ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

উখিয়ায় হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে শিশু ছাত্রীকে গণধর্ষণ

প্রকাশিত: ০১:৫৫, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬

উখিয়ায় হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে শিশু ছাত্রীকে গণধর্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ অদ্ভুত ব্যাপার। এক দুইজন নয় সাতজন পাহাদার দায়িত্ব পালন করেছে। অথচ মুমূর্ষ মাকে দেখতে এসে হাসপাতাল থেকে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করেছে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসী লম্পট গিয়াসকে গত দুইদিনেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সাতজন নাইট গার্ড (আনসার) হাসপাতালে নিরাপত্তার খাতিরে পাহারায় ছিলেন। তাদের সম্মুখে অস্ত্র উঁচিয়ে দু’তলা থেকে জোরপুর্বক একজন শিশু ছাত্রীকে (১৪) তুলে নিয়ে মেয়েটির সর্বনাশ করার বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারছেন না কেউ। এঘটনার বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। সোমবার মধ্যরাতে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘটে এ ঘটনা। বুধবার কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ওই ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে পুলিশ। জানা যায়, ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে উখিয়া হাসপাতালে ভর্তি হন জালিয়াপালং পূর্ব সোনারপাড়ার জৈনেক ব্যক্তির স্ত্রী (৩৫)। মা’র সেবার জন্য তার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েকে রেখে পিতা কলিম উল্লাহ বাড়ি চলে যান। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে বাথরুমে যাওয়ার সময় করিডোরে ওই ছাত্রীকে ঝাপটে ধরে সন্ত্রাসীরা। মেয়েটি চিৎকার দিতে চাইলে মুখ চেপে ধরে অস্ত্রের মুখে তাকে তুলে নিয়ে যায়। ওসময় রাতের বেলায় পাহারায় থাকা আনসার ভিডিপি সদস্যরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা জেনে হাসপাতালের রোগিরা চেচামেচি করলে নাইট গার্ডরা হাসপাতালের উত্তর পাশে বাউন্ডারি দেয়াল সংলগ্ন জঙ্গল থেকে রাত ১টার পর বিবস্ত্র অবস্থায় ঐ স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। ধর্ষিতা শিশুর পিতা বলেন, সরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তা থাকা সত্বেও সন্ত্রাসীরা হাসপাতালের ২য় তলায় উঠে আমার মেয়ের সর্বনাশ ঘটিয়েছে। চিহ্নিত ওই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আদৌ সুষ্টু বিচার পাব কিনা জানিনা। কেননা সন্ত্রাসীরা সকালে হাসপাতালের বেডে এসে এ ঘটনায় বাড়াবাড়ি করলে জীবন শেষ করে ফেলা হবে বলে হুমকি দিয়ে যাওয়ার পর মেয়েকে এবং পুরোপুরি সুস্থ না হলেও তাদের ভয়ে স্ত্রীকে ঘরে নিয়ে আসি। উখিয়া হাসপাতালের প্রধান সহকারী ফরিদুল আলম বলেন, সোমবার দিনগত রাতে হাসপাতাল এলাকায় সরকারি দুইজন, আইওএম’র দুইজন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের দুইজন ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসের একজন আনসার-ভিডিপি সদস্য সহ মোট সাত জন নাইট গার্ড কর্মরত ছিল। এত নিরাপত্তার পরও কিভাবে সন্ত্রাসীরা হাসপাতাল থেকে রোগির মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণ ধর্ষণ করল এবং ঘটনার সম্পর্কে নাইট গার্ডরা কাউকে কিছুই জানালো না, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার লোকজন নিন্দনীয় ওই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এধরনের জঘন্য ঘটনার সঙ্গে প্রকৃত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে ভবিষ্যতে আরও এ ধরণের ঘটনা ঘটানোর সাহস পাবে সন্ত্রাসীরা। তারা আরও বলেন, উক্ত হাসপাতালে রোগী, সংশ্লিষ্ট আত্মীয় স্বজন বিশেষ করে মহিলাদের কোন নিরাপত্তা নেই বললে চলে। কিছু ধান্ধাবাজ দলীয় নেতার ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসীরা সর্বদা তাদের উত্যক্ত করে থাকে। এতে নারী-কিশোরীরা বিরক্তবোধ করে নীরবে হাসপাতাল ত্যাগ করে। ওই শিশু ছাত্রীকে উদ্ধার কাজে সহায়তাকারী স্থানীয় নজরুল কাশেম, আক্কাস, খাইরু ও মুজিব সহ কয়েকজন বলেন, ভাগ্য ভালো আমরা দ্রুত খোঁজাখুঁজি করে মেয়েটিকে উদ্ধার করতে পেরেছি। অন্যতায় আরও বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল। কক্সবাজার জেলা নারী-শিশু পাচার ও নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এইচএম এরশাদ ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের দাবী জানিয়েছেন। এদিকে ঐ রাতে জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত ডাক্তার আরিফা মেহের রুমী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন থাকায় হাসপাতালের কোয়াটার ছেড়ে কক্সবাজার থেকে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে ওই শিশুর মা বাদী হয়ে লম্পট গিয়াস উদ্দিনসহ অজ্ঞাত তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে উখিয়া থানায়। লম্পট গিয়াস রাজাপালংয়ের কালু মিস্ত্রির পুত্র। উখিয়া থানার ওসি মো: আবুল খায়ের বলেন, মামলা রেকর্ড হয়েছে। এ ঘটনার আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
×