ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আজ গণতন্ত্র মুক্তি দিবস

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

আজ গণতন্ত্র মুক্তি দিবস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আজ ৬ ডিসেম্বর, গণতন্ত্র মুক্তি দিবস। স্বৈরাচার পতনের ২৬ বছর পূর্তি আজ। ১৯৯০ সালের এই দিনে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হয় সামরিক স্বৈরশাসক এইচএম এরশাদের। আর এ পতনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের লেবাসে দীর্ঘ সামরিক শাসনের অবসান হয়, মুক্তি পায় কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র। ১৯৮২ সালের এই দিনে জেনারেল জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এইচএম এরশাদ অবৈধ পথে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সামরিক শাসন কায়েম করেন। গুটিকয়েক রাজনৈতিক নেতা নিজেদের দল ছেড়ে ক্ষমতার ভাগ নিতে এরশাদের সঙ্গে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে ছাত্রসমাজ শুরু করে এরশাদবিরোধী আন্দোলন। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছে রাজপথে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দলীয়, বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দলীয় এবং সিপিবি, জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্বে ৫ দলীয় জোট সম্মিলিতভাবে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে প্রাণ দিতে হয় নূর হোসেন, সেলিম, দেলোয়ার, ডাঃ মিলনসহ নাম অজানা অনেক অকুতোভয় মানুষকে। রক্তের সিঁড়ি বেয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। তীব্র হয় গণআন্দোলন, রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। সামরিক শিকলে বন্দী গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হয় ১৯৯০ সালের ১৯ নবেম্বর। ওইদিনই তিনটি জোট ঐক্যবদ্ধভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করে। পতন হয় স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ইতিহাসে আজ এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৯০ সালের এই দিনে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়। তিনি এ মহান দিবস উপলক্ষে গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী সংগ্রামী দেশবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ ’৯০ পরবর্তী দুই দশকে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অবৈধ ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকরা সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরবর্তীকালে অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। তারা জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে। মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে বিকৃত করে। দেশে নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বৈরাচারী শাসন উৎখাত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের ভোট ও মৌলিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা দীর্ঘ সংগ্রাম করি। এ আন্দোলন-সংগ্রামে দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। নূর হোসেন, নূরুল হুদা, বাবুল, ফাত্তাহ, ডাঃ মিলনসহ অগণিত গণতন্ত্রকামী মানুষ আত্মাহুতি দেন। স্বৈরাচারী শাসক গণআন্দোলনের কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় গণতন্ত্র। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর এই স্বতঃপ্রণোদিত ত্যাগ ও অধিকার রক্ষায় আপোসহীনতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি গণতন্ত্র ও অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলনে জীবনোৎসর্গকারী দেশপ্রেমিক শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, বর্তমান সরকার গণতন্ত্র, সংবিধান, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করেছি। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছি। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার কাজ চলছে। কোন ষড়যন্ত্রই আমাদের সত্য ও ন্যায় এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন, গণতন্ত্রের ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করতে দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। গড়ে তুলি জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’। গণতন্ত্র মুক্তি দিবসে এই হোক আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।
×