ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানি আয় বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬

রফতানি আয় বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর মেয়াদে অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রফতানি খাতে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। যা গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের রফতানি আয়ের তুলনায় ৮১ কোটি ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বা ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। বছরের ব্যবধানে রফতানি আয় বাড়লেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এদিকে একক মাস হিসেবে নবেম্বরে রফতানি আয় হয়েছে ২৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে মোট ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৭১ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে প্রথম ৫ মাসে ১ হাজার ৪২৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ কম। ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত নবেম্বর মাসে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭০ কোটি ৩০ লাখ ডলারের। এ সময়ে রফতানি আয় হয়েছে ২৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের নবেম্বর মাসের আয়ের তুলনায়ও এ সময়ের আয় ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরের পঞ্চম মাসে সব ধরনের পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছিল ২৭৪ কোটি ৯৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে তৈরি পোশাক খাতের পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ১ হাজার ১১৩ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এ খাতের রফতানি আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ বাড়লেও অর্জিত হয়নি নতুন লক্ষ্যমাত্রা। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর মেয়াদে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রফতানিতে ৫৬৩ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার এবং ওভেন গার্মেন্টস পণ্য রফতানিতে ৫৪৯ কোটি ৮৬ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। এদিকে শুধু গত আগস্টেই তৈরি পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় আসে ২৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলারের। সেপ্টেম্বরে ঈদ-উল-আজহার কারণে বেশ কিছুদিন ছুটি থাকায় রফতানি আয়ে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে গত অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি রফতানি আয় ২৫০ কোটি ১৩ লাখ ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। সদ্য সমাপ্ত নবেম্বর মাসে আসে ২৩১ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির বলেন, সামনের দিনগুলোতে পোশাক রফতানি আরও বাড়বে। বিশেষ করে নতুন সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের বাজার আরও বড় হবে বলে তিনি জানান। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সারা বিশ্বেই বর্তমানে অর্থনীতিতে একটি শ্লথগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চীনে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে। অন্য দেশেও প্রবৃদ্ধি বেশি ইতিবাচক ধারায় নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের সরে আসার সিদ্ধান্ত (ব্রেক্সিট), পাউন্ডের দরপতন সব মিলিয়ে বৈশ্বিক হিসেবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ভাল। রফতানি প্রবৃদ্ধি ভাল অবস্থানে আছে। তবে ‘নন ট্র্যাডিশনাল মার্কেটে’ আমাদের রফতানি বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেন তিনি। অন্য পণ্যের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আয় হয়েছে ১৮ কোটি ৬১ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে পাচ মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। রফতানি আয় এসেছে ৩৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার। এ ছাড়া পাঁচ মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। এই সময়ে আয় এসেছে ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ৭০০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) দেশে মোট রফতানি আয় হয় তিন হাজার ৪২৫ কোটি ডলার।
×