ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে

আমনের বাম্পার ফলন, ভাল দাম পেয়ে কৃষকও খুশি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

আমনের বাম্পার ফলন, ভাল দাম পেয়ে কৃষকও খুশি

এমদাদুল হক তুহিন ॥ চারদিকে ম-ম গন্ধ। ফসলি মাঠে এখন শেষ মুহূর্তের জন্য ঝিলিক দিচ্ছে আমন। কাটা শেষ হয়েছে অর্ধেকের বেশি জমির ধান। তবে এখনও কোন কোন মাঠে শুইয়ে রাখা হয়েছে ধানের গোছা, শুকানো শেষেই তা যাবে উঠানে। সেখানে মাড়াই শেষে তা উঠবে কৃষকের গোলায়। আবার কারও ধান বিক্রি হচ্ছে মাঠ থেকেই সরাসরি। মাঠে মাঠে কৃষকের মহাব্যস্ত সময় অতিবাহিত হচ্ছে আমনের শেষ সময়। এদিকে সরাদেশে চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ৩৯ হেক্টর বেশি জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। আর এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদফতরের সূত্রমতে, হেক্টর প্রতি ২ দশমিক ৪৪ থেকে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৪৭ লক্ষ মেট্রিক টন আমন উৎপাদনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সে হিসেবে চলতি মৌসুমেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। কৃষক, কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মৌসুমে সরাদেশে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আর ধানের দাম পেয়ে এবার কৃষকও খুশি। জাত ভেদে মণপ্রতি আমনের দাম পড়ছে ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা। অথচ গত মৌসুমে কৃষককে এই আমনই বিক্রি করতে হয়েছে গড়ে ৭০০ টাকায়। সবমিলিয়ে, এবার বাম্পার ফলনে সোনালি ধানের মতো কৃষকের মুখেও দেখা দিয়েছে সোনালি হাসি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে (২০১৬-১৭) সারাদেশে ৫৫ লাখ ৫১ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আবাদ হয়েছে ৫৬ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ৩৯ হেক্টর বেশি জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে ৫৩ লাখ ৮০ হেক্টর জমিতে। বোনা আমনের আবাদ হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের তথ্যানুসারে, সারাদেশে এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ জমির আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এবার হেক্টর প্রতি ২ দশমিক ৪৪ থেকে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৪৭ লক্ষ মেট্রিক টন আমন উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে গত মৌসুমে ৫৫ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার টন। সে হিসেবে এবারও ছাড়িয়ে যাচ্ছে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ হামিদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এবার আমন উৎপাদনে জাতের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা গেছে। আমনের আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক সংখ্যক জমিতে। এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক জমির ধান কাটা হয়েছে। অনুকূল আবহওয়া থাকায় সবমিলিয়ে এবারও আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, মৌসুম শেষে উৎপাদন বাড়বে গত বারের চেয়েও। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ। সারাদেশে এবার ধানের দামও বেশি। বাম্পার ফলন ও ভাল দাম পাওয়ায় সবমিলিয়ে এবার কৃষক মহাখুশি। সম্প্রতি গাজীপুর ও ময়মনসিংহের কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কোন কোন মাঠে শেষ মুহূর্তের মতো কাটা হচ্ছে আমন। কিছুকিছু জমিতে শুইয়ে রাখা আছে কাটা ধান। তবে জেলা দুটিতে ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি জমির ধান কাটা শেষ। শ্রীপুরের এক কৃষক জানান, ধান কাটা প্রায় শেষ। দামও ভাল। দাম পেয়ে তারা সন্তুষ্ট। তবে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের কৃষক মোঃ শহীদুল্লাহ ধানের দামে সন্তুষ্ট নন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, অঞ্চলটিতে ধান কাটা প্রায় শেষ। ফলনও খুব ভাল। তবে ধানের দর কম। ৪৮ কেজি মণে ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। অন্যদিকে উৎপাদন খরচ আরও অনেক বেশি। ফলে উৎপাদন খরচ উঠে আসছে না। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত মোঃ মোস্তফা জানান, এলাকাটিতে আমনের কর্তন প্রায় শেষ হয়েছে। তবে কাটা ধান এখনও মাঠে। কোন কোন কৃষক মাড়াই কাজে ব্যস্ত। তিনি বলেন, এই সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় সব জমির ধান বাড়িতে উঠে আসবে। এবার অন্য যেকোন বারের চেয়ে ফলন ভাল। ধানের দাম প্রাপ্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে ৮০০ টাকা মণে ধান বিক্রি হচ্ছে। একই রকম তথ্য জানান কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার হরশী গ্রামের কৃষক হিমেলও। তিনি বলেন, আমন ধানের কর্তন প্রায় শেষ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাটা ধান শুইয়ে রাখা আছে। এবার অন্য যে কোন বারের চেয়ে ফলন ভাল। জানা গেছে, লালমনিরহাটেও আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ওই এলাকায় কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা মণে। কোন কোন গ্রামে চলছে নবান্নের উৎসব। আর ধানের দাম পেয়ে ওই অঞ্চলের কৃষক খুশি। তথ্যমতে, পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলায়ও আমনের কর্তন শেষ। ধানের হাটগুলোতেও প্রচুর ধান উঠেছে। ধানের দামও চড়া। একই অবস্থা ঝিনাইদহেও। জেলার শৈলকুপা উপজেলার দোহারা গ্রামের তৈয়বুর রহমানের তথ্যমতে, বি আর ৩৩ প্রতি মণ ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তথ্যমতেÑ ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, বগুড়া, রাজশাহীর গ্রামাঞ্চলে গুটি স্বর্ণা ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। গত মৌসুমে প্রতি মণ গুটি স্বর্ণা বিক্রি হয় ৪৮০ থেকে ৬৫০ টাকায়। চিকন চালের ধান বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯২০ টাকায়। আমনের সর্বশেষ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ উইংয়ের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি মৌসুমে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূর্বের তুলনায় বেশি। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে এবার উৎপাদন ভাল হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ২ দশমিক ৪৪ থেকে ২ দশমিক ৪৭ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। সবমিলিয়ে বলা যায়, এবারও বাম্পার ফলন হয়েছে।
×