ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুত জ্বালানি সপ্তাহের উদ্বোধনীতে সেরা পত্রিকা রিপোর্টিং পুরস্কার পেলেন জনকণ্ঠের রশিদ মামুন

ঘরে ঘরে বিদ্যুত ’২১ সালের মধ্যে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৮ ডিসেম্বর ২০১৬

ঘরে ঘরে বিদ্যুত ’২১ সালের মধ্যে ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পের জন্য চাইলেই উদ্যোক্তারা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বিদ্যুত জ্বালানি সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের লক্ষ্য মানুষের ঘরে ঘরে আলো পৌঁছে দেয়া। বুধবার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় চার দিনব্যাপী বিদ্যুত সপ্তাহ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার রশিদ মামুনকে ‘সেরা পত্রিকা রিপোর্টিং’ পুরস্কার প্রদান করেন। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলন বিভ্রান্তিই হাতিয়ার শিরোনামে দৈনিক জনকণ্ঠে ২৮ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য তিনি সেরা প্রতিবেদকের পুরস্কার পেলেন। এ বছর সেরা ইলেকট্রনিক রিপোর্টিং পুরস্কার পেয়েছেন দি ইনডিপেন্ডেট পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক শাহেদ সিদ্দিকী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুত দেয়া সম্ভব হবে। এখন দেশের ৭৮ ভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এসেছে। যেখানে গ্রিডের বিদ্যুত পৌঁছানো সম্ভব হয়নি সেখানে বিকল্প উপায়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস থেকে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হবে। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল মানুষের ঘরেই আমাদের আলো পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা সেই অঙ্গীকার করেছি। তিনি বলেন, বিদ্যুত উৎপাদনের চলমান গতি অব্যাহত রাখার মাধ্যমে আমাদের রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী আগামী ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুত দিতে পারব। এ কাজের অংশ হিসেবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। তিনি বিদ্যুত জ্বালানি এবং পানি ব্যবহারে সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী আমি তো আমার কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় লাইট, ফ্যানের সুইচ বন্ধ করে বের হই। নিজের কাজ নিজে করার মধ্যে কোন লজ্জা নেই। যেটা আমার কাজ সেটা তো আমাকেই করতে হবে। তিনি বলেন, আমি চাই অভিভাবক শিক্ষক থেকে শুরু করে সকলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, আদালত-সর্বক্ষেত্রেই আপনারা সাশ্রয়ী মনোভাব নিন অর্থাৎ বিদ্যুতের সুইচটা একটু নিজেরাই বন্ধ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুত খাতের ক্রমাগত উন্নয়নের মাধ্যমে গত আট বছরে ৮০টি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ৯ হাজার ৮৯৩ সার্কিট কিলোমিটার এবং বিতরণ লাইনের পরিমাণ ৩ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার। বিদ্যুত সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণেও ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদিত বিদ্যুত সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্নভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বিগত আট বছরে এক হাজার ৯০২ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং ৯৭ হাজার কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ৯ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮টি কয়লাভিত্তিক বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়াও আমরা রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি সই করেছি। আগামী ২০২৪ সাল নাগাদ কেন্দ্রটি থেকে দুই হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করা সম্ভব হবে। ২০০৯ সাল হতে এ পর্যন্ত নতুন তিনটি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের গড় উৎপাদন দৈনিক এক হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট হতে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দৈনিক ২ হাজার ৭৪০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। নতুন ৮৫৪ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যুত, সার-কারখানা, শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিক খাতে বর্তমানে প্রায় ৩৪ লাখ গ্রাহকের কাছে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালায় ২০২১ সালের মধ্যে এই ধরনের জ্বালানি হতে মোট বিদ্যুতের ৫ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে ২০২১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক তিন হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে ৪৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে অফগ্রীড এলাকার ৪৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে, যা সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দিকে গুরুত্বারোপ করে সরকার বিগত আট বছরে বেশ কিছু চুক্তি সম্পাদন করেছে। বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা চুক্তির আওতায় বর্তমানে ভারত থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে এবং আরও ৫০০ মেগাওয়াট আমদানির জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি নেপাল এবং ভুটান থেকে জলবিদ্যুত আমদানির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে সরকার বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মহেশখালীতে বিল্ড-অউন-অপারেট-ট্রান্সফার (বিওওটি) পদ্ধতিতে একটি ‘ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের কাজ বাস্তবায়নাধীন আছে। আগামী ২০১৮ সালে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভিশন ২০২১ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কয়েকটি ল্যান্ড বেসড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রাহক সেবার মানও বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, ২০০১ সালে আমরা যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করি তখন বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ রেখে আসি ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় পেয়েছি ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। তার মানে, বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে বিদ্যুত উৎপাদন তো বাড়েইনি বরং কমেছে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সভাপতিত্বে নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী জনার্দন শর্মা এবং জাতীয় সংসদের বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম, জ্বালানি এবং খনিজ বিভাগের সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও বিদ্যুত বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম বক্তৃতা করেন।
×