আয়ারল্যান্ডের সেক্যুলার তরুণরা গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারা এ নিয়ে তাদের ক্যাথলিক অতীতের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। তারা সিটিজেনস এ্যাসেম্বলি নামে একটি সংগঠন দাঁড় করিয়েছে। আইরিশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী নিয়ে বিতর্কের জন্য সংগঠনটি আগামী বছর প্রতিমাসে একবার বৈঠকে মিলিত হবে।
অষ্টম সংশোধনীতে গর্ভপাতকে অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে অষ্টম সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল করার পক্ষে গণভোট হওয়া উচিত কি উচিত নয় এবং বাতিল করা হলে এই আইনের পরিবর্তে কি ব্যবস্থা থাকবে সেটার নিষ্পত্তি করা। উল্লেখ্য, এই গর্ভপাত ইস্যু নিয়ে আইরিশদের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সবচেয়ে বেশি বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে।
সিটিজেনস এ্যাসেম্বলি এমন এক আয়ারল্যান্ড চায় যা হবে ১৯৮০ এর দশকের আয়ারল্যান্ড থেকে ভিন্ন। সে সময় ক্যাথলিকপ্রধান এই দেশটির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার জন্য অষ্টম সংশোধনীর পক্ষে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে দেশটি ধীরে ধীরে বদলে গেছে। ক্রমবর্ধমান সেক্যুলার জনগোষ্ঠী বিশেষত তরুণ প্রজন্ম আয়ারল্যান্ডকে রক্ষণশীল অতীত থেকে অধিকতর প্রগতিশীল ভবিষ্যতের দিকে ঠেলছে। ২০১৫ সালে আয়ারল্যান্ড গির্জার অবস্থানকে অগ্রাহ্য করে জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সমলিঙ্গের বিয়ে অনুমোদন করে। এ ব্যাপারে আয়ারল্যান্ড হয় বিশ্বের প্রথম দেশ। জনরায়ে সমলিঙ্গ বিয়ে যাতে পাস হয় তা নিশ্চিত করতে তরুণরা বিশেষভাবে সম্পৃক্ত হয় এবং জনমত সংগঠিত করে। ব্যাপারটা একটা রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ নেয়।
এখন সেই আন্দোলনের সামনে নতুন ইস্যু এসে হাজির হয়েছে। এর মাধ্যমে আইরিশ উদারপন্থী ভাবধারা নতুন করে পুরনো ও অধিকতর ক্যাথলিক জীবনধারার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে। গর্ভপাত নিষিদ্ধ আইন বাতিলের উদ্যোগটা সম্ভবত এই প্রজন্মের সবচেয়ে জটিল, কঠিন ও বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে যাচ্ছে।
আইরিশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীতে ভ্রƒণের বেঁচে থাকার সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে এবং মায়ের প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা আছে এটা সপ্রমাণিত হলে শুধু এ ধরনের অতি বিরল পরিস্থিতিতেই গর্ভপাত করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। ইউরোপের ইতিহাসে অনন্য এই আইনটির আইনগত বৈধতা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন।
গত জুন মাসে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিটি আয়ারল্যান্ডের এই গর্ভপাত আইন বাতিলের আহ্বান জানায়। তার আগে কমিটি এই মর্মে রুলিং দিয়েছিল যে কোন মহিলার গর্ভের ভ্রƒণের যদি মারাত্মক ধরনের কোন অস্বাভাবিকতা থাকে তাহলে গর্ভপাত নিষিদ্ধ আইনটির কারণে সেই মহিলা হবে বৈষম্য, নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা ও হীন আচরণের শিকার। বাস্তবে এ জাতীয় বিভিন্ন দৃষ্টান্ত দেখে আইরিশ তরুণ সমাজ গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ হয় যার সূত্রপাত হয়েছিল সমলিঙ্গের বিয়ের ইস্যু নিয়ে। এখন সেই আন্দোলনে গতিবেগ সঞ্চারিত হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের শেষদিকে ২০ হাজারেরও বেশি লোক অষ্টম সংশোধনী বাতিলের দাবিতে ডাবলিন নগরীর কেন্দ্রস্থলে মিছিল করেছিল। ইংরেজী ‘রিপিল’ শব্দ লেখা কালো রঙের সুইটশার্ট এখন ডাবলিনের রাস্তায় এক জনপ্রিয় দৃশ্য।
গর্ভপাত ইস্যু নিয়ে আন্দোলন বেগবান হলেও মনে রাখতে হবে যে আয়ারল্যান্ড এখনও একটা ক্যাথলিকপ্রধান দেশ। গির্জার শিক্ষা ও গর্ভপাত সংক্রান্ত নীতিমালা গোটা সমাজ জুড়ে অতি গভীরে ব্যপ্ত। গর্ভপাত ইস্যুটা অনেক বেশি জটিল। সমলিঙ্গের বিয়ের ইস্যুর তুলনায় এটি রাজনৈতিক দিক দিয়ে অনেক কঠিন এক ইস্যু। তবে সেই সঙ্গে এ কথাও স্বীকার না করে উপায় নেই যে এসব আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আয়ারল্যান্ড ক্রমশ গির্জার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসছে।
গণভোট সত্যিই অনুষ্ঠিত হলে সংশোধনী বাতিল করে সে জায়গায় কি ব্যবস্থা করা হবে সে ব্যাপারে ঐকমত্যের অভাব আছে। সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা যায় ৫৫ শতাংশ আইরিশ বলেছে যে সংশোধনী বাতিল করে সে জায়গায় ধর্ষণ ও ভ্রƒণের অতি মারাত্মক অস্বাভাবিকতার মতো ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে গর্ভপাতের সুযোগের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শতকরা মাত্র ১৯ জন বলেছে যে সংশোধনী বাতিল করে সর্বক্ষেত্রে গর্ভপাতের সুযোগ দিতে হবে। যে শব্দমালাই ব্যবহার করা হোক না কেন গণভোটের ফল দেশের জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশকে ক্রুব্ধ ও হতাশ করে তুলতে পারে। সে জন্যই গর্ভপাতের অধিকার ইস্যুতে নির্দলীয় স্টিয়ারিং গ্রুপ হিসেবে কাজ করার জন্য সরকার সিটিজেনস এ্যাসেম্বলি গঠন করেছে।
চলমান ডেস্ক
সূত্র : টাইম