ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিটিআরসির নেতৃত্বে কমিটি গঠন

ইন্টারনেটে আপত্তিকর কনটেন্ট ফিল্টারিং ও পর্নোগ্রাফি বন্ধের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

ইন্টারনেটে আপত্তিকর কনটেন্ট ফিল্টারিং ও পর্নোগ্রাফি বন্ধের উদ্যোগ

ফিরোজ মান্না ॥ তথ্যপ্রবাহের ‘সুপার হাইওয়ের’ নাম ইন্টারনেট। এই হাইওয়ে দিয়ে ভাল-মন্দ সব ধরনের তথ্য আসা যাওয়া করছে প্রতি মুহূর্তে। কেউ ভালটা গ্রহণ করছে আবার কেউ খারাপটাকে বেছে নিচ্ছে। তবে খারাপ কাজে যারা ব্যবহার করছেন, তাদের একটা মন্তব্যে সমাজে মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যাচ্ছে লঙ্কা কা-। ধ্বংস করে দিচ্ছে ব্যক্তি ও সামাজিক জীবন। এই ভয়াবহতা ঠেকানোর জন্য এবার টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসি উদ্যোগ নিয়েছে ‘আপত্তিকর কনটেন্ট ফিল্টারিংয়ের’। একই সঙ্গে পর্নোগ্রাফি বন্ধের। এজন্য মন্ত্রণালয় বিটিআরসির নেতৃত্বে সম্প্রতি একটি কমিটি গঠন করেছে। বিটিআরসির একজন মহাপরিচালককে প্রধান করে কমিটিতে এনটিএমসি, আইএসপি, মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিটিআরসি জানিয়েছে, যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নানা অপপ্রচার চালিয়ে সমাজকে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার কখনও ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থেও ইন্টারনেটের ব্যবহার চলছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে আপত্তিকর নানা মিথ্যাচার। বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারনেটে প্রচার হওয়া মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে দাঙ্গা-হাঙ্গামার মতো ঘটনা ঘটছে। সমাজে কিছু লোক এই কাজ করছে। অবাধ তথ্যপ্রবাহের কারণে ইন্টারনেট সুপার হাইওয়ের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি চলে আসছে। এগুলো বন্ধ করতে না পারলে যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে বেশিরভাগ মানুষ ইন্টারনেটকে ভাল কাজেই ব্যবহার করছেন। অল্পসংখ্যক মানুষের জন্য গোটা সমাজকে ধ্বংস হতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ইন্টারনেটে আপত্তিকর কনটেন্ট বন্ধ করার জন্য বিটিআরসির নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। এই কমিটি কিভাবে এ সব বন্ধ করা যায় তার একটি উপায় বের করবে। তারপরই ব্যবস্থা নেয়া হবে। টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানিয়েছে, অনলাইনে আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ নামে একটি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কারিগরি বিষয়গুলো দেখে কমিটি একটি প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কিভাবে ইন্টারনেট ফিল্টারিং করা যায় তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে যে আধুনিক প্রযুক্তি যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হয় তাও করা হবে। ইন্টারনেটকে এভাবে আর অরক্ষিত রাখা হবে না। এখানে কিছু নিয়ন্ত্রণ রাখতেই হবে। তা না হলে যার যা খুশি তাই লিখে সমাজে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করে যাবে। যেসব পর্নো ওয়েবসাইট রয়েছে তা কীভাবে বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়েও কমিটি কাজ করবে। বিশ্বের অনেক দেশেই ইন্টারনেট ফিল্টারিং করেই মানুষের কাছে ব্যান্ডউইথ পৌঁছে দেয়া হয়। বিটিআরসি এই কমিটির নেতৃত্ব দেবে। অনলাইনে পর্নো কনটেন্ট ও ওয়েবসাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি পর্নোগ্রাফি বন্ধে প্রস্তাব তৈরি করবে। তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি), আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং আইএসপির প্রতিনিধিরা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। আইএসপিগুলো পর্নো সাইট ও আপত্তিকর কনটেন্ট বন্ধ করতে পারবে কিনাÑ সভায় জানতে চাওয়া হলে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয় সাইটগুলো বন্ধ করা সম্ভব। বিটিআরসি নির্দেশ দিলে তারা ব্যবস্থা নেবে। ইন্টারনেট বিস্তারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর কনটেন্টের কারণে বিভিন্ন সময় বিটিআরসিতে অভিযোগ আসছিল বলে জানায় টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর কনটেন্ট বন্ধ ও পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেসব ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান এসব কনটেন্ট বন্ধ করবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইন্টারনেটে পর্নো ও আপত্তিকর কনটেন্ট প্রকাশ করে এমন ওয়েবসাইটের তালিকা তৈরি করে সেগুলো বন্ধে ৩ স্তরের কারিগরি ব্যবস্থা নেয়া হবে। গঠিত কমিটি তাৎক্ষণিক প্রস্তাব, মধ্যবর্তী প্রস্তাব ও চূড়ান্ত প্রস্তাব তৈরি করবে। শুধু তালিকা ধরেই নয়, ইন্টারনেটে পর্নো বন্ধের প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। ইন্টারনেটে পর্নো ও আপত্তিকর কনটেন্টের সহজলভ্যতা অপ্রাপ্তবয়স্কসহ সব নাগরিকের ওপর বিরূপ সামাজিক প্রভাব ফেলছে। আপত্তিকর ওয়েবসাইট বন্ধে নির্দেশের পর কোন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) যদি বন্ধ না করে, তাদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ২২ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে ৫ কোটি ৮৩ লাখের বেশি মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আসছেন। বাকিরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। ইন্টারনেট ফিল্টারিংয়ের বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, ইন্টারনেট ফিল্টারিংয়ের বিষয়টি বিশ্বের অনেক দেশেই আছে। তবে এটা করতে হলে দক্ষ লোকবলের প্রয়োজন। কারণ ইন্টারনেট এমন একটি মাধ্যম যার হাজারটা পথ রয়েছে। একটা বন্ধ করলে অন্যটা খুলে নিচ্ছে দক্ষরা। তা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
×