ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফায়ারের ১৪ ইউনিটের পৌনে দু’ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে

৫শ’ ঘর ছাই ॥ কড়াইল বস্তিতে আবার আগুন

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

৫শ’ ঘর ছাই ॥ কড়াইল বস্তিতে আবার আগুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও বড় ধরনের অগ্নিকা- ঘটেছে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে। মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে রবিবার দুুপুরে এ বস্তিতে লাগা আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে পাঁচ শ’ ঘর। বেলা আড়াইটার পর ওই বস্তিতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৪ ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পৌনে দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর বিকেল চারটা ২০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বস্তির বউবাজার এলাকার একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ হয়নি। এতে কেউ হতাহত হয়েছে বলেও খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ওসি এনায়েত হোসেন জানান, বেলা আড়াইটার পর ওই বস্তিতে আগুন লাগে। বউবাজার এলাকা থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুন পার্শ্ববর্তী কাঁচাবাজারের অর্ধেক পুড়ে পশ্চিম-দক্ষিণ দিকে মাছবাজার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ১৪ ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে অগ্নিনির্বাপণের কাজ শুরু করে। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তরের মেয়র আনিসুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করতে স্থানীয় কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি। এ সম্পর্কে ঢাকা উত্তর সিটির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মফিজুর রহমান মফিজ জানান, এ ঘটনায় পাঁচ শতাধিক ঘর পুড়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে সহস্রাধিক মানুষ। বস্তি এলাকার একটি দোকান থেকে আগুনের উৎপত্তি হয় বলে স্থানীয়দের কাছে শুনেছেন তিনি। তবে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বা অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোন তথ্য জানাতে পারেনি অগ্নিনির্বাপক বাহিনী। হতাহতেরও প্রাথমিক কোন খবর পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, ঢাকার সবচেয়ে বড় এ বস্তিতে এর আগে গত ১৪ মার্চ আগুন লেগে অর্ধশত ঘর পুড়ে অন্তত দুইজন আহত হয়। গুলশান লেকের দুই তীরে দেড় শ’ একরের বেশি জমির ওপর বিশাল এলাকা নিয়ে এ বস্তিতে কয়েক লাখ লোকের বসবাস। দুপুরে ব্র্যাক সেন্টারের উত্তর পাশে বস্তির একটি অংশে আগুন লাগার পর ধোঁয়ার কু-লী উঠতে দেখা যায় বহু দূর থেকেও। উল্টো দিকের একটি ভবন থেকে অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও ফেসবুকে লাইভ করেন কাজল আব্দুল্লাহ নামের এক সোশ্যাল এ্যাক্টিভিস্ট। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আগুন খানিকটা কমে এলেও পরে আবার বাড়তে দেখা যায় বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি। এলাকাবাসী জানিয়েছে, হাজার কোটি দামের এই জমি দখলের জন্য বিভিন্ন সময় প্রভাবশালী মহল তৎপর হয়। পর পর দু’দফা আগুনের নেপথ্যে এ বিষয়টিই কাজ করেছে বলে বস্তিবাসীর বদ্ধমূল ধারণা। ওই বস্তির তিন নম্বর গলির মাজেদা বেগম উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, নয় মাস আগে লাগা আগুনের কোন তদন্ত হয়নি। থানায় মামলা হলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি কারও বিরুদ্ধে। এখানে আবার যে কোন সময় লাগানো হতে পারে গত তিন দিন ধরেই এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। স্থানীয় কয়েকজন নেতৃস্থানীয় লোকের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও তারা নিশ্চয়তা দিয়েছেন আর লাগানোর সাহস পাবে না কেউ। মাজেদা বেগম বলেন, কোন ঘরে প্রথম আগুন লাগে তা তিনি চোখে না দেখলেও শুনেছেন পাশের একটি লেপ-তোশকের দোকানেই আগুনের সূত্রপাত। শেফালী বেগম নামে এক নারী বলেন, অগ্নিকা-ের পর থেকে আমার ছেলে মোশাররফ (১২) ও মোহাম্মদকে (৮) খুঁজে পাচ্ছি না। সাদিয়া বেগম নামে আরেক নারী বলেন, আমি আমার নাতনিরে খোঁজে পাচ্ছি না। এখানে ভাড়া দেয়া আমার ১২ রুমও পুড়ে গেছে। আমি এবং আমার ছেলের বউ যে ঘরটিতে থাকি সেটিও পুড়ে গেছে। ঘরের আসবাবপত্রসহ নগদ ১ লাখ টাকাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বউবাজারের ইয়াসিন স্টোরের লুৎফুর মোল্লা বলেন, আমার চারটি দোকানের চারটি ফ্রিজ এবং নগদ ১ লাখ টাকা পুড়ে গেছে। দোকানের মালামালসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, লেপ-তোশক তৈরির একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। আবার কেউবা বলছেন, একটি হোটেল থেকেও আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় এ বস্তিতে এর আগে গত ১৪ মার্চ আগুন লেগে অর্ধশত ঘর পুড়ে যায়, সে সময় আহত হয় দুইজন। অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীর বুকের মধ্যে গড়ে ওঠা এ বস্তি পোশাক শ্রমিক, রিক্সাচালকসহ ঢাকার নিম্ন আয়ের বহু মানুষের ঠিকানা। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ওই বস্তি মাদকের কারবারি ও অপরাধীদের একটি বড় আখড়া হিসেবেও পরিচিত। মাঝে মধ্যে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য বিভাগ এখানে অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে। গুলশান লেকের দুই তীরে দেড় শ’ একরের বেশি জমির ওপর বিশাল এলাকা নিয়ে এ বস্তিতে কয়েক হাজার মানুষ বসবাস করে। ওই জমির মূল মালিক বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেড (বিটিসিএল)। আদালতের আদেশ নিয়ে বিটিসিএল ২০১২ সালে কড়াইলে জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে। প্রথম দিনের অভিযানে চার শতাধিক ঘর উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু পরদিন হাজার হাজার বস্তিবাসী গুলশান-মহাখালী এলাকার সড়কে নেমে ওই এলাকা অবরোধ করে রাখে। এতে বন্ধ হয়ে যায় উচ্ছেদ অভিযান। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ওই বস্তি মাদক ও অপরাধীদের আখড়া হিসেবেও পরিচিত।
×