ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফিলিপিন্সকে রিজার্ভ চুরির তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হবে না ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

ফিলিপিন্সকে রিজার্ভ চুরির তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হবে না ॥ মুহিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়ার অনুরোধ নাকচ করে দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ফিলিপিন্স কর্তৃপক্ষকে এটি দেয়া হবে না। তিনি বলেন, রিজার্ভ চুরির পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে আমরা এখনও ফিলিপিন্স সরকারের আনুষ্ঠানিক কোন চিঠি পাইনি। আর কোন চিঠি পেলেও ওই দেশের কাছে এ প্রতিবেদন দেয়া হবে না। কারণ এটি আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদন। এটি অন্যদের দিতে সরকার বাধ্য নয়। এটা কাউকেই দেয়া হবে না। বরং চুরির টাকা উদ্ধারে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) বাংলাদেশের পক্ষে আইনী লড়াই করবে। ফিলিপিন্স সুপ্রীমকোর্টের নির্দেশে জব্দ ২৯ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী বলেন, রিজাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরকার মামলা করবে কি না, সে বিষয়েও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে, বাংলাদেশের তদন্ত প্রতিবেদন চায় ফিলিপিন্স সরকার। রবিবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপিন্স সরকার বাংলাদেশের করা নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে। বাংলাদেশের তদন্তে যা উঠে এসেছে, তা ফিলিপিন্সকে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী কার্লোস ডোমিনগুইজ বলেন, ঢাকার যে প্রতিবেদন, সেটাতে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির ফিলিপিন্স থেকে ফিরে আসার পর এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগের প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে পারস্পরিক আইনী সহায়তার (মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এ্যাসিসটেন্স) আওতায় ফিলিপিন্স সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছে। ফিলিপিনো কর্মকর্তারাও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। গত ২৬ নবেম্বর আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ওই প্রতিনিধি দল ম্যানিলা সফর করে। এ সফরের সময় এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সেদেশের শীর্ষ আইন কর্মকর্তার কাছে এ সহায়তা চেয়েছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৫ মিলিয়ন ডলার আমরা আগেই পেয়েছি। ২৯ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফ্রিজ করা আছে। সেদেশের সুপ্রীমকোর্টের রায় পেলে আমরা এই ২৯ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাব। এটি পেতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমরা ফিলিপিন্স সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। ফিলিপিন্স সরকার এবং দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এ অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হবে। তবে টাকা ফেরতের বিষয়ে ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) যে বক্তব্য দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। ফিলিপিন্স সরকারও তা গ্রহণ করেনি। এছাড়া আইনমন্ত্রীর সঙ্গে ফিলিপিন্সের অর্থমন্ত্রী বৈঠকে বাকি অর্থ ফেরত দেয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফিলিপিন্সের রিজাল ব্যাংকের মাধ্যমেই ক্যাসিনোতে গেছে। চুরি যাওয়া অর্থ একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে জমা রাখা হলেই-তা তাদের সম্পত্তি হয়ে যায় না। অর্থ ফেরত না দেয়ার যুক্তি নেই। সেগুলো বাংলাদেশের অর্থ, এ অর্থ আমাদের প্রাপ্য। কাজেই এই টাকা রিজাল ব্যাংক কিভাবে দাবি করে সেটা আমার বোধগম্য নয়। বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, জব্দ করা ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার ফেরত আনতে কোন মামলা করা হবে না। তবে যৌথভাবে বাংলাদেশের পক্ষে রিজার্ভ উদ্ধারে ফিলিপিন্স সরকার দুটি মামলা করেছে। এ মামলাগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ সরকার। আপাতত, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রয়োজন নেই। যদি মামলা করতে হয় ফিলিপিন্স সরকার করবে বলে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমাদের এখন করণীয় হচ্ছে সেদেশের সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা। উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫ ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে। চুরি হয়ে ফিলিপিন্সে চলে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি ডলার ইতোমধ্যে ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে বাকি প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ডলার ফেরতের বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই ঘটনায় সমালোচনার মুখে গবর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন ড. আতিউর রহমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল। মার্চ মাসে সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান করা হয় সাবেক গবর্নর ফরাসউদ্দিনকে। তদন্ত প্রতিবেদন চায় ফিলিপিন্স সরকার ॥ রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ দ্রুত উদ্ধারে সহায়তার জন্য হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত থেকে চুরির সবচেয়ে বড় এই ঘটনায় বাংলাদেশের তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে ফিলিপিন্স সরকার। দেশটির অর্থমন্ত্রী কার্লোস ডমিনগেজের এক বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে রবিবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সফররত বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গত সপ্তাহে এক বৈঠকের পর তিনি বলেন, ঢাকা তার তদন্তের ফল বিনিময়ের জন্য ম্যানিলা ‘জোরালো সুপারিশ’ করছে। বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে ফিলিপিন্স সরকারের পক্ষে যা যা করা সম্ভব তা করা হবে বলেও আশ্বাস দেন রডরিগেজ। এদিকে, চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসা ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতার্তে ‘জরুরী কারণ’ দেখিয়ে সফররত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করে দিয়েছেন বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে ফিলিপিন্সের সরকারের সঙ্গে তদন্তের ফল বিনিময় করা বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যানিলায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ বলেন, আমাদের কাছে এখনও কেউ কিছু জানতে চায়নি। তবে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এসপেনিলা বলেন, তদন্ত এখনও শেষ না হওয়ায় প্রাথমিক হালনাগাদ তথ্য দেবে বলে বাংলাদেশের কাছে ম্যানিলা আশ্বাস পেয়েছে। দায় অস্বীকারের পাশাপাশি বাংলাদেশের চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত দিতে রিজাল ব্যাংকে বাধ্য করা হবে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন। তবে রিজাল ব্যাংক ঘটনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলাকে দায়ী করে অর্থ ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। চুরি যাওয়া এই অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে সরিয়ে নেয়া ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় রিজাল ব্যাংককে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২০ কোটি ডলার জরিমানা করা হয়েছে।
×