ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাতিরঝিল লেকে ওয়াটার ট্যাক্সি নামছে ১৬ ডিসেম্বর

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬

হাতিরঝিল লেকে ওয়াটার ট্যাক্সি নামছে ১৬ ডিসেম্বর

মশিউর রহমান খান ॥ আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর ফুসফুস খ্যাত হাতিরঝিল লেকে নামছে ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’। হাতিরঝিলে সড়ক পথের পাশপাশি জলপথে যাত্রী সাধারণের সহজে চলাচল নিশ্চিত করতে ও বিনোদনের অন্যতম স্থান হিসেবে হাতিরঝিলকে পরিণত করতে এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান বজলুল করিম চৌধুরী জনকণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সূত্র জানায়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এ ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিসের উদ্বোধন করবেন। ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস চালু করলেও হাতিরঝিল লেকের পানি এখনও পরিষ্কার করা হয়নি। এ নিয়ে কেউ কেউ সার্ভিসটি চালু ও স্থায়িত্ব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে দুই প্রান্তের নির্ধারিত স্থান থেকে ৩টি করে মোট ৬টি ওয়াটার ট্যাক্সি চালানো হবে। প্রাথমিকভাবে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর যাত্রী প্রাপ্তিসাপেক্ষে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। পরবর্তীতে যাত্রী বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে প্রতিটি ট্রিপের সময় কমানো হতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে সম্পূর্ণ বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় সার্ভিসটি পরিচালনা করা হবে। ওয়াটার ট্যাক্সিতে চালকসহ একবারে সর্বোচ্চ ৩৫ জন মানুষ উঠতে পারবেন। তবে ট্যাক্সিতে যাত্রীর জন্য ৩০টি আসন রয়েছে। এ সার্ভিসের অর্জিত আয় হাতিরঝিলের সৌন্দর্যবর্ধনের পাশপাশি বিদ্যুত, পানি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যয় করা হবে বলে জানা গেছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এসব ট্যাক্সিতে চড়তে বাড্ডা লিংক রোডের পথে ভাড়া হবে ২৫ টাকা, রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত ৩০টাকা। প্রাথমিকভাবে তিন মাস এই নিয়মে পরিচালিত হবে। পরে তা যাত্রী ও আয় ব্যয়ের উপর নির্ভর করে কমবেশি হতে পারে। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ২৫ মিনিট। রাস্তায় কোন প্রকার স্ট্যান্ড না থাকায় স্বাচ্ছন্দ্যেই যাত্রীরা চলাচল করতে পারবেন। এটি চালু হলে বাড্ডা, গুলশান, রামপুরা, খিলগাঁওসহ নগরীর পূর্বাংশের মানুষ কাওরান বাজার, মগবাজার, দিলু রোড, ইস্কাটন, বাংলামোটর, তেজগাঁও এলাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। রাজউক সূত্র জানায়, এ সার্ভিসটি চালু হলে হাতিরঝিলের একমাথা থেকে অন্য মাথায় যেতে কোন প্রকার ট্রাফিক জ্যামের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। এতে করে যাত্রীদের কষ্ট লাঘবের পাশপাশি মূল্যবান কর্মঘণ্টা দুই-ই বাঁচবে। হাতিরঝিলের ২ প্রান্তে সার্ভিসটি চালুর জন্য ইতোমধ্যেই লিজ নেয়া প্রতিষ্ঠান ২টি যাত্রীস্ট্যান্ড তৈরি করেছে। এসব স্ট্যান্ডে ছোট আকৃতির স্ন্যাক্স দোকান থাকবে। এতে যাত্রীদের বিশ্রামের পাশপাশি চা পানের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানা গেছে। রাজউক সূত্র জানায়, বেগুনবাড়ী মোড় থেকে দুটি রুটে এ সার্ভিসটি চালু করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে বেগুনবাড়ী মোড় থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত ট্যাক্সি সার্ভিস চালু করা হবে। এজন্য বেগুনবাড়ী অংশে ও রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় দুটি ট্যাক্সি স্ট্যান্ড নির্মাণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে হাতিরঝিলের গুলশান এলাকায় নতুন দুটি ব্রিজ তৈরির পর গুলশান লেক হয়ে বারিধারা ও বনানী লেক পর্যন্ত নতুন রোড চালু করা হবে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক জামাল আখতার। তিনি জানান, প্রতিটি ট্যাক্সিতে ৪০ হর্স পাওয়ারে ইঞ্জিন লাগানো হবে। শক্তি থাকা সত্ত্বেও বেশি গতিতে চললে হাতিরঝিলের পাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এসব বিবেচনায় ওয়াটার ট্যাক্সির গতি সীমিত রাখা হবে। সার্ভিসটি রাজধানীর সম্পূর্ণ নতুন ও ব্যতিক্রমী একটি উদ্যোগ। তবে এফডিসি মোড় থেকে গুলশান লেক হয়ে বারিধারা পর্যন্ত এ সেবা পৌঁছে দিতে হলে লেকের ওপর দিয়ে চলা বাড্ডা লিংক রোড ও গুলশান-বারিধারা সড়কে দুটি ব্রিজ করতে হবে। এরপর ঐ রুটেও এটি চালু করা হবে। রাজউক সূত্র জানায়, সার্ভিসটিতে নগরবাসীর সাড়া পেলে এ ট্যাক্সি সার্ভিস পরে গুলশান লেক হয়ে বারিধারাতেও সম্প্রসারিত করা হবে। সার্ভিসটির চালু করতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে চারটি ওয়াটার ট্যাক্সি। আরও দুটি ওয়াটার ট্যাক্সি আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই পৌঁছানোর কথা রয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা শমসের আলী সার্ভিস সম্পর্কে জনকণ্ঠকে বলেন, এই ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস চালু হলেও সড়কপথের পাশপাশি জলপথেও আমরা যাতায়াত করতে পারব। তবে প্রথমেই লেকের দুর্গন্ধযুক্ত পানি পরিষ্কারের ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় কৌতূহলবশত মানুষ প্রথম প্রথম চলাচল করলেও পরবর্তীতে পানিতে দুর্গন্ধ থাকায় সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই এই পানির ওপর দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করাটা কঠিন হবে। এজন্য আগে পানি পরিষ্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রকল্প সূত্র জানায়, মেসার্স ওয়াহিদ মিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান আগামী ২০ বছর এই ওয়াটার ট্যাক্সি সেবা সার্ভিস পরিচালনা করবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) এম বজলুল করিম ভুইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, হাতিরঝিলকে রাজধানীর নাগরিকদের বিনোদনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত করতে লেকে ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস চালু করা হচ্ছে। এছাড়া এমপি শিয়েটারসহ নানা উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এ সার্ভিসটির শুভ উদ্বোধন করবেন।
×