ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানিকগঞ্জে মাসব্যাপী যাত্রানুষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

মানিকগঞ্জে মাসব্যাপী যাত্রানুষ্ঠান

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ মানিকগঞ্জ জেলার মহাদেবপুর বাজার সংলগ্ন খোলা মাঠে মাসব্যাপী যাত্রা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই আয়োজনকে ঘিরে এলাকায় সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। স্থানীয় যাত্রা দর্শকদের মধ্যে বেশ চাঞ্চল্যের পরিবেশ বিরাজ করছে। জানা গেছে গত ২০ নবেম্বর সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে এ আয়োজন শুরু হয়। আয়োজনে যশোরের আনন্দ অপেরার পর এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের জোনাকী অপেরার যাত্রাপালা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যাত্রার নামে প্রায়ই অশালীন-অশ্লীল নৃত্যগীতের অভিযোগ শোনা যায়। অভিনয়ের মান নিয়েও হালে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই যেখানে অবস্থা, তখন মানিকগঞ্জের মহাদেবপুরে কিছু যাত্রাপ্রেমী তরুণদের উদ্যোগে আয়োজিত এই ভিন্নধর্মী যাত্রা প্রদর্শনী একটি ইতিবাচক সাড়া জাগাবে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। এ আয়োজন প্রসঙ্গে স্থানীয় যাত্রা কমিটির সভাপতি খোকন ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক সুবোধ দে বলেন, মানিকগঞ্জে যাত্রাপালার ঐতিহ্য খুবই প্রাচীন। দুই দশক আগেও এই জেলার গ্রামেগঞ্জে শিক্ষামূলক যাত্রা হতো। নানা কারণে এবং প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যাত্রার সেই সুনাম নষ্ট হয়ে গেছে। সেই হারানো ঐতিহ্যকে আমরা আবার ফিরিয়ে আনতে চাই। এই মঞ্চে জোনাকী অপেরার অভিনীত পালাগুলো হচ্ছে : ‘চরিত্রহীন’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘মায়ের চোখে জল’, ‘জেল থেকে বলছি’, ‘আনার কলি’, ‘নিহত গোলাপ’ ও ‘দস্যুরানী ফুলন দেবী’। শনিবার রাতে ফুলন দেবী চরিত্রে অভিনয় করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাধনা দেবী। বিপরীতে বিক্রম সিংহের ভূমিকায় ছিলেন তরুণ যাত্রাশিল্পী খন্দকার শামীম। শিল্পী শামীমের আরেক কৃতিত্ব প্রতিরাতে পালা শুরুর আগে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিজ কণ্ঠে দর্শকদের শোনান। দলের অন্যান্য শিল্পীরা হলেন এম এ সামাদ, সন্তোষ বিশ্বাস, আলম, খোরশেদ আলম, আলম, গীতা রানী, পুষ্প রানী, মালা প্রমুখ। দল পরিচালক লিটন মিয়া। শনিবার যাত্রানুষ্ঠানের আগে যাত্রাশিল্পে বিদ্যমান নানা সঙ্কট নিয়ে যাত্রা প্যান্ডেলে জোনাকী অপেরার উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দে। সভাপতিত্ব করেন দলের মালিক আলহাজ ফারুক সরকার সুজা। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মানিকগঞ্জ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক গোকুল ঘোষ, প্রবীণ যাত্রানট এম এ সামাদ, কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে খন্দকার শামীম এবং যাত্রা পরিচালনা কমিটির পক্ষে আব্বাস আলী। সভাপতির বক্তব্যে ফারুক সরকার সুজা বলেন, আমরা ১০/১৫ লাখ টাকা খরচ করে দল গঠন করি। বেকার শিল্পীদের কর্মসংস্থান করি। অথচ সরকার ও প্রশাসন যাত্রাশিল্পের প্রতি আন্তরিক নন। আমরা চাই শীতকালীন ছাড়াও অন্য সময়ে স্বচ্ছ, সুন্দর পরিবেশে প্রত্যেক জেলায় বেশি বেশি যাত্রানুষ্ঠান হোক। যাত্রার গৌরব ফিরে আসুক। যাত্রাশিল্পীরা অন্যান্য পেশার মানুষের মতো সুখে শান্তিতে বাস করুক। এই আমাদের প্রত্যাশা।
×