ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;ট্রাইব্যুনালের ২৭তম রায়

শরীয়তপুরের পলাতক রাজাকার ইদ্রিস আলীর মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

শরীয়তপুরের পলাতক রাজাকার ইদ্রিস আলীর মৃত্যুদণ্ড

বিকাশ দত্ত ॥ এবার বিজয়ের মাসে যুদ্ধাপরাধীর মামলায় আরও একটি রায় এসেছে। শরীয়তপুরের পলাতক রাজাকার ইদ্রিস আলী সরদারকে ফায়ারিং স্কোয়াডে বা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটা হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ২৭তম রায়। এর আগে আরও ২৬টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে ২৭টি মামলায় ৫৩ জনকে বিভিন্ন দণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ জনের মৃত্যুদ-, একজনের যাবজ্জীবন, একজনের ৯০ বছরের কারাদ- এবং ২৫ জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে পলাতক আছে ২২ জন। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে আরও প্রায় ২০টি মামলা বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারাধীন রয়েছে। আপীল বিভাগে ৭টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এর সাতটি রায়ের মধ্যে ছয়টিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপীল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর দু’পক্ষই রিভিউ আবেদন করেছে। শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপীল নিষ্পত্তিতে পরবর্তী পালা আওয়ামী লীগ থেকে বৃহিষ্কৃত ব্রাক্ষণবাড়িয়ার রাজাকার কমান্ডার মোঃ মোবারক হোসেনের। মোবারক হোসেন ছাড়াও আপীল বিভাগে আরও ১৭ জনের মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জন মৃত্যুদ-ের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করেছে। সোমবার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শরীয়তপুরের পলাতক ইদ্রিস আলী সরদারকে মৃত্যুদ- প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। ফায়ারিং স্কোয়াডে বা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার দ- কার্যকর করতে বলা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের আদেশে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে এ আদেশ প্রদান করেছে। এ সময় ট্রাইব্যুনালে চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুসহ অন্য প্রসিকিউটরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ মামলায় ইদ্রিস আলী ছাড়াও সোলায়মান মোল্লা আসামি ছিলেন, যিনি বিচার চলাকালে চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর মারা যান। তাই এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। রায় ঘোষণার পর পলাতক ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা হলে অথবা তিনি আত্মসমর্পণ করলে বিনামূল্যে সার্টিফাইড কপি প্রদান করতে বলা হয়। তার শাস্তি কার্যকরের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ট্রাইব্যুনাল বলে, আসামিকে গ্রেফতার করা হলে অথবা আত্মসমর্পণ করলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা শূট করে করে মৃত্যুদ- কার্যকর করতে হবে। আর মৃত্যুদ- কার্যকর হলে কারাদ-ের বিষয়টি ওখানেই সমাপ্ত হবে। প্রসিকিউশনপক্ষ সন্তুষ্ট ॥ এ রায়ে প্রসিকিউশনপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করছি। এ রায়ের ফলে শরীয়তপুরের পালংসহ সারাদেশের ভিকটিম, শহীদ পরিবার, বিচারপ্রার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা শান্তি পাবে।
×