ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একনেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬

একনেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনুমোদন পেল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যয়ের প্রকল্প ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৫৬ বছর অন্ধকারে থাকা পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ সংক্রান্ত স্বপ্নের প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে আলোর মুখ দেখল। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের মধ্যে এ বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাবে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পে অনুমোদন দেয়া হয়। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সভায় ১ লাখ ৫২ হাজার ৭১২ কোটি টাকার মোট ১২টি প্রকল্পে অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, একনেকের একক সভায় মোট দেড় লাখ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেশের ইতিহাসে প্রথম। এমনকি এটি দেশে চলমান বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) জন্য বরাদ্দ ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার চাইতেও বেশি। এটি বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতির সক্ষমতাকে নির্দেশ করে। মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমাতে হবে। তাই বাতাস, সৌর ও পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে খরচ বেশি হলেও পরিচালন খরচ তুলনামূলক কম। তিনি বলেন, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। বর্তমানে বিশ্বের ৩১টি দেশে ৬৭টি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র সচল রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের সংখ্যা হবে ১৬৮টি। রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রটি পাকিস্তান আমলেই হওয়ার কথা ছিল। পাকিস্তানে বর্তমানে চারটি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে রাশিয়া। বাকি ২২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা দেবে সরকার। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। গত ২৬ জুলাই রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মধ্যে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আট বছরে এ অর্থ পাওয়া যাবে। আর পরিশোধ করতে হবে ২০ বছরে। তবে গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যাবে ১০ বছর । রাশিয়ার দেয়া ঋণের সুদের হার হচ্ছে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর সঙ্গে লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেট (লাইবর) যুক্ত হবে। তবে তা কোনভাবেই ৪ শতাংশের বেশি হবে না। অনুমোদিত অন্য ১১ প্রকল্প ॥ একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো- ২ হাজার ১০৮ কোটি টাকার স্কিলস ফর এ্যামপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম প্রকল্প; ৩৭৬ কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো ও গবেষণা সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প; ২১৬ কোটি টাকার জাতীয় ডাইজেস্টিভ ডিজিজেস রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প। এছাড়া অনুমোদেন পেয়েছে ২০ হাজার ৫০১ কোটি টাকার ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, ১ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ; ১ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকার বাংলাদেশ (ভেড়ামারা)-ভারত (বহরমপুর) বিদ্যমান গ্রিড আন্তঃসংযোগ ক্ষমতা বর্ধিতকরণ (৫০০ মেগাওয়াট) প্রকল্প। এর বাইরে ৭৭৬ কোটি টাকার আনোয়ারা-ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্প; ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ; ৭৩২ কোটি টাকার সমগ্র দেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ; ৬১৯ কোটি টাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং ৭১৬ কোটি টাকার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বন্যা ও জলাবদ্ধতা ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাসমূহের উন্নয়ন এবং নালা, প্রতিরোধ দেয়াল, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ প্রকল্পও সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
×