ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের উদ্যোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

অবকাঠামো ও গবেষণা সক্ষমতা বাড়ছে বঙ্গবন্ধু কৃষি ভার্সিটিতে

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

অবকাঠামো ও গবেষণা সক্ষমতা বাড়ছে বঙ্গবন্ধু কৃষি ভার্সিটিতে

আনোয়ার রোজেন ॥ ভৌত অবকাঠামো ও গবেষণা সক্ষমতা বাড়ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন হাজার ছাত্রছাত্রীর জন্য ১০ তলাবিশিষ্ট পৃথক দুটি নতুন হল নির্মাণ করা হবে। এর ফলে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে। এছাড়া নির্বিঘেœ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১০ তলাবিশিষ্ট আরও দুটি নতুন একাডেমিক ভবন ও তিন তলাবিশিষ্ট একটি মাঠ গবেষণাগার কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রায় ৩৭৬ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের এ প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হতে পারে। অনুমোদন পেলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। রবিবার পরিকল্পনা কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোর ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি আন্তর্জাতিক মানের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা এর অন্যতম উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্যে সরকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসন সুবিধা, একাডেমিক ও মাঠপর্যায়ে গবেষণা সুবিধা নিশ্চিত করতে চায়। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছেÑ ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ছাত্র হল ও একটি ছাত্রী হল নির্মাণ, ১০ তলাবিশিষ্ট দুটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও একটি আন্তর্জাতিক কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় তিন তলাবিশিষ্ট মাঠ গবেষণাগার কমপ্লেক্স নির্মাণ, শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য দুটি ১০ তলা ইউটিলিটি ভবন নির্মাণ, যানবাহন গ্যারেজ নির্মাণ, সিকিউরিটি ব্যারাক নির্মাণ, পাম্প হাউস, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের গবেষণার জন্য পুকুর খনন, শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য বৈজ্ঞানিক ও অফিস যন্ত্রপাতি, কেমিক্যালস এবং গ্লাসওয়ার ক্রয়, চারটি যানবাহন ক্রয় এবং আসবাবপত্র, বই ও জার্নাল ক্রয় ইত্যাদি। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্পের সম্পূর্ণ ব্যয় মেটানো হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ চূড়ান্ত সুপারিশে বলেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে দেশে কৃষিশিক্ষার উন্নত ও উচ্চতর সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো ও গবেষণা সক্ষমতা বাড়াতে নতুন বিনিয়োগ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষিবিজ্ঞানে এমএস ও পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষাদান ও ডিগ্রী প্রদান এবং কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ক মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার জন্য ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার সালনায় ১৯৮৩ সালে ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ ইন এ্যাগ্রিকালচার (ইপসা) প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে কৃষির উন্নয়ন তথা জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকা-ে অংশগ্রহণে সক্ষম প্রয়োজনীয় উচ্চশিক্ষিত, সৃজনশীল, সুদক্ষ ও আধুনিক কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কৃষিবিজ্ঞানী সম্প্রসারণ কর্মী তৈরি করাই ছিল এর প্রধান উদ্দেশ্য। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে ইপসা সুনামের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের এমএস ও পিএইচডি ডিগ্রী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমর্যাদাসম্পন্ন একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত কৃষিশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ইপসা আইন প্রবর্তন করে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় এবং ১৯৯৮ সালের ৮ জুলাই জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুমোন লাভ করে। অতঃপর ন্যূনতম অবকাঠামো তৈরি হলে ২০০৫ সাল হতে চারটি অনুষদের অধীন বিএসসি (কৃষি) প্রোগ্রামে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা শুরু হয়। সূত্র জানায়, বর্তমানে বিএসসি প্রোগ্রামে যেসব ছাত্রছাত্রী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে তাদের অর্ধেক ছাত্রী। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও ছাত্রছাত্রীদের থাকার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক হল নেই। গত এক দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষকদের অফিস, ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষ, আবাসিক হল, গবেষণাগার ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অভাবে ছাত্রছাত্রী ভর্তি, শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য ৪০৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৬ সালের জুলাই হতে ২০২১ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ওপর গত ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন চাহিদা, একডেমিক ভবনের প্রয়োজনীয়তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের বাস্তব চাহিদা সরেজমিন প্রতিবেদন যাচাই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
×