ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পাবনা জেলা পিস কমিটির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন এহিয়ার ঠাঁই আঁস্তাকুড়ে;###;হাইকোর্টের নির্দেশনার বাস্তবায়ন শুরু

স্থাপনা থেকে উৎখাত ॥ স্বাধীনতাবিরোধীর নাম মুছে ফেলল শাহজাদপুরের ছাত্ররা

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৮ ডিসেম্বর ২০১৬

স্থাপনা থেকে উৎখাত ॥ স্বাধীনতাবিরোধীর নাম মুছে ফেলল শাহজাদপুরের ছাত্ররা

নিজস্ব সংবাদদাতা, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ,৭ ডিসেম্বর ॥ বৃহত্তর পাবনা জেলা পিস কমিটির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন এহিয়ার নামে শাহজাদপুরে স্থাপিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা জারির পর বুধবার সকালেই শাহজাদপুর সরকারী কলেজের ছাত্রছাত্রীরা মাওলানা সাইফুদ্দিন এহিয়া কলাভবনের নাম মুছে ফেলেছে ছাত্রছাত্রীরা। আজকের জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে ওই সংবাদের শত শত ফটোকপি শাহজাদপুরে বিলি হয়। নব্বই দশকে সরকারী জায়গা দখল করে স্বাধীনতাবিরোধী পাবনা জেলা পিস কমিটির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিনের নামে পৌর সদরে সাইফুদ্দিন এহিয়া কলেজ ও স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তারই পুত্র নব্বইয়ের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কামরুউদ্দিন এহিয়া খান মজলিশ সরোয়ার। বিএনপির এমপি নিজেও ’৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকার ছিলেন। কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন স্বাধীনতাবিরোধীর নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং প্রচারপত্র বিলির কারণে স্থানীয় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহব্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্লু বাশারকে হত্যার জন্য আক্রমণ করা হয়। গভীর রাতে রাজাকার গংয়ের হামলায় তিনি মারাত্মক আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে উন্নত চিকিৎসায় অবশেষে বেঁচে যান। কিন্তু সংসদ সদস্যের নির্দেশে সে সময়ে এই নির্মম আক্রমণের ঘটনায় থানা মামলা পর্যন্ত নেয়নি। অবশেষে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম মুছে ফেলতে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বুধবার শাহজাদপুর সরকারী কলেজের ওই ভবনটির নামকরণ মুছে ফেলে কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। এদিকে, আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সব স্থাপনার নাম পরিবর্তন করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। শিক্ষা সচিব ও স্থানীয় সরকার সচিবকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম রাস্তাঘাট, সড়ক ও স্থাপনা থেকে মুছে ফেলতে চেয়ে সম্পূরক এক আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ আদেশ দেয়। আগামী ১ মার্চ পরবর্তী আদেশের জন্য মামলাটি তালিকায় আসবে। একইসঙ্গে খান এ সবুরের নামে খুলনায় যেসব স্থাপনা আছে তা মুছে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালতে আবেদনকারী ড. মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবিরের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ কে রাশেদুল হক। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। আইনজীবী এ কে রাশেদুল হক বলেছেন, ‘২০ স্বাধীনতা বিরোধীর নাম সংবলিত একটি তালিকা যুক্ত করে সম্পূরক এক আবেদন করা হলে আদালত ওই আদেশ দিয়েছেন।’ এর আগে গত বছরের ৩ নবেম্বর খান এ সবুর সড়ক ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান মিলনায়তনের নাম পরিবর্তনের আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এ নির্দেশ ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে স্থাপনা নামকরণ প্রত্যাহারের নির্দেশনা চেয়ে ২০১২ সালে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবির একটি রিট করলে গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট এই আদেশটি জারি করে। এ ব্যাপারে যুদ্ধকালীন কমান্ডার আবুল বাশার বলেন, এটি আমার ব্যক্তিগত কোন আন্দোলন নয়। এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়। আজকে হাইকোর্ট রায় দিয়ে প্রমাণ করল যে সারাদেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের অস্তিত্ব থাকার কোন যৌক্তিকতা নেই। ৪৫তম বিজয়ের মাসে এটি ইতিহাসের বিজয়ের অংশমাত্র।
×