ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার প্রস্তাব অন্তঃসারশূণ্য ও নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ ॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

খালেদার প্রস্তাব অন্তঃসারশূণ্য ও নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ ॥ নাসিম

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রস্তাবকে অন্তঃসারশূণ্য ও নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনার নামে ধুম্রজাল সৃষ্টি করার জন্যই খালেদা জিয়া বারবার মীমাংসিত ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসছেন। তাঁর ইসি গঠনের প্রস্তাব মূলত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আবারো ঘোলাটে করার পাঁয়তারা। এছাড়া সেনাবাহিনীকে নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে উনি দেশপ্রেমিক এ বাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। রবিবার ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠক শেষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ১৪ দল আদর্শিক জোট। আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে যৌথভাবে মাঠে নামার বিষয়ে কাজ করছে ১৪ দল। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আইভীকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করতে একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে ইতোমধ্যে জাসদ নারায়ণগঞ্জে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে। এই প্রার্থী তুলে দিয়ে সবাই একসঙ্গে কাজ করা যায় কীভাবে, তা খুঁজে বের করার জন্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধি দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ১৪ দলীয় বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতারা আইভীকে ১৪ দলের একক প্রার্থী করার প্রস্তাব দেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত জাসদের (একাংশ) শিরীন আখতার বলেন, দলীয় ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানানো যাবে। সূত্র জানায়, ১৪ দলের বৈঠকে সিদ্ধান্তের আলোকে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যায়। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জাসদ প্রার্থির প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। জাসদ ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে আইভীর পক্ষেই জাসদ কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়। সূত্র জানায়, বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে এবং স্বাধীনতাবিরোধীরা যাতে সুযোগ না পায় সেজন্য জাসদ প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার হয়েছে। ব্রিফিংকালে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজে যে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল, তা থেকে প্রধানমন্ত্রী রক্ষা পাওয়ায় আমরা শুকরিয়া আদায় করছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে কেউ দোষী থাকলে তা বের হয়ে আসবে। খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ২০১৯ সালে নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনে হবে। নির্বাচন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আর এই নির্বাচন কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। সর্বশেষ কমিশন যেভাবে গঠিত হয়েছিল এবারও সেভাবেই হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সব নিবন্ধিত দলকে ডেকে কথা বলবেন। বিষয়টি মীমাংসিত, এতে আর আলোচনার সুযোগ নেই। বরং খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, যারা জনগনকে ভয় পায় তারাই অন্য পথে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে। বেগম খালেদা জিয়া অপ্রাসঙ্গিকভাবে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাব করে ধু¤্রজাল তৈরি করতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার জন্যই নির্বাচন কমিশন গঠনে এ ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে। কারণ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য কাদের নিয়োগ দেয়া হবে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর ও গাইবান্ধায় সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃজাতি গোষ্ঠীর ওপর হামলার বিষয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কেন্দ্রীয় ১৪-দলের নেতারা নাসিরনগর ও গাইবন্ধায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্থদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য একটি বিশেষ মহল পরিকল্পিতভাবে এ সকল ঘটনা ঘটিয়েছে। কেন্দ্রীয় ১৪-দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এ ধরনের ষড়যন্ত্র রুখতে পারবে। এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের নাজমুল হক প্রধান, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি, মহাসচিব এম এ আওয়াল এমপি, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা, গণতন্ত্র মজদুর পার্টির জাকির হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রে ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এ কে এম এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
×