ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জাদুঘরে চার পথিকৃৎ শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

জাদুঘরে চার পথিকৃৎ শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তাদের রং-তুলির আঁচড় কিংবা রেখার টানেই অগ্রসর হয়েছে দেশের চারুশিল্প। বাংলাদেশের শিল্পকলা খুঁজে পেয়েছে আপন ঠিকানা। রচিত হয়েছে স্বদেশের শিল্পের উর্বর ভূমি। সেই চার পথিকৃৎ শিল্পীর শিল্পকর্ম মেলে ধরা হয়েছে এক আয়োজনে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসান, এস এম সুলতান ও শিল্পগুরু সফিউদ্দিন আহমেদের শিল্পসম্ভার দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। চার মাস্টার পেইন্টারের কালের সাক্ষ্যবহ কাজগুলো দেখার সুযোগ করে দিয়েছে জাতীয় জাদুঘর। নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে পক্ষকালব্যাপী এ প্রদর্শনীর সূচনা হয় সোমবার। আর কিংবদন্তি এই চার শিল্পীর সৃজিত কালোত্তীর্ণ চিত্রকর্মগুলো অবলোকনের অভিপ্রায়ে প্রথম দিন থেকেই ভিড় জমিয়েছেন শিল্পরসিকরা। ১৭তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদশর্নীকে আরও বর্ণিল রূপ দেয়ার প্রয়াসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ প্রদর্শনী। গ্যালারিতে প্রবেশের পর প্রথমেই নজর পড়ে নবান্ন শীর্ষক জয়নুল আবেদিনের বিশাল ক্যানভাসে। ১৯৭০ সালে শিল্পাচার্যের আঁকা ছবিটি দেয়ালের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায় শিল্পানুরাগী চোখকে। কাগজে কালো কালি, মোম ও জলরংয়ের আশ্রয়ে চিত্রিত চিত্রকর্মটি কয়েকটি অংশের মাধ্যমে বলে যায় গ্রাম বাংলার ঐশ্বর্য থেকে ক্ষয়িষ্ণুতার কথা। ধীরে ধীরে উঠে এসেছে প্রিয় গ্রামের পথ ছেড়ে শহরমুখী হওয়ার দৃশ্যকল্প। বিশাল চিত্রকর্মটির কৃষকের লাঙল টানার দৃশ্য দিয়ে। আছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ ও সেই ধান কাটার ছবি, কাজের অবসরে মনের আনন্দে হুঁকোয় সুখটান দিয়েছে কৃষকের দল, গাঁয়ের পথ ধরে পালকি নিয়ে এগিয়ে চলেছে বেহারার দল কিংবা ঢেঁকিতে ধান ভানছে গ্রাম বাংলার নারীকুল। দৃশ্যের পর দৃশ্য পেরিয়ে হাজির হয়েছে দুর্ভিক্ষের দিন। সেই নিষ্ঠুর বাস্তবতায় আক্রান্ত হয়ে অবশেষে গ্রামবাসী ধাবিত হচ্ছে শহরের পানে। এছাড়াও শিল্পাচার্যের ক্যানভাসে ঠাঁই পেয়েছে সাঁওতাল পরিবার, তরুণ শিকারি, দুই রমণী ও কলসি, শস্য বহনসহ বেশ কিছু শিল্পসম্ভার। গ্যালারির আরেক অংশে আছে শিল্পী এসএম সুলতানের চটের ওপর আঁকা তেল রং আশ্রিত বাংলাদেশের গ্রামীণ চিত্র সিরিজের চিত্রকর্মগুলো। সেসব ছবিতে শিল্পীর কল্পিত চোখে ধরা দিয়েছে সুজলা-সুজলা গ্রাম বাংলার বিশালদেহী মানুষগুলো। অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্যকাব্য আঁকা ছবিগুলো যেন বারবার বলে যায় শেকড়ের কথা ও আদি সমৃদ্ধির বারতা। আছে কামরুল হাসানের কাগজে জল রং কিংবা প্যাস্টেল কালারে চিত্রিত প্রতিকৃতি, পত্রপাঠ, বিবসনা, গ্রাম্যবধূ, মাছ ও জেলে, নারী ও পাখি, স্থানসহ শিল্পরসিকের নয়নজুড়ানো নানা চিত্রকর্ম। আরেক পাশের দেয়ালে দৃশ্যমান হয়েছে সফিউদ্দিন আহমেদের চিত্রিত বন্যার্ত গ্রাম, হলুদ জাল, সূর্যালোকে কুঁড়েঘর, গুণটানা, মাছ ধরার জালসহ বিভিন্ন শিল্পকর্ম। হেমন্তের বিকেলে জাদুঘরের প্রবেশ পথের সামনের লবিতে বসে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, এই চার মাস্টার পেইন্টার না থাকলে আমার মতো শিল্পীর জন্ম হতো না। আর এই চারজনের আমার গুরু হচ্ছেন জয়নুল আবেদিন। শিল্পাচার্যের প্রতি নিজের মোহাবিষ্টতার কথা করে শাহাবুদ্দিন বলেন, বলতে গেলে আমি তাঁর চামচা ছিলাম। তাঁর সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। একদিকে শিল্পের আশ্রয়ে দুর্ভিক্ষের মতো বিশাল কাজ এবং অন্যদিকে দেশের চারুকলা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মতো কঠিন কাজটি করে গেছেন সমান দক্ষতায়। জয়নুলের ছবি আঁকার যে সরলতা তা এক কথায় ডায়নামিক। বিশেষ করে রেখার ওপর এমন নিয়ন্ত্রণ পৃথিবীর খুব শিল্পীই দেখাতে পেরেছেন। এভাবেই বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন ড্রইং কাকে বলে। এসব কারণেই বলতে পারি, জয়নুল না থাকলে এদেশে কোন বড় শিল্পী সৃষ্টি হতো না। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু। তিনি না থাকলে আজকে এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছি সেটা সম্ভব হতো না। আমি ভাগ্যবান যে এই মহান ব্যক্তিত্বদের সাহচর্য পেয়েছিলাম। অন্য তিন পথিকৃৎ শিল্পী প্রসঙ্গে শাহাবুদ্দিন বলেন, এস এম সুলতানের কাজের আকর্ষণীয়তা হচ্ছে পৌরাণিক রহস্যময়তা। তার কাজগুলো যথাযথ সংরক্ষণের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখতে হবে। ইয়াহিয়ার যে ছবিটি কামরুল হাসান এঁকেছিলেন সেটা ছিল পূর্ণাঙ্গ চিত্রকলা। রংয়ের ব্যবহারেও এই শিল্পী অসাধারণ। সফিউদ্দিনের কাজের গভীরতা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। সহজেই শিল্পীর পরিশ্রমটা চোখে পড়ে। তিনি আরও বলেন, এখন বাংলাদেশকে বিশ্বে চেনে চিত্রকলা ও গার্মেন্ট শিল্পের জন্য। এটা একদিনে হয়নি। সৈয়দ জাহাঙ্গীর বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে কয়টি বিষয়ে বাংলাদেশ উৎকর্ষ সাধন করেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চিত্রকলা। এজন্য যে ক’জন গুণী শিল্পীর অবদান রয়েছে তাঁদের মধ্যে জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, এস এম সুলতান ও সফিউদ্দিন আহমেদ অন্যতম। ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, শিল্পকর্ম সংগ্রহ ও প্রদর্শনীর আয়োজন জাতীয় জাদুঘরে ধারাবাহিক কাজ হলেও চারজন প্রয়াত মাস্টার পেইন্টারের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ও একসঙ্গে দেখতে পারার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। প্র্রদর্শনীতে জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসানের ৩২টি করে ৬৪টি চিত্রকর্ম রয়েছে। এস এম সুলতানের ১১টি ও সফিউদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্মের সংখ্যা ১৪টি। সব মিলিয়ে চার মাস্টার পেইন্টারের ৮৯টি শিল্পকর্ম নিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। পক্ষকালব্যাপী চলমান প্রদর্শনীটি শেষ হবে ২১ ডিসেম্বর। শনি থেকে বুধবার পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা এবং শুক্রবার বিকেল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটি। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভেন্যুর উদ্বোধন ॥ বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম আয়োজিত ১৪তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভেন্যুর উদ্বোধন হয়েছে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নিচে প্রদীপ প্রজ্বলনের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর বিদেশী শিল্পীদের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে চলছে দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী। মাসব্যাপী এ প্রদর্শনীর পঞ্চম দিন ছিল সোমবার। এদিন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী বিদেশী শিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী স্থান জাতীয় সংসদ ভবন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন সময়ে বিদেশী শিল্পীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্প করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময়ে ঢাকা সাংস্কৃতিক দলের সদস্যবৃন্দ সমবেত কন্ঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ সঙ্গীত পরিবেশন করে। পরিদর্শন সময়ে বিদেশী শিল্পীদের সফরসঙ্গী ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির একাডেমি কর্মকর্তা, জুরি কমিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দ ও লিয়াজোঁ গাইড। জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নতুন কমিটি ॥ বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। একই সঙ্গে পাঞ্জেরী পাবলিবেশন্সের পরিচালক কামরুল হাসান শায়ক নির্বাহী পরিচালক পদে পুনর্নিবাচিত হয়েছেন। গত ২৭ নবেম্বর সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি ২০১৭ গঠিত হয়। এর আগে ৬ জন পরিচালক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। নবনির্বাচিত পরিচালকসহ মোট ১৮জন পরিচালকের মধ্য থেকে নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া সমিতির সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মেছবাহউদ্দীন আহমদ ও মনিরুল হক, যুগ্ম নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম বাহার এবং পরিচালক (অর্থ) নির্বাচিত হয়েছেন মোস্তফা সেলিম।
×