ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্পীকারের কাছে বিরোধী এমপিদের সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি

প্রধানমন্ত্রীর বিমানে নাশকতার চেষ্টা কিনা তদন্ত চাই

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রধানমন্ত্রীর বিমানে নাশকতার চেষ্টা কিনা তদন্ত চাই

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টায় বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটির নামে নাশকতা চালানোর অপচেষ্টা হয়েছিল কি না, তা খুঁজে বের করতে একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য স্পীকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলের এমপিরা। তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটির পেছনে অন্য কোন গভীর ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা আমাদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। এ ঘটনার দায় বিমানমন্ত্রী এড়িয়ে যেতে পারেন না। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে অনির্ধারিত এ বিতর্কের সূত্রপাত করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। এ বিষয়ে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও বিএনএফের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল। পয়েন্ট অব অর্ডারে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এ দেশের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। অথচ তাঁকে একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিমানে হাঙ্গেরি যেতে হয়। ২০১৫ সালে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা বিমানটি (রাঙ্গা প্রভাত) ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। তারপরও কীভাবে প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য ভিআইপিদের এই ফ্লাইটে উঠানো হলো। এ ঘটনায় নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের দায়ী করা হলো। কিন্তু বিমানমন্ত্রী কোন দায়িত্ব নেবেন না কেন? বিমানমন্ত্রী বলবেন বোর্ডের দায়িত্ব। বোর্ড বলবে পাইলটের দায়িত্ব। পাইলট বলবে আমি তো চালানোর মালিক, এই দায়িত্ব যারা নাট-বল্টু দেখেন তাদের। কিন্তু একবার চিন্তা করুন কত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবকিছু এত হাল্কাভাবে নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৭০০ কোটি টাকা লাপাত্তা হয়ে গেল, কিন্তু আজ পর্যন্ত জানতে পারলাম না কারা জড়িত। যে কোন ঘটনা ঘটলে আমরা একটা তদন্ত কমিটি করি। তদন্ত কমিটির অর্থ হলো ওই ঘটনার ধামাচাপা দেয়া। এর কোন সুষ্ঠু বিচার হয় না। যারা যেখানে দায়ী নয় তাদের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়া হয়, আস্তে আস্তে যাতে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরে যায়। এদিক থেকে জনগণ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেবে। এরপর আরেকটা ঘটনা ঘটবে এটা মানুষ ভুলে যাবে। সংসদে দেয়া বিমানমন্ত্রীর ৩০০ ধারার বিবৃতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, আমরা তাঁর সঙ্গে একমত নই। দায়িত্ব নিতে হবে এবং আমাদের আশ্বস্ত করতে হবে। জাতীয় পার্টির অপর সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনায় বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে ছোট হতে হয়েছে। এ ঘটনায় দেশবাসী হতবাক হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিমানের অসাধু, অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের খামখেয়ালির জন্য এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটছে। ঐ দিন বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে আমার প্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে মহান আল্লাহ রক্ষা করেছেন। এজন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে রাষ্ট্রের জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা উচিত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির পেছনে অন্য কোন গভীর ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। সংবাদমাধ্যমে বেরিয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ সিঙ্গাপুর থেকে ছেড়ে আসা বিমান দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদসহ ২০৬ যাত্রী। সিঙ্গাপুর থেকে উড্ডয়নের পরপরই বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে আগুন ধরে যায়। প্রায় ৫ ঘণ্টা আকাশে কাটানোর পর শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে ফ্লাইটটি। আমি মনে করি বিমানের কতিপয় দুর্নীতিবাজ ও অদক্ষ কর্মকর্তার খামখেয়ালিপনার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। বিএনএফের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিমানে যান্ত্রিক দুর্ঘটনা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার জন্য পূর্বপরিকল্পিত নাশকতা কি না, তা অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। বিমানটি জরুরী অবতরণ না করলে কী হতো, তা দেশবাসীর সামনে দিবালোকের মতো পরিষ্কার। এজন্য প্রয়োজন হলে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের জন্য তিনি স্পীকারের কাছে দাবি জানান। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে বাদলের উদ্বেগ ॥ এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে মিয়ানমার থেকে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাসদের কার্যকরী সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, এ বিষয়টি সমগ্র বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতিগোষ্ঠীর জন্য। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় ধরনের সমস্যার উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আমার নিজস্ব এলাকা চট্টগ্রামের জন্য বিষয়টি আরও অনেক বেশি দুর্ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস্তব সত্য হলো ৫ লাখ রোহিঙ্গা ঢুকে গেছে। এই ৫ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের সমাজে মিশে যাবে। তিনি আরও বলেন, ৭২ থেকে শুরু করে অদ্যাবধি পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আমরা কিছুকে পুশব্যাক করতে পেরেছি কিন্তু অধিকাংশই এখানেই ‘গোঁদের ওপর বিষ ফোঁড়ার’ মতো আমাদের সমাজে রয়ে গেছে। সরকার সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বের কাছে কেন বলতে পারছি না যে, রোহিঙ্গারা একটি ভিন্ন জাত। এরা বাঙালী নয়। রোহিঙ্গারা এক হাজার বছর ধরে আরাকানে আছে। আমরা কেন বলতে পারছি না, ১৯৪৮ সালে যখন ইউনিয়ন অব মিয়ানমার হয় তখনও রোহিঙ্গা ইউনিয়ন মিয়ানমারে যোগ দেয়নি। বিশ্বে এ মুহূর্তে সবচেয়ে নির্যাতিত জাতিগোষ্ঠী হচ্ছে রোহিঙ্গারা উল্লেখ করে এই জাসদ নেতা বলেন, নির্যাতিত জাতিগোষ্ঠীর জন্য কসোভাতে জায়গা হয়েছে, নির্যাতিত জাতিগোষ্ঠীর জন্য ফিলিস্তিনে জায়গা হয়েছে। কিন্তু এ নির্যাতিত জাতিগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক মুরব্বিরা আরাকান বা রাখাইনের অভ্যন্তরে মাত্র ৩০-৪০ বা ৫০ মাইলের একটি নিরাপত্তা অঞ্চল কেন গড়ে তুলছে না? প্রশ্নটি আমাদের সরকারের তরফ থেকে প্রবলভাবে কেন উত্থাপিত হচ্ছে না?
×