ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশ ‘রোল মডেল’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে

প্রকাশিত: ০১:০৩, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬

জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশ ‘রোল মডেল’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গীবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যেভাবে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেছে তার নজির পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। তাই আজ আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশ ‘রোল মডেল’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে। তাই সময় এসেছে, জঙ্গীবাদ-মৌলবাদের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়াবার। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সংসদ সদস্য বেগম মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বাল্যবিবাহ আইনের বিরোধীতাকারীদের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা এ নিয়ে অনেক কথা বলছে তাদের গ্রামীণ সামাজিক-পারিবারিক বাস্তবতা নিয়ে কোনই ধারণা নেই। এরা দু-তিনটা এনজিও খুলে পয়সা কামাচ্ছে, কিন্তু এদের সামাজিক কোনই দায়বদ্ধতা নেই। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আমরা মিয়ানমার থেকে স্রোতের মতো রিফিউজি আসতে দিতে পারি না। একদিকে আমাদের মানবতার দিকটা দেখতে হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশে যেন কোন অঘটন না হয় সেদিকটা দেখতে হচ্ছে। জঙ্গী ইস্যুতে মূল প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সন্ত্রাসী হামলাকারীদের শেকড় খুঁজে বের করার ব্যাপারে যে দৃঢ়তা প্রদর্শন করে চলেছে তাতে দেশ ও বহির্বিশ্বে সরকারের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়টিকে সরকার অন্যতম সফলতা হিসেবে বিবেচনা করে। সরকারের আন্তরিকতা এবং পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জঙ্গীবাদ নির্মূলে এ সকল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কারণে বাংলাদেশ আজ নিন্ম আয়ের দেশ হতে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে এবং সমগ্র বিশ্ব বাংলাদেশকে পরবর্তী শীর্ষ এগারো অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। ঠিক এই সময়ে একটি অপশক্তি বাংলাদেশের ওপর জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ছায়া বিস্তার করে চলেছে। জঙ্গীবাদকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান বিশ্বে জঙ্গীবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে জঙ্গীবাদ অন্যতম অন্তরায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গীবাদ দমনে জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে জঙ্গী দমনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর দক্ষ সদস্যগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি রাজনৈতিক সংগঠন ও আলেম সমাজ, শিক্ষক ছাত্র সমাজ, অভিভাবকবৃন্দ, বুদ্ধিজীবি, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন সর্বস্তরের জনগণ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গীবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেছে তার নজির পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। এক সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছে যে, যেসব শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত বা কোনো খোঁজ নেই তাদের ব্যাপারে তথ্য দিতে। এছাড়া ধর্মের নামে যাতে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিস্তার না ঘটে সেজন্য দেশের সকল মসজিদে জুম্মার খুদবায় এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের নির্দেশিত পথ এবং নবী করিমের এ বিষয়ে দেওয়া বক্তব্যগুলো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে। এছাড়া অন্যান্য ধর্মের উপসনালয়েও জঙ্গীবাদবিরোধী জনসচেতনা সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছি। দেশের সকল অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের ছেলে-মেয়েরা কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, বিপথে যাচ্ছে কি না, এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখুন।’ শেখ হাসিনা বলেন, দুঃখ লাগে, অনেক ভালো ঘরের ছেলে, বিত্তবান ঘরের ছেলে যাদের কোন অভাব তাদের পরিবার রাখেনি, দেশে-বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত সেসব ছেলেরা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছে। আগে বলা হতো গরীব ও মাদ্রাসার ছেলেরা এসবে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলেরাও জড়িয়ে পড়ছে। আর এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বেই ঘটছে। কিন্তু জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস দমনে সরকার যা করার তাই করবে। দুয়ার খুলে রোহিঙ্গাদের আসতে দিতে পারি না ॥ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা রিফিউজি যারা এসেছে তাদের যথাসাধ্য সহযোগিতা দিচ্ছি। আমাদের যতটুকু করার করছি। কিন্তু স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমরা দুয়ার খুলে স্রোতেরমত আসতে দিতে পারি না। তবে মায়নমার দূতাবাসকে তার দেশের সরকারের কাছে ম্যাসেজ দিতে বলেছি এমন কোন অবস্থার সৃষ্টি করবেন না, যেন ওখান থেকে রিফ্যুউজি বাংলাদেশে আসে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশে একটা ঘটনা ঘটেছে। যারা মিয়ানমারের ৯ বর্ডার গার্ড পুলিশকে হত্যা করেছে, সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করেছে, তাদের কারণেই এটা হচ্ছে। যারা এই ধরণের ঘটনা ঘটালো তাদের জন্যই হাজার হাজার নারী পুরুষ শিশু কষ্ট পাচ্ছে। তারা তো এরজন্য দায়ী না। তিনি বলেন, যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা বাংলাদেশে আছে কি না আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে। যখনই আমরা পাব ধরে মিয়ানমার পুলিশের হাতে দিয়ে দিব। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে কেউ প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটাবে, আমরা সেটা করতে দেব না। তিনি বলেন, আমরা মিয়ানমারের মিয়ানমারের দূতাবাসকে ডেকে বলেছি তার দেশকে ম্যাসেজটা দিতে এমন কোন অবস্থার সৃষ্টি করবে না, যেন ওখান থেকে রিফ্যুইজি বাংলাদেশে আসে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ব্যবস্থা নিয়েছে। একদিকে মানবতার দিকটা দেখতে হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশে যেন কোন অঘটন না হয় সেদিকটা দেখতে হচ্ছে। পদ্মা সেতুর পর দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর চিন্তা ॥ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বরিশাল অঞ্চলকে যোগোযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য মাত্র তিনটি সেতু চাইছেন। সরকার সেখানে ১০টি সেতু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। পুরো এলাকাকে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তাছাড়া বরিশালবাসী তো কখনো রেললাইন দেখেনি। আমরা সেটিও দেখাবো। পদ্মা সেতু হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এটি হলে এই অঞ্চল রেল যোগাযোগের আওতায়ও আসবে। সরকারি দলের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আমরা পদ্মা সেতু করছি। আগে সেটিই শেষ করে নেই। কেননা এই সেতু নির্মাণ আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। এই সেতুর কাজ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করার কথাও চিন্তা করা হবে। বিএনএফ’র সংসদ সদস্য এ কে আবুল কালাম আজাদের স¤পূরক প্রশ্নের জবাবে কর্ণফুলী নদীর ওপর টানেল নির্মাণের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক দ্রুত ও সহজতর হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন সংসদ নেতা।
×