ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অবাঞ্ছিত উপদ্রব

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬

অবাঞ্ছিত উপদ্রব

জন্মসূত্রে কারও জীবনধারা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়লে সেজন্য তাকে দোষ দেয়া যায় না। কিন্তু কর্মসূত্রে যারা নিজেদের পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে তারা কিভাবে পাবে মানুষের সহানুভূতি? হিজড়ারা এখনও আমাদের দেশ ও সমাজে মানুষ হিসেবে যথাযথ মর্যাদা পায়নি। বরং তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা হয়। তাদের উপার্জনের রাস্তা তাই সহজ নয়। বাংলাদেশে ২০১৩ সালে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় হিজড়া সম্প্রদায়। ফলাফল হিসেবে অনগ্রসর এ সম্প্রদায় শিক্ষা, কর্মসংস্থান, মত প্রকাশ, ভোটাধিকার ও পাসপোর্টে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে নিজেদের পরিচয় লেখার সুযোগ এবং মসজিদে-মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি পায়। এছাড়া অভাবগ্রস্তদের ক্ষেত্রে সরকারী সাহায্য লাভের অধিকার লাভ করে। আইনের আশ্রয় ও নির্যাতন থেকে মুক্তির অধিকার এবং মৃত্যুর পর যার যার ধর্ম অনুযায়ী সৎকারের সুযোগ পায়। স্বাবলম্বী হয়ে দেশীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়। তবে হিজড়াদের পুনর্বাসনে সরকারের পাশাপাশি পরিবার, সমাজ ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে হিজড়াদেরও নিজেদের আচরণ পরিবর্তন করে যুগোপযোগী হয়ে ওঠার আহ্বান জানানো হয়। বাস্তবতা হলো সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও সমাজে এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের নিজেদের ভেতরই শুভবোধের সবিশেষ প্রতিফলন ঘটেনি। দেশে হিজড়াদের জন্য বিশেষ বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা এখনও সম্ভব হয়নি। কিন্তু তাই বলে তারা রাজধানীতে নাগরিক বিড়ম্বনার কারণ হবে, অগ্রহণযোগ্য অবাঞ্ছিত আচরণ করবে এটাও মেনে নেয়া যায় না। রাজধানীতে চলতি পথে হিজড়ারা পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীদের কাছ থেকে জোর করে অর্থ আদায় করে থাকেÑ এ অভিযোগ অনেক পুরনো। সম্প্রতি তাদের আচরণ লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে। হিজড়াদের টাকা তোলা নতুন কিছু নয়। আগে মানুষ যা দিত তা নিয়েই খুশি থাকত হিজড়ারা। কিন্তু ইদানীং তাদের আচরণ বদলে গেছে। অনেকটা বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানপাট যেখানে-সেখানে টাকার জন্য মানুষকে নাজেহাল করছে তারা। তবে বিশেষ দুশ্চিন্তার বিষয় হলো রাজধানীতে অনেক ‘নকল’ হিজড়া আছে, যাদের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিনা পরিশ্রমে অর্থ উপার্জন করা। এদের থামাতে হলে প্রশাসনের সক্রিয়তার বিকল্প নেই। ভাগবাটোয়ারা ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঘটছে খুনোখুনি। কেউ কেউ আবার কোটি কোটি টাকার মালিক। রাজধানীতে তাদের রয়েছে বাড়ি-গাড়িও। বাইরে জীর্ণদশা হলেও গোপনে তারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০০৪ সালে একটি জরিপ করেছিল। ওই জরিপে হিজড়াদের সংখ্যা ১৫ হাজার বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে হিজড়াদের দাবি, শুধু ঢাকা শহরেই কমপক্ষে ৩০ হাজার হিজড়া আছে। হিজড়া জনগোষ্ঠী জীবনমান উন্নয়নে তাদের আর্থ-সামাজিক প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রশিক্ষণোত্তর সহায়তা প্রদান, চাকরিতে নিযুক্তি, বয়স্কভাতা প্রদান, শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে এ কর্মসূচীতে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৭২ হাজার টাকা সংস্থান রাখা হয়। হিজড়াদের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে সংবাদপত্র টিভি ও অন্যান্য প্রচারমাধ্যমে সামাজিক সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। তবে হিজড়াদের দলবদ্ধ স্বেচ্ছাচারিতা প্রতিরোধে প্রশাসনকে অবশ্যই সক্রিয় হতে হবে।
×