ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

জাতির আকাক্সক্ষা পূরণে নিজেদের সক্ষম করে তুলতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

জাতির আকাক্সক্ষা পূরণে নিজেদের সক্ষম করে তুলতে হবে

বিডিনিউজ ॥ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের ‘জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে সক্ষম’ করে গড়ে তুলবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার ঢাকা সেনানিবাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যবৃন্দ তাদের দক্ষতা, দেশপ্রেম, নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির জন্য আরও সাফল্য বয়ে আনবে। আমি আশা করি, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আপনারা নিজেদের গড়ে তুলবেন এবং জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে সর্বতভাবে সক্ষম হবেন। প্রধানমন্ত্রী বিমান বাহিনীর সদস্যদের ‘দক্ষ ও আদর্শ’ বিমানসেনা হিসেবে গড়ে ওঠার তাগিদ দেন এবং জনগণের ‘কষ্টার্জিত অর্থের’ বিনিময়ে সংগ্রহ করা যুদ্ধ উপকরণের ‘কার্যকর ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে’ আরও যতœবান হতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, শুধু দেশে নয়, বিদেশের মাটিতেও আপনারা যতœবান থাকবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। শেখ হাসিনা বলেন, বিমান বাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে দেশের জন্য ‘গৌরব ও সম্মান’ বয়ে এনেছেন। এ বাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের নেয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিমান বাহিনী দেশ ও জাতির উন্নয়ন কর্মকা-ে আরও সক্রিয় অবদান রাখতে সক্ষম হবে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিতে পৌঁছার পর বিমান বাহিনীর প্যারেড পরিদর্শন করেন। এর পর বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিকে তিনি ন্যাশনাল স্টান্ডার্ড প্রদান করেন। এই ঘাঁটির ‘গৌরবময়’ অতীতের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিমানঘাঁটি বঙ্গবন্ধু একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই ঘাঁটি মিত্র বাহিনীর বিমান পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতার নির্দেশে এই ঘাঁটির পুনর্গঠন ও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথাও তিনি মনে করিয়ে দেন। ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল এই ঘাঁটির নাম রাখা হয় বঙ্গবন্ধু ঘাঁটি। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সর্ববৃহৎ যুদ্ধবিমান ঘাঁটি। শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, আকাশ প্রতিরক্ষা এবং শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধে এই ঘাঁটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিমান বাহিনীর এই ঘাঁটি ঢাকা তথা বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষার মূল ঘাঁটি হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনায় এই ঘাঁটি প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় অসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় এই ঘাঁটির ‘পারদর্শিতা’ প্রশংসিত বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আকাশযুদ্ধে সুসজ্জিত বঙ্গবন্ধু ঘাঁটি বাংলাদেশের আকাশসীমাকে শত্রুমুক্ত ও নিরাপদ রাখতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। শেখ হাসিনা এ সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ এবং তাতে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে সীমিত যুদ্ধাস্ত্র নিয়েও পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে আকাশযুদ্ধে অংশ নেয়ার ‘গৌরবের’ কথা তিনি অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এই সাহসিকতার কথা বাঙালীর ইতিহাসে চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। একটি স্বাধীন জাতির আকাশসীমাকে নিরাপদ ও শত্রুমুক্ত রাখাই সেদেশের বিমান বাহিনীর মূল দায়িত্ব। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সামরিক কৌশলগত দিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিধি ও সম্ভাবনার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল একটি আধুনিক, পেশাদার ও শক্তিশালী বিমান বাহিনী গঠন করা।... বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই এই বাহিনীর আধুনিকায়ন শুরু হয়। বর্তমান সরকারও ফোর্সেস গোল ২০৩০’র আলোকে বিমান বাহিনীকে একটি আধুনিক ও প্রতিরোধক ক্ষমতাসম্পন্ন বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান শেখ হাসিনা। দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন। বিমান বাহিনী ঘাঁটি ‘বঙ্গবন্ধু’র ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্জন॥ আইএসপিআর জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুকে মর্যাদাপূর্ণ ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুর এয়ার অধিনায়ক এয়ার কমোডর মোঃ মফিদুর রহমান তাকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের একটি প্রধান অপারেশনাল বিমান ঘাঁটি যা ‘হোম ফাইটার্স’ নামে পরিচিত। জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আকাশ প্রতিরক্ষায় এ ঘাঁটি বিশেষ ভূমিকা রাখে। শান্তিকালে এই ঘাঁটি থেকে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হয় এবং এক্ষেত্রে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুর পারদর্শিতা বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত ও প্রশংসিত। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এই ঘাঁটি পূর্ণাঙ্গ জনবল এবং যন্ত্রাংশসহ জাতির পিতা ‘বঙ্গবন্ধুর’ নামানুসারে ‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে ঘাঁটিটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সর্ববৃহৎ যুদ্ধবিমান ঘাঁটি এবং এক অপরিহার্য ঘাঁটি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন রেজা এমদাদ খান। এ সময় প্যারেড থেকে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম ও তিনবার জয়ধ্বনি প্রদান করা হয়। এর পর ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য জাতীয় পতাকাসহ একটি হেলিকপ্টারের পাশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ওই ঘাঁটি থেকে পরিচালিত মিগ-২৯, এফ-৭ বিজি ও এফ-৭ বিজি ১ বিমানের মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট পরিচালনা করা হয়। পরে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড সমুন্নত রাখার জন্য মোনাজাত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী পরে পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। সবশেষে তিনি বিমান বাহিনী প্রধান ও নির্বাচিত বিএএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোকচিত্রে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাম-লী, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বৈদেশিক কূটনৈতিকবৃন্দ, ভারপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী প্রধান ও নৌবাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারসহ সামরিক, আধা-সামরিক ও অসামরিক উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
×