ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে ৩শ’ বিধিতে বিমানমন্ত্রীর বিবৃতি

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল, না নাশকতা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল, না নাশকতা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ হাঙ্গেরির যাত্রাপথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটের যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, নাকি নাশকতা তা নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট এজেন্সি খতিয়ে দেখছে। বঙ্গবন্ধুর পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের কা-ারি হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাই তাঁর নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনরূপ শৈথিল্য প্রদর্শন করার কোন সুযোগ নেই এবং ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি আরও সচেতনতার সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে। রবিবার জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে ৩০০ বিধিতে প্রদত্ত বিবৃতিতে একথা বলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বিবৃতি প্রদানের সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, বিমানটির জরুরী অবতরণে গোটা জাতি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিল। জাতির সৌভাগ্য যে, প্রধানমন্ত্রী নিরাপদে জরুরী অবতরণ করেন, এজন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। একই সঙ্গে সে সময়ে প্রধানমন্ত্রী যে ধৈর্য দেখিয়েছেন এবং নিজে ওই পরিস্থিতি মোকাবেলার সাহসিকতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেটাও উল্লেখ করতে চাই। আবারও প্রমাণিত হয়েছে জাতিকে দুর্যোগ মোকাবেলায় এবং এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব কতখানি অপরিহার্য। রাশেদ খান মেনন জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী হয়েছে যে, এক্ষেত্রে তৃতীয় অর্থাৎ হিউম্যান ফ্যাক্টর (মানবসৃষ্ট) বিমানের ফ্লাইটের ত্রুটির জন্য দায়ী। প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর যাত্রার পূর্বে ২৬ নবেম্বর বিমানের এই এয়ারক্রাফটি ইন্সপেকশনের সময় যে ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছিল তার রেক্টিফিকেশনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৬ জনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক তদন্তের ফলের ওপর ভিত্তি করে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট এবং দৃশ্যমান আরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিমানমন্ত্রী বিবৃতিতে আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে বহনকারী ভিভিআইপি বিজি-১০১১ ফ্লাইটটি ২৭ নবেম্বর হাঙ্গেরির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে। যাত্রা শুরুর প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা পর বিমানের পাইলটের দৃষ্টি গোচর হয় যে, বাম ইঞ্জিনে অয়েল প্রেশার কম দেখাচ্ছে। উক্ত ফ্লাইটের পাইলট ঢাকায় অবস্থিত বিমান কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে কোন রকম ঝুঁকি না নিয়ে নিকটবর্তী তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাদ বিমানবন্দরে জরুরী অবতরণ করেন। অবতরণের সময় ফ্লাইটের অয়েল প্রেশার ছিল ২৪ পিএসআই। বাম ইঞ্জিনের অয়েলের তাপমাত্রা ডান ইঞ্জিনের সমান ছিল। বিমানটি নিরাপদে আশখাবাদ বিমানবন্দরে অবতরণের পর প্রয়োজনীয় ত্রুটি সংশোধন করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে একই বিমান হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের উদ্দেশে আশখাবাদ ত্যাগ করে এবং নিরাপদে বুদাপেস্টে পৌঁছে। মন্ত্রী বিবৃতিতে আরও জানান, এয়ারক্রাফটের ক্ষেত্রে এ ধরনের ত্রুটি কিংবা নিরাপত্তা ঝুঁকির সৃষ্টি হলে তিনটি ফ্যাক্টরকে ভিত্তি করে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তিনটি ফ্যাক্টর হচ্ছে- মেকানিক্যাল/ টেকনিক্যাল ফ্যাক্টর, ইনভাইরনমেন্টাল ফ্যাক্টর এবং হিউম্যান ফ্যাক্টর। তিনি জানান, ইতোমধ্যে দুটি তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেছে। উভয় প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, অয়েল সেনসরের পাশে অবস্থিত অয়েল বি-নাট ঢিলার কারণে অয়েল লিকেজ ঘটে, ফলপ্রতিশ্রুতিতে অয়েল প্রেশার কমতে থাকে।
×