ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জয়নুল গ্যালারিতে প্রাচ্যকলা বিভাগের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

জয়নুল গ্যালারিতে প্রাচ্যকলা বিভাগের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নীলাভ ছোঁয়ামাখা জমিনে উঠে এসেছে তিন চাকার রিক্সা। শহরের অন্যতম এই অনুষঙ্গটি দাঁড়িয়ে আছে কোন সড়কের ধারে। রিক্সার আসনের বদলে পা-দানিতে বসে আছেন বৃদ্ধ রিক্সাচালক। কানে তার মুঠোফোন। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের অবসরে আলাপ করছেন কোন এক স্বজনের সঙ্গে। কাগজে জলরংয়ের আশ্রয়ে চিত্রকর্মটি এঁঁকেছেন শাহনাজ আক্তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে শ্রেষ্ঠ মাধ্যম পুরস্কার পেয়েছে ছবিটি। যাপিত জীবনের প্রতিচ্ছবিসহ শিল্পীর কল্পলোকের ভাবনাতাড়িত এমন অনেক ছবি এখন শোভা পাচ্ছে চারুকলা অনুষদের ১ ও ২নং জয়নুল গ্যালারিতে। সমকালীন প্রাতিষ্ঠানিক প্রাচ্যচিত্রকলায় অধ্যয়নরত চারুশিক্ষর্থীরা ঐতিহাসিক পথ সন্ধানের পাশাপাশি নিজস্ব অস্তিত্ব মেলে ধরেছেন এসব চিত্রকর্মে। সমকালীনতায় উজ্জ্বল প্রাচ্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের শিল্পের সঙ্গে শিক্ষকদের বৈচিত্র্যময় চিত্রকর্মের সম্মিলনে সেজেছে এই প্রদর্শনী। প্রাচ্য শিল্পধারার বৈশিষ্ট্য লালনে ব্রতী হয়ে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগ। প্রাচ্যভাবনার মৌলিক দর্শনগুলো উপস্থাপিত হচ্ছে বিভাগটির বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে। নবীন সৃজনের আভায় শিল্পরচনার স্বীকৃতিস্বরূপ বিভাগটির ছয় শিক্ষার্থী পেয়েছেন পুরস্কারও। সব মিলিয়ে সমসাময়িক সময়ের প্রাচ্যশিল্পচর্চার গতিধারা প্রকাশের প্রত্যয়ে রবিবার থেকে চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে শুরু হলো প্রাচ্যকলা বিভাগের এ বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। সকালে ছিল উদ্বোধনী সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিকতা। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাচ্যকলা বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুস সাত্তার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ছেলে প্রকৌশলী ময়নুল আবেদিন এবং লেখক ও শিল্পসমালোচক সাখাওয়াত টিপু। চারুকলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিভাগের প্রধান ড. মলয় বালা। উদ্বোধনী আয়োজনে ঘোষণা করা হয় বিজয়ী চারুশিক্ষার্থীদের নাম। এবার নিরীক্ষাধর্মী কাজে পুরস্কার পেয়েছেন এমএফএ প্রোগ্রামের ১ম পর্বের শিক্ষার্র্থী চন্দন কুমার সরকার। তার কাজের শিরোনাম ‘প্রকৃতি ও মানবদেহের ব্যবচ্ছেদ-১’। তৃতীয় বর্ষের বিএফএ সম্মানের শিক্ষার্থী শাহানাজ আক্তার জলরঙে চিত্রিত ‘বিশ্রাম’ শিরোনামের চিত্রকর্মের জন্য পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ মাধ্যম পুরস্কার। শিল্পী শফিকুল আমীন স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন এমএফএ ১ম পর্বের শিক্ষার্থী হাসিবা ইয়াসমিন, তাঁর শিল্পকর্মের শিরোনাম ‘প্রকৃতি-২’। চতুর্থ বর্ষের বিএফএ সম্মানের শিক্ষার্থী সামিনা জামান জলরঙে করা ‘দি প্রটেক্টর’ শীর্ষক কাজের জন্য পেয়েছেন শিল্পী আমিনুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার। তৃতীয় বর্ষ বিএফএ সম্মানের শিক্ষার্থী মোঃ আল-আমিন ‘জড় জীবন’ শিরোনামের চিত্রকর্মের জন্য পেয়েছেন শিল্পী রশিদ চৌধুরি স্মৃতি পুরস্কার এবং দ্বিতীয় বর্ষ বিএফএ সম্মানের শিক্ষার্থী মোঃ জাহিদুল আলম জামিল পেন্সিল মাধ্যমে করা ‘কম্পোজিশন’ শিরোনামের ছবির জন্য পেয়েছেন শিল্পী শওকাতুজ্জামান স্মৃতি পুরস্কার। বিভাগের শিক্ষকরা জানান, ড্রয়িং, বেসিক ডিজাইন, স্কেচ, ক্যালিগ্রাফি, মিনিয়েচার, ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মের অনুশীলন, জলরঙ, জলরঙ ধোয়া পদ্ধতি, জড় জীবন, ভূ-দৃশ্যচিত্র অঙ্কন ইত্যাদি চিত্রশৈলী, মাধ্যম ও পদ্ধতির ওপর জোর দিয়ে প্রাচ্যকলা বিভাগের শিল্প শিক্ষা সম্পন্ন করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতির এই পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো বিবেচনায় রেখে এবারের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে ৩৪ জন শিক্ষার্থীর ৪৪টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা হলেনÑ চন্দন কুমার সরকার, শাহনাজ আক্তার, হাসিবা ইয়াসমিন, সামিনা জামান, আব্দুল্লাহ আল আমিন, জাহিদুল আলম জামিল, জয়শ্রী গোস্বামী মিতা, আয়েশা আক্তার, ইসরাত জাহান তন্বী, শৈলী শ্রাবন্তী, মুনমুন আলম খান, তাবাসসুম আক্তার সনম, লায়লা ফজল, মাসুদা ফেরদৌস নিশাত, পূর্ণিমা আকতার, উৎপল কুমার, সৌরভ ঘোষ, সৈয়দা আফসানা কেয়া, মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম, তানিয়া আক্তার সুরাইয়া, হরেন্দ্র নাথ রায়, নুসরাত জাহান এনজি, ইতি রাজবংশী, তৌহিদা হক লিপি, শায়লা সিরাজ, হাসুরা আক্তার রুমকি, কাজী নওরীন মিশা, নাজনীন ইসলাম, নন্দিতা সুতার, পদ্মাবতী ঢালী, নিপা রানী সরকার, এম এ হোসেন, জান্নাতুল ফেরদৌস কেয়া ও আব্দুর রহীম। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রদর্শনীর বৈভব বাড়িয়েছে প্রাচ্যকলা বিভাগের ১০ শিক্ষকের আঁকা দশটি চিত্রকর্ম। এদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুস সাত্তার, অধ্যাপক নাসরীন বেগম, আব্দুল আযীয, ড. মিজানুর রহমান ফকির, ড. মলয় বালা, কান্তিদেব অধিকারী, গুপু ত্রিবেদী, দীপ্তি রানী দত্ত, সুমন কুমার বৈদ্য ও অমিত নন্দী। সপ্তাহব্যাপী চলমান এ প্রদর্শনী শেষ হবে ১০ ডিসেম্বর। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দশনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আসাদ চৌধুরীকে সম্মাননা দিল ঘাসফুল ॥ প্রখ্যাত কবি আসাদ চৌধুরীকে সম্মাননা প্রদান করল সাংস্কৃতিক সংগঠন ঘাসফুল। রবিবার বিকেলে পরীবাগে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের খোলা আঙিনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে কবি, সাহিত্যিক ও ভক্তদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন কবি। প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একজন করে গুণীজনকে সম্মাননা প্রদান করে ঘাসফুল। সেই ধারাবাহিকতায় ৭ম বর্ষপূর্তিতে কবিতার আড্ডা, কথায় কবিতায় কবি আসাদ চৌধুরীকে সম্মাননা শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সম্মাননাপ্রাপ্তির অনুভূতি জানিয়ে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি উদ্ধৃতি খুব মনে পড়ছে। সেটি হলোÑ ‘আমাদের আমাদিগের আত্মপরিচয় দেওয়ার রেওয়াজ নেই।’ সেই কথার সূত্র ধরেই এ সম্মাননাপ্রাপ্তি আমার জন্য বিব্রতকর। সাহিত্যে আমি যদি ভাল কোন কাজ করে থাকি সেটার মাধ্যমেই পাঠকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়েছে। মন্দ কিছু হলে তারা আমাকে মার্জনা করবেন। তবে দেশের দুর্যোগময় মুহূর্তে নন্দনচর্চার সঙ্গে যুক্ত হয়ে সমাজকে যাঁরা উপকৃত করছেন তাঁদের মূল্যায়ন করা হলে মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের কাজটি ত্বরান্বিত হবে। এই সম্মাননাপ্রাপ্তিতে ভাল লাগছে এ জন্য যে, আমি যাদের পছন্দ করি এমন অনেক মানুষ আমাকে ভালবাসা জানাতে আজকে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। আর জীবনের তাগিদে লেখকদের বাইরেও শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্র্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঘাসফুলের উপদেষ্টা আতা সরকার। ‘বিনয়ী কিন্তু প্রতিবাদী কবি আসাদ চৌধুরী’ শিরোনামে কবির জীবনের মূল্যায়নধর্মী প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জুনান নাশিত। আলোচনা পর্ব শেষে কবি আসাদ চৌধুরীকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। সম্মাননা অর্থের চেক প্রদান করেন ঘাসফুলের পরিচালক রাবিয়া সুলতানা পান্না। হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, কবি আসাদ চৌধুরী বাংলা ভাষার কবিতার অন্যতম স্বর। তাঁর কবিতায় পানের সঙ্গে মৌরি আছে, যার ঘ্রাণ ভিন্ন মুগ্ধতায় আমাদের আবিষ্ট করে। এ কারণেই তিনি যখন কোন সম্মান লাভ করেন সেটা শুধু ব্যক্তিগত প্রাপ্তি থাকে না, আমাদের সবার প্রাপ্তি হয়ে ওঠে। তাঁর লেখা পাঠ করাই হবে তাঁকে সম্মান জানানোর সবচেয়ে বড় পন্থা। আসাদ চৌধুরীর কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন- নাজমুল আহসান, নিশাত জাহান রানা, রাবিয়া সুলতানা পান্না ও ফেরদৌস আরা কবিতা। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন- ফারুক মাহমুদ, মারুফ রায়হান, জাহিদুল হক, মতিন বৈরাগী, আসলাম সানী, নাসির আহমেদ, হাসান হাফিজ, মিনার মনসুর, গোলাম কিবরিয়া পিনু প্রমুখ।
×