ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিএনজিচালিত গাড়ির হাল

চার লাখ গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে ৮৬ ভাগেরই রিটেস্টিং হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

চার লাখ গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে ৮৬ ভাগেরই রিটেস্টিং হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সিএনজি চালিত গাড়ির ৮৬ ভাগ সিলিন্ডার রিটেস্টিং বা পুনরায় পরীক্ষা করা হয়নি। জ্বালানি বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে চার লাখ গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে মাত্র ৫৩ হাজার ৮০০ সিলিন্ডারের রিটেস্টিং করা হয়েছে। মোট সিলিন্ডারের যা মাত্র ১৪ ভাগ। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ালেও দেখার কেউ নেই। জ্বালানি বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে ১৮০ সিএনজি কনভারশন ওয়ার্কশপ রয়েছে। দেশে গত ১৫ বছর ধরে সিএনজি চালিত গাড়ির প্রচলন শুরু হয়েছে। সরকারের কাছে থাকা হিসেবে বলা হচ্ছে দেশে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৫২২ গাড়ি এখন পর্যন্ত জ্বালানি তেল থেকে সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে। এসব গাড়িতে সিলিন্ডার রয়েছে চার লাখ। নিয়ম অনুযায়ী একটি সিএনজি সিলিন্ডারের মেয়াদ ৫ বছর। এরপর গ্যাস সিলিন্ডার রিটেস্টিং করা হয়। রিটেস্টিংয়ের পর যদি প্রমাণ হয় সিএনজি সিলিন্ডারটি গাড়ির জন্য উপযুক্ত তাহলে আরও তিন বছর ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দেশের সিএনজি সিলিন্ডারগুলোর রিটেস্টিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয় না। সম্প্রতি গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষায় সিএনজি সিলিন্ডারের রিটেস্টিং করার বিধান যুক্ত করার পরও উদ্যোগ নিচ্ছেন না গাড়ির মালিকরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গইঞ্চিতে তিন হাজার পাউন্ড চাপে যখন গ্যাস দেয়া হয় তখন রাস্তায় চলাচলকারী গাড়িটি চলমান বোমা হয়ে ওঠে। গ্যাস পূর্ণ করার সময় সিলিন্ডার এবং গ্যাসও উত্তপ্ত অবস্থায় থাকে। সিলিন্ডার যথাযথ না হলে বড় রকমের অঘটন ও প্রাণহানি ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে বড় বাস-ট্রাকের বিস্ফোরণের ঝুঁকি বেশি। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে বাস-ট্রাকগুলোতে ছয় থেকে আটটি সিলিন্ডার থাকে। দীর্ঘদিনের পুরাতন সিলিন্ডার ব্যবহার করায় গাড়িচালক ও ব্যবহারকারী নিজেই জানেন না তার গাড়িটি বিপজ্জনক বোমা হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে প্রচার কম থাকার অভিযোগ উঠছে। অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ এক একটি সিলিন্ডার একটি বোমার চেয়েও ভয়াবহ। সূত্রমতে প্রতিটি গাড়ির সিএনজি সিলিন্ডার রিটেস্টিং জন্য দু-তিনদিন সময় লাগে। এছাড়া রিটেস্টিং করাতে গেলে ২০ থেকে ৪০ লিটারের প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য দুই হাজার টাকা, ৪০-৬০ লিটারের প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য আড়াই হাজার টাকা, ৬০-৮০ লিটারের প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য তিন হাজার টাকা এবং ৮০ লিটারের বেশি প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। এ কারণে গাড়ির মালিকরা এ প্রক্রিয়াকে বাড়তি খরচ ও সময় নষ্ট বলে মনে করেন। বিস্ফোরক অধিদফতর সূত্র জানায়, মাঝে মধ্যে কিছু প্রাইভেটকারের পুনঃপরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যায় তবে বাস-ট্রাক বা অন্য যানবহনগুলোর কোন তথ্যই তাদের কাছে নেই। দেশে এখনও পর্যন্ত গত তিন বছরে ১৫০টির বেশি সিএনজি চালিত যানহবন দুর্ঘটনার স্বীকার হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়েও কয়েকটি গাড়িতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছর শুরুর দিকে আশুলিয়ার ডেল্টা সিএনজি ফিলিং স্টেশনে একটি প্রাইভেটকারে সিএনজি গ্যাস নেয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে গাড়ির মালিকসহ দুইজন নিহত হন। সিলিন্ডারের ভগ্নাংশ দেখে পুলিশ ওই সময় নিশ্চিত হয় এতে জোড়াতালি ছিল। অভিযোগ রয়েছে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির আড়ালে কিছু অসাধু ব্যক্তি নিয়োমের তোয়াক্কা না করে কম পয়সায় যানবাহনকে সিএনজিতে রূপান্তর করে দিচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে অক্সিজেন সিলিন্ডার এমনকি কম দামী জোড়াতালি দেয়া সিলিন্ডারও গাড়িতে বসানো হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, গাড়ির জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা সিলিন্ডারগুলো উচ্চ তাপমাত্রা ও হাইড্রোলিক চাপ সহনীয় করে তৈরি করা হয়। সেখানে জোড়া থাকে না। অথচ দেশে দুর্ঘটনার শিকার সিলিন্ডারে জোড়া থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যা যাত্রীদের জীবন বিপন্ন করছে।
×