ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জেলা পরিষদ নির্বাচন তফসিল কেন অবৈধ নয়- হাইকোর্টের রুল

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

জেলা পরিষদ নির্বাচন তফসিল কেন অবৈধ নয়- হাইকোর্টের রুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জেলা পরিষদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল কেন বেআইনী হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাইকোর্ট। একটি রিট আবেদনে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ রবিবার এই রুল জারি করেন। রুলে জেলা পরিষদ আইন ২০০০ সালের ৪(২) ও ১৭ ধারা এবং জেলা পরিষদ সংশোধিত আইনের ৫ ধারা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ। ঢাকা জেলা পরিষদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নুরে আলম, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। শুনানির একপর্যায়ে আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘২০০০ সালে বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন এ বিষয়ে একটি রুল দিয়েছেন। আজকে আমরাও রুল দিচ্ছি। দুই রুলের শুনানি একসঙ্গে হবে।’ জেলা পরিষদ আইন ২০০০ ও ২০১৬ (সংশোধিত)-এর তিনটি ধারা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না, তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করার পর গত ২৯ নবেম্বর ভোট স্থগিত ও জেলা পরিষদ আইনের তিনটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী। তার যুক্তি, সংবিধানের ১১ ও ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশে নির্বাচন জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে করতে হয়। কিন্তু জেলা পরিষদ আইনে ৪, ৫ ও ১৭ ধারা অনুযায়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত হচ্ছেন প্রতিনিধিদের ভোটে, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, প্রতিটি জেলায় স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের ভোটেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। রুল দিলেও ভোটে কোন স্থগিতাদেশ আদালত দেয়নি। রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ জানান, জেলা পরিষদ আইন ২০০০ সালের ৪(২) ও ১৭ ধারা এবং জেলা পরিষদ সংশোধিত আইনের ৫ ধারা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এসব ধারায় বলা হয়েছেÑ জেলার অন্তর্ভুক্ত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যেমন- সিটি কর্পোরেশন (যদি থাকে), উপজেলা পরিষদ, পৌর কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ নির্বাচকম-লীর সদস্য হবেন এবং তারা জেলা পরিষদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ আইনের এ তিনটি ধারা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭, ১১, ২৬, ২৭, ৩১ ও ৫৯ অনুচ্ছেদ এবং প্রস্তাবনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এর মধ্যে সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আর ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের প্রত্যেক ইউনিটে প্রতিনিধিরা আইন অনুযায়ী নির্বাচিত হবেন। বাংলাদেশে ইলেক্টোরাল ভোটের নিয়ম নেই। ইলেক্টোরাল ভোট গ্রহণ করার আগে এ সংক্রান্ত বিধি করতে হবে। তা না করেই ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, ২০১৬ সালে জেলা পরিষদ আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছে সেটিও সঠিক হয়নি। তাছাড়া এ নির্বাচনের মনোনয়নের সময় পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকারী দল থেকে বলা হয়েছেÑ যারা মন্ত্রী বা সাংসদ হতে পারেননি, দলে পদ-পদবীও নেই- এসব নেতাদের খুঁজে বের করে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেয়া হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় আইনের বিধানসমূহ ১৬ কোটি মানুষের স্বার্থে নয়, দলীয় স্বার্থে করা হয়েছে। এসব যুক্তি দেখিয়ে রিটটি দায়ের করা হয়েছে।
×