মনিটর করার জন্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ক’জন সিনিয়র নেতাকেও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা খালেদা জিয়ার পরামর্শ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্বাচন পরিচালনা কাজে গতি আনবেন। প্রদত্ত তফসিল অনুসারে ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। এ নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বে নিয়োজিত নেতাদের নারায়ণগঞ্জ ত্যাগ না করতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার এখন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে কোন বাধা নেই। কারণ তিনি সরকারেও নেই আবার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় বিরোধী দলের নেতাও নন। এ সুযোগ নিয়ে ২০১৫ সালের ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। বেশ ক’দিন তিনি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরাসরি গণসংযোগ চালানোর পাশাপাশি পথসভায় বক্তব্য রাখেন। ওই সময় তিনি যখন গণসংযোগে নামতেন তখন বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হতো। এবারও তিনি নারায়ণগঞ্জে একইভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে চাচ্ছেন। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ইতোমধ্যেই ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতারাও প্রচারে অংশ নিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নামবেন। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ওই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমরা আশা করব নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার ব্যবস্থা করবে। আর তাহলে বিএনপির প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিনই বিএনপির নেতাকর্মীদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নেয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে বাধা না পেলে এ সংখ্যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে।
×