ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্রাবিড়ভূমে নায়ক হয়ে ওঠার সুযোগ করুণা-পুত্র স্ট্যালিনের

প্রকাশিত: ২০:১১, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬

দ্রাবিড়ভূমে নায়ক হয়ে ওঠার সুযোগ করুণা-পুত্র স্ট্যালিনের

অনলাইন ডেস্ক ॥ ভিত নড়িয়ে দিয়েও আম্মাকে গদি থেকে হঠাতে পারেননি। প্রতিপক্ষে সেই আম্মাই এখন নেই! দ্রাবিড় রাজনীতিতে এ বারে নিজেকে তুলে ধরতে পারবেন মুথুভেল করুণানিধি স্ট্যালিন? জয়ললিতার অন্যতম বিশ্বাসভাজন তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভমের মাথার উপর থেকে আম্মা-হাওয়া কেড়ে নিয়ে রাজ্য-রাজনীতির প্রধান মুখ হয়ে উঠতে পারবেন তিনি? বাবার ছায়ায় চল্লিশ বছর ধরে রাজনীতি করছেন। বাবা করুণানিধি তাঁকেই উত্তরসূরি ঘোষণা করেছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে ডিএমকে-র অঘোষিত মুখ হিসেবে জয়ললিতার ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসালেও তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারেননি। কিন্তু এ বার? পনীরসেলভম বা আম্মার ছায়াসঙ্গী শশিকলার যে সেই ক্যারিশমা নেই, তা সকলেরই জানা। এই অবস্থায় তামিলনাডুর মতো রাজ্যে, যেখানে ব্যক্তি-রাজনীতির দাপট প্রবল, সেখানে নিজেকে নতুন মুখ হিসেবে তুলে ধরাই স্ট্যালিনের এখন সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। ডিএমকে-র এক নেতা বলেন, ‘‘করুণানিধি নিজে স্ট্যালিনকে উত্তরসূরি ঘোষণা করেছেন। ক’দিন ধরেই তিনি অসুস্থ। করুণানিধির বড় ছেলে আলাগিরি এখন ঘন ঘন বাবাকে দেখতে যাচ্ছেন।’’ যার জেরে আলাগিরির দলে ফেরার জল্পনাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন দলের সংগঠনের রাশ হাতে থাকার সুবাদে ডিএমকে-র অন্দরে আলাগিরির থেকে স্ট্যালিনের নিয়ন্ত্রণ বরাবরই বেশি। সোমবার রাতে জয়ার মৃত্যুর খবর ঘোষণার পরেই স্ট্যালিন আম্মার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বলেছেন, ‘‘এ বছর মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণের দিন আমাকে অনেক পিছনে বসতে দেওয়া হয়েছিল। পরে সেটি জেনে ক্ষমা চেয়েছিলেন জয়ললিতা। বলেছিলেন, আপনি আসবেন জানলে আগেভাগে বিশেষ ব্যবস্থা করতাম। এর থেকেই বোঝা যায়, তিনি কতটা উদার।’’ যদিও রাজনীতির ময়দানে করুণানিধি বা জয়ললিতা— একে অন্যকে কখনওই এই উদারতা দেখাননি। বরং পরস্পরকে লোকসমক্ষে যতটা সম্ভব অপদস্থ করার চেষ্টা করেছেন। ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে করুণানিধির পুলিশ গ্রেফতার করেছিল জয়ললিতাকে। ২০০১-এর জুনের মধ্যরাতে বৃদ্ধ করুণানিধিকে পুলিশ দিয়ে পাঁজাকোলা তুলে নিয়ে গিয়ে ‘বদলা’ নিয়েছিলেন জয়া। ডিএমকে-র শীর্ষ সূত্রের মতে, গত বিধানসভা ভোটে জয়াকে হারাতে না পারলেও এডিএমকে-তে ভাঙনের চেষ্টা করেছিলেন স্ট্যালিন। সে সময় ন’মাস ধরে ‘নামুক্কু নামে’ (আমরা আমাদের জন্য) বলে একটি প্রচার শুরু করেছিলেন তিনি। ভোট কিনতে তামিল রাজনীতিতে বিনামূল্যের জিনিস দেওয়াকে অন্য মাত্রা দিয়েছিলেন জয়া। তা নিয়ে তাঁর সঙ্গে করুণানিধির টক্করের একেবারে উল্টো পথে হেঁটে দ্রাবিড়-আবেগ উস্কে দেওয়া শুরু করেছিলেন স্ট্যালিন। অনেকেই বলেন, সেই কাজে অনেকটা সফলও হয়েছিলেন তিনি। আম্মা-হীন তামিল রাজনীতিতে ফের সেই দ্রাবিড়-আবেগ উস্কে দিয়ে স্ট্যালিন কতটা সফল হবেন, সেটাই দেখার। এটা ঠিক, এডিএমকে এখন আম্মা-আবেগ পুঁজি করে লড়াই চালাবে। কিন্তু আবেগের আয়ু তো বেশিদিন নয়। তার উপর দলে প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এই দুই ‘ফ্যাক্টর’কে কাজে লাগিয়েই নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ স্ট্যালিনের সামনে। সংগঠনের রাশ হাতে থাকার সুবাদে দলের প্রতিটি বাঁক তাঁর চেনা। এ সব কাজে লাগিয়ে যত সফল হবেন, ততই দ্রাবিড়-ভূমির নতুন নায়ক হয়ে উঠতে পারবেন তিনি। মুথুভেল করুণানিধি স্ট্যালিন। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×