মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। জোরেশোরে চলছে তাদের প্রচার। থেমে নেই গণসংযোগ, লিফলেট বিলি। দিচ্ছেন নানামুখী উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। প্রচারণা বেশ জমে ওঠায় সিটি এলাকায় পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। সর্বত্রই এখন নির্বাচনী আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। নগরীর রাস্তাঘাট ও অলিগিলিতে হেঁটে যেতেই মাথার উপরে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রার্থীর ঝোলানো পোস্টার। বাতাসের সঙ্গে দুলছে পোস্টারগুলো। সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। বুধবার আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী মহানগরীর সিদ্ধিরগঞ্জে ও বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত নগরীতে গণসংযোগ চালিয়েছেন। বসে নেই অন্য ৫ মেয়র প্রার্থীও। এছাড়াও ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ১৯৪ জন কাউন্সিলর প্রার্থীরও চোখে ঘুম নেই। দিন-রাত তারাও প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডাঃ আইভী বলছেন, সিটি কর্পোরেশনকে সুবজায়ন ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। অন্যদিকে সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, মানুষ যদি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে তবে ধানের শীষ বিজয়ী হবে। কারণ মানুষ পরিবর্তন চায়। নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউসে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ আবেদন করেনি।
পরিকল্পিত নগরী গড়ে তুলব- আইভী ॥ বুধবার সিটি কর্পোরেশনের ৭নং ওয়ার্ডে গণসংযোগের সময় ডাঃ আইভী সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচিত হলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে সবুজায়ন ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। পরিকল্পিত নগরায়ন বলতে সিটি কর্পোরেশনের জলাশয়, পুকুর, খাল বিলি সংরক্ষণ করব। এরই মধ্যে সিটি কর্পোরেশনে কি কি সমস্যা আছে সেগুলি চিহ্নিত করেছি। এসব সমস্যা স্বল্প মেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাধান করব। তিনি বলেন, আমার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে চাই। অনেক কাজ চলমান। এরই মধ্যে বেশিরভাগ কাজই শেষ করেছি। কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলি দ্রুত শেষ করব।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী সকাল নয়টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের সাত নম্বর ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী পুল, কমদতলী মধ্যপাড়া, উত্তর কমদতলী, দক্ষিণ কদমতলী, কলেজপাড়া, নয়াপাড়া, গ্যাস ফিল্ড ও কাশেমপাড়া বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় ওই এলাকার শত শত নারী পুরুষ আইভীকে দেখার জন্য রাস্তায় নেমে আসে। পাড়া মহল্লার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সাধারণ মানুষ ফুল ছিটিয়ে আইভীকে বরণ করে নেন। কেউ কেউ ফুলের তৈরি নৌকা দিয়েও তাকে স্বাগত জানান। এ সময় সাধারণ ভোটরার আইভী আপার মার্কা নৌকা নৌকা বলে নানা স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। আইভীর গণসংযোগের সময় ভোটারদের উপচে পড়া ভিড় জমে যায়। আইভী যে সব এলাকায় গণসংযোগ করতে যাচ্ছেন সেসব এলাকার ভোটারদেরও উৎফুল্ল দেখা গেছে। ডাঃ আইভী মহিলা ভোটারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোট চান। পুরুষ ভোটারদের উদ্দেশে হাত নেড়ে ভোট চান।
ধানের শীষ বিজয়ী হবে- সাখাওয়াত হোসেন খান ॥ বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান গণসংযোগকালে বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে দায়িত্ব পালন করে নারায়ণগঞ্জ থেকে গুম, খুন অপহরণ সন্ত্রাস নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের মুখে সন্ত্রাস বিরুদ্ধে কথা মানায় না। মানুষ যদি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে তবে ধানের শীষ বিজয়ী হবে। কারণ মানুষ পরিবর্তন চায়। বুধবার সাখাওয়াত হোসেন খান শহরের পাইকপাড়, বড় কবরস্থান, ছোট কবর স্থান, পুল, আমলাপাড়া, কালিরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় তার সঙ্গে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত অনেক ভাল আছে। সবার সহযোগিতায় আমরা একটি স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পাব। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে আসবে বলে আমরা আশাকরি। নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কড়া নজরদারিতে থাকবে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটারধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে বিএনপি প্রার্থীর দাবির ব্যাপারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ আমার কাছে সেনা মোতায়েনের দাবি করেনি। বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিস্থিতি দেখতে এসে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী এর আগে নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসন ও জেলা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার, জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া, জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হকসহ জেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা। মতবিনিময় শেষে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
প্রচারণায় ব্যস্ত কাউন্সিলর প্রার্থীরা ॥ সিটি নির্বাচনে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৬৫ জন ও ৯টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন প্রার্থীও নিজ নিজ ওয়ার্ড এলাকায় নানাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিলি করছেন লিফলেট। ভোটারদের দ্বারে দ্বারেও গিয়েও তারা ভোট চাইছেন। আবার রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও দোকানে দোকানে গিয়েও ভোটারের সঙ্গে হাত মিলেয়ে ও কুশল বিনিময় করে ভোট চাইছেন। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের।
প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরীর অলিগলি ॥ প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরীর রাস্তাঘাট-অলিগলি। মঙ্গলবার রাতেও বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকরা পোস্টার টাঙ্গাতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। বুধবারও নতুন করে পোস্টার ঝুলাতে দেখা গেছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী (নৌকা), বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত (ধানের শীষ) ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইলের (কোদাল) পোস্টার ঝুলতে দেখা গেছে। অন্য মেয়র প্রার্থীদের পোস্টার এখনও চোখে পড়েনি। তবে প্রতিটি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে ভরে গেছে নগরীর রাস্তাঘাট ও অলিগলি। পোস্টারের পাশাপাশি মাইকিং করেও প্রার্থীর পক্ষে ভোটারদের কাছে সালাম পৌঁছে দিচ্ছেন।