ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াঙ্গুনে সুচি ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক

রোহিঙ্গাদের বাঁচান ॥ কফি আনান

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৮ ডিসেম্বর ২০১৬

রোহিঙ্গাদের বাঁচান ॥ কফি আনান

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান মিয়ানমার সফরকালে মঙ্গলবার বলেছেন, তিনি সে দেশের জাতিগত রোহিঙ্গা মুসলিমদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার খবরে শঙ্কিত। তিনি দেশটির সংঘাত কবলিত পশ্চিমাঞ্চলে মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষাপটে নাগরিক অধিকার রক্ষায় আরও ব্যবস্থা নিতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বিবিসি ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের। ইয়াঙ্গুনে মিয়ানমারের নেতা আউং সান সুচি ও দেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর কফি আনান সাংবাদিকদের বলেন, যেখানেই নিরাপত্তা অভিযান চালানোর দরকার হতে পারে, সেখানে বেসামরিক লোকজনকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে বলে তিনি জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আমি আইনের শাসন সম্পূর্ণভাবে পালন করে তৎপরতা চালাতে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই। রাখাইন রাজ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খুঁজে বের করতে চলতি বছরের সুচির নিযুক্ত এক কমিশনের প্রধান হিসেবে আনান মিয়ানমার সফর করছিলেন। রাখাইন বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্য। কথিত রোহিঙ্গা জঙ্গীরা অক্টোবরের প্রথম দিকে তিনটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে নয় পুলিশকে হত্যা করার পর উত্তেজনা দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে সামরিক দমন অভিযান শুরু হলে শরণার্থীরা দলে দলে ঐ এলাকা ছেড়ে চলে যায়। ২০১২ সালে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে হামলা চালানোর পর এবারই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শরণার্থী ঐ এলাকা ছেড়ে পালান। ২০১২ সালের হামলায় ১০০ জনেরও বেশি নিহত এবং অন্য প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার লোক তাঁবুর শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। অন্য হাজার হাজার লোক থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সর্বশেষ দফার সহিংসতার পর অনেক রোহিঙ্গা নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। সেখানকার কর্তৃপক্ষ শরণার্থীদের নতুন দল সামলাতে আগে থেকেই হিমশিম খাচ্ছে। জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নির্যাতিত জাতি বলে বর্ণনা করেছে। তাদের মিয়ানমারে নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করা হয়, যদিও তাদের অনেকেই কয়েক প্রজন্ম ধরে দেশটিতে বসবাস করে এসেছে। আনান স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনের জন্য গত সপ্তাহে মিয়ানমার পৌঁছান। সুচি ও আর্মি কমান্ডার-ইন চীফ জেনারেল মিন আউং লেইংয়ের সঙ্গে বৈঠককালে আনান মানবিক ত্রাণসংস্থা সাংবাদিকদের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে প্রবেশ করার আরও অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানান। রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে সুচি আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তবে আনান মন্তব্য করতে গিয়ে সতর্কতার পরিচয় দেন। তিনি বলেন, অক্টোবর থেকে সহিংসতা কিভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, তা নিয়ে সরকারের তদন্ত আগেভাগেই কিছু বলার সময় এখনও আসেনি। তিনি একথাও বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী জাতিগত নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে হলে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবির পক্ষে প্রমাণ রয়েছে একথা বলারও সময় আসেনি। কফি আনান বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতাকে তিনি গণহত্যা বলে অভিহিত করবেন না। রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনের পর তিনি বিবিসিকে বলেন, আমার মনে হয়, সেখানে উত্তেজনা আছে, সেখানে লড়াই আছে, কিন্তু একে কেউ কেউ যেভাবে বর্ণনা করেছেন, আমি সেভাবে বর্ণনা করব না। এখন মানবিক ত্রাণসংস্থাগুলো বলছে, দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ২১ হাজার ৯শ’ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমারে গণহত্যা চলছে বলে মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী নজিব রাজাক রবিবার মন্তব্য করেন। রোহিঙ্গা দলগুলো ধর্ষণ, গুলিবর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের অভিযোগ করে। তারা বলছে, তাদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালানো হচ্ছে। মিয়ানমার সরকার জোরালো ভাষায় এসব অভিযোগ অস্বীকার করে। দেশটির কার্যত নেতা আউং সান সুচি রাখাইন রাজ্যের উত্তেজনা নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য একটি কমিশনের নেতৃত্ব দিতে আগস্ট মাসে আনানকে আহ্বান জানান। এ রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গারা বৌদ্ধপ্রধান রাখাইন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বাস করে।
×