ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দল পারেনি, তবু তামিম ইকবাল সেরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬

দল পারেনি, তবু তামিম ইকবাল সেরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত দুই বছর ধরেই ব্যাটে রানের ফোয়ারা। ধারাবাহিকতার উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সেই ব্যাটিং ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন জনপ্রিয় ঘরোয়া ক্রিকেট আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগেও (বিপিএল টি২০)। ১৩ ম্যাচ খেলে এ বাঁহাতি ওপেনার চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে ৪৭৬ রান করেছেন। বিপিএলের এক আসরে আর কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান এত রান করতে পারেননি। সেদিক থেকে তো অবশ্যই, আবার চলতি আসরেও সবাইকে ছাড়িয়ে তামিম। সর্বশেষ মঙ্গলবার এলিমিনেটর ম্যাচেও ৪৬ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে ১ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। সবমিলিয়ে বিপিএলে সর্বাধিক ১২ অর্ধশতকের মালিক তিনি। এবারই তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬ হাফসেঞ্চুরি। এক আসরে যা সর্বাধিক অর্ধশতকের রেকর্ড। এরপরও তার দল চিটাগাং এলিমিনেটর ম্যাচ থেকেই ছিটকে গেছে। দল সেরা হতে না পারলেও তামিম সেরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি ঘরোয়া আসরেও দেশসেরা তামিম। গত দুই বছর ধরে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন তামিম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরমেটেই রান মেশিনে পরিণত হয়েছেন তামিম। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত তামিম তিন ফরমেট (ওয়ানডে, টেস্ট ও টি২০) মিলিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ২০৯৪ রান করেছেন ৪৭ ম্যাচের ৫২ ইনিংসে ৪৪.৫৫ গড়ে। আছে ৬টি সেঞ্চুরি ও ৯টি হাফসেঞ্চুরি। এরমধ্যে ৭ টেস্টে ৫৫.০৯ গড়ে ২ সেঞ্চুরি ও ২ হাফসেঞ্চুরিসহ তিনি করেন দেশের পক্ষে সর্বাধিক ৬০৬ রান। ওয়ানডে ফরমেটে রান করার দিক থেকে তার ধারে কাছেও নেই অন্য কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান। তামিম ২৪ ওয়ানডেতে ৪৭.০৯ গড়ে ৩ শতক ও ৬ অর্ধশতকসহ করেছেন ১০৩৬ রান। অবশ্য টি২০ ক্রিকেটে রান করার দিক থেকে তামিমকে ছাড়িয়ে গেছেন তরুণ সাব্বির রহমান। এ ফরমেটে তামিম অবশ্য সাব্বিরের (২১ ম্যাচ) চেয়ে ৫ ম্যাচ কম খেলেছেন। ১৬ ম্যাচে ৩২.২৮ গড়ে ৪৫২ রান করেছেন তামিম একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন ধারাবাহিকতা দেখান তামিম এবার বিপিএলেও একাই দলকে টেনেছেন ধারাবাহিকভাবে রান করে। শুরুটাই করেছিলেন অর্ধশতক হাঁকিয়ে। তবে মাঝে কিছুদিন ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছিল চিটাগাং অধিনায়কের। দলও হারতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেখান থেকে আবারও নিজেকে ফিরে পাওয়া তামিম দলকে জয়ের ধারাবাহিকতায় ফেরান। করেন টানা তিন হাফসেঞ্চুরি। আর এর মাধ্যমে চলতি আসরের সর্বাধিক রানের মালিক হয়ে যান। লীগ পর্বের শেষ ম্যাচে অবশ্য শূন্য রানে ফিরে গেছেন। সেটি ছিল তার বিপিএল ক্যারিয়ারেই দ্বিতীয় শূন্য রানে আউট হওয়া। এলিমিনেটর ম্যাচে সবাই প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে ছিল ক্রিস গেইলের দিকে। ঝড়ও তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। গেইল ফিরে যাওয়ার পর বাকি ব্যাটসম্যানরা হয়েছেন চরমভাবে ব্যর্থ। কিন্তু তামিম ঠিকই ছিলেন। এদিনও ৪৬ বলে ৬ চারে ৫১ রানের একটি দারুণ ইনিংস খেলেন। ফলে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে ১ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়ে যান তিনি। তার ওপরে মুশফিকুর রহীম ৪৬ ম্যাচে ১১৭২, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৪৯ ম্যাচে ১০৬১ রান করে। কিন্তু মাত্র ৩৪ ম্যাচ খেলে বিপিএলে দ্রুততম এক হাজার রানের মালিক হয়ে গেছেন তামিম। তার রান এখন ৩৪.২০ গড়ে ১০২৬। আছে ১২টি অর্ধশতক। আর কোন ব্যাটসম্যান এত অর্ধশতক হাঁকাতে পারেননি বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে। দ্বিতীয় সর্বাধিক ৭টি করে অর্ধশতক আছে মুশফিক, আহমেদ শেহজাদ, ব্র্যাড হজ ও মারলন স্যামুয়েলসের। সবচেয়ে বেশি চারের মারও হাঁকিয়েছেন তামিম। তিনি সবমিলিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ১০৪টি। আর কোন ব্যাটসম্যান ১০০ বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেননি। এবারের আসরে তিনি ১৩ ম্যাচে ৪৩.২৭ গড়ে ৬ হাফসেঞ্চুরিসহ করেছেন ৪৭৬ রান। এক আসরে এর আগে ৬ অর্ধশতক হাঁকানোর কৃতিত্ব আছে শুধু শামসুর রহমান শুভর। তিনি ২০১৩ সালে বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ওই কীর্তি গড়েছিলেন। এবার তাকে ছুঁয়েছেন তামিম। তবে দেশের কোন ক্রিকেটারকে বিপিএলের এক আসরে রান করার দিক থেকে ছাড়িয়ে সবার ওপরে। চলতি আসরে খুলনা টাইটান্সের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১২ ম্যাচে ৩৬৯ রান করে দ্বিতীয়। এর আগে এক আসরে সর্বাধিক রান করার দিক থেকে বাংলাদেশের মুশফিকই ছিলেন সবার ওপরে। তিনি ২০১৩ বিপিএলে করেছিলেন ১২ ম্যাচে ৪০.০০ গড়ে ৪৪০ রান। তবে এক আসরে সর্বাধিক রান করার দিক থেকে সবার ওপরে পাক ওপেনার আহমেদ শেহজাদ। তিনি ২০১২ সালের প্রথম আসরে ১২ ম্যাচে ৪৮.৬০ গড়ে করেছিলেন ৪৮৬ রান। তবে আগের তিন আসরের তুলনায় এবার তামিম ব্যাট হাতে অনেক বেশি সফল হয়েছেন। ২০১২ সালে ২ ম্যাচে ৮ রান, ২০১৩ বিপিএলে ১০ ম্যাচে ২৪৪ রান এবং ২০১৫ বিপিএলে ৯ ম্যাচে ২৯৮ রান করা তামিম নিজেকেও ছাড়িয়েছেন, আবার দেশের অন্যদেরও ছাড়িয়েছেন এক আসরের নৈপুণ্যে।
×