ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদাকে এরশাদ

এতিমদের টাকা আত্মসাত করে কিভাবে চেহারা দেখান?

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬

এতিমদের টাকা আত্মসাত করে কিভাবে চেহারা দেখান?

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, এতিমদের টাকা আত্মসাত করে কিভাবে রাজনীতি করেন, কিভাবে মানুষকে চেহারা দেখান? যদি কোন মানুষ নির্লজ্জ হয় তাহলেই তার পক্ষে এমন অপকর্ম করে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে ১৯৮২ সালে তৎকালীন সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ অসাংবিধানিক ছিল না বলেও তিনি দাবি করেন। যদিও রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিত এরশাদ। ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তার সরকারের পতন হয়েছিল। এরশাদ বলেন, অনেকে বলে আমি অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় ছিলাম। এটা সত্য নয়। রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার সাহেব রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে ইচ্ছুক ছিলেন না। তাই তিনি আমাকে ক্ষমতা দেননি। দিয়েছিলেন সামরিক বাহিনীকে। ওই সময় আমি সিনিয়র ছিলাম, সামরিক বাহিনীর প্রধান ছিলাম। সে হিসেবে তিনি আমার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। মনে রাখতে হবে, ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতা হস্তান্তর এক নয়। তিনি বলেন, সংবিধান না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না, গণতন্ত্র না থাকলে সংবিধান থাকে না। আমি জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চাইনি। সংবিধান ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমাকে আসতে হয়েছিল। ওই সময় সারাদেশে অরাজকতা, সেনাবাহিনীতে ১৯ বার ক্যু হয়েছিল। মন্ত্রীর বাড়িতে হত্যা মামলার আসামির আশ্রয়সহ নানা ঘটনায় অসহায় হয়ে পড়েছিলেন সাত্তার সাহেব। সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদ আরও বলেন, ক্ষমতায় থাকতে যারা আমার পদত্যাগ দাবি করেছিলেন, কিভাবে পদত্যাগ করব, কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করব তার কোন রূপরেখা তারা দেননি। আমিই বিচারপতি শাহাবুদ্দিনকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করেছিলাম। তাকে শপথও করিয়েছিলাম আমি। তারপর তার কাছে সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম। কিন্তু তিনি বেইমানী করেছিলেন। আমাকে জেলে পাঠিয়েছিলেন। আমার দলের কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করেছিলেন। আমাদের নির্বাচন করতে দিতে চাননি। খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, পত্রিকায় দেখলাম একজন বলেছেন, বাকশাল আর স্বৈরাচার মিলে দেশকে ধ্বংস করছে। আপনি ক্ষমতায় গিয়ে ১৫ জন কৃষককে মেরেছিলেন। তাদের অপরাধ, তারা সার চেয়েছিল। কানসাটে মানুষ মেরেছেন, কারণ তারা বিদ্যুত চেয়েছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে ২৯ জন মানুষ মেরে ফেলেছেন। শুধু তাই নয়, আপনি এতিমদের টাকাও আত্মসাত করেছেন। বক্তব্যের এ পর্যায়ে দৃশ্যত উষ্মা প্রকাশ করে এরশাদ বলেন, আর এখন বলছেন স্বৈরাচার আর বাকশাল দেশ ধ্বংস করছে। লজ্জা করে না? যারা এতিমদের টাকা আত্মসাত করে তারা রাজনীতি করে কী করে? মানুষের দেখার জন্য, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। যারা বাস জ্বালিয়ে মানুষ মারে তারা রাজনীতি করে কী করে? বছরের পর বছর ধরে যারা লন্ডনে থাকছে তাদের টাকা কোথা থেকে আসে? আবার প্রধানমন্ত্রী হতে চান? আল্লাহ দুনিয়াতেও কিছু বিচার করেন। আগামী ১ জানুয়ারি দলের মহাসমাবেশ সফল করতে কর্মী-সমর্থকদের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, মনে রেখ, আমরা জনগণের হৃদয়ে আছি। মানুষ পরিবর্তন চায় এবং সেই পরিবর্তন আমরা তাদের দিতে পারি। কিন্তু জনগণের কাছে তোমাদের যেতে হবে। সামনের মহাসমাবেশ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পরীক্ষা। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সুনীল শুভরায়, উপদেষ্টাম-লীর সদস্য এ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর সিকদার লোটন প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে এরশাদ আরও বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায় সম্পর্কে আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম আপনিও মায়ের জাতি। নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে। আপনি কথা বলুন। আমি জাতিসংঘের কাছে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে আহ্বান করব গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন বন্ধ করতে। বাল্যবিবাহ বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সুস্থ মা ও সন্তানের জন্য বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে। উন্নত জাতি গঠনে শিশুদের বিবাহ রোধ করার কোন বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি। আমার হাতে রক্তের দাগ নেই- এ কথা উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, আমি নির্দোষ। ক্ষমতায় থাকতে কোন অপকর্ম করিনি। মানুষ হত্যা করিনি। আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই, সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও জনগণের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব। ভয়ের কোন কারণ নেই। ১ জানুয়ারি শক্তি প্রদর্শনের দিন এবং ফাইনাল পরীক্ষা। আমার একটাই কথা, তোমাদের মিলেমিশে কাজ করতে হবে। সভায় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, নুর-ই- হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ভাইস চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল, নুরুল ইসলাম নুরু, জিয়াউল হক মৃধা এমপি, এমএ তালহা, আমানত হোসেন আমানত, জহিরুল ইসলাম জহির, সরদার শাহাজাহান প্রমুখ।
×