ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিষ্প্রভ সাকিব উজ্জ্বল ঢাকা

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

নিষ্প্রভ সাকিব উজ্জ্বল ঢাকা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) প্রথম দুই আসরের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন। ব্যাটে-বলে নজরকাড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে অর্জনটা হয়েছিল তার। কিন্তু এবার বিপিএলের চতুর্থ আসরে তেমন কিছুই করতে পারেননি সাকিব আল হাসান। টেস্ট ও টি২০ ক্রিকেটের দুই নম্বর আর ওয়ানডের এক নম্বর এ অলরাউন্ডার ব্যাটে-বলে একেবারেই নিষ্প্রভ এবার বিপিএলে। যদিও তার দল ঢাকা ডায়নামাইটস দলগতভাবে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে সবার আগে কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করেছে এক নম্বর স্থান নিয়েই। কিন্তু সাকিব মাত্র একটি ম্যাচে তার সহজাত নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচসেরা হতে পেরেছেন। এবার তিনি ব্যাট হাতে ১১ ম্যাচে করেছেন ১৮৫ রান; নেই কোন অর্ধশতক। আর বল হাতে নিয়েছেন ৯ উইকেট। তবে গত দুই আসরের চেয়ে এবার দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও তামিম ইকবাল। ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে ১ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। এ আসরে ৩১৯ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৯ উইকেট। আর ৪২৫ রান করে সবার ওপরে তামিম। অলরাউন্ডার সাকিবকে পুরো আসরে সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি এবার। গত ২৬ নবেম্বর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিরুদ্ধে ২৬ বলে অপরাজিত ৪১ রানই এ আসরে তার সেরা ব্যাটিং নৈপুণ্য। একই ম্যাচে বল হাতে ৩০ রানে ১ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হয়েছেন। এই একটি ম্যাচ বাদ দিলে পুরো আসরেই বেহাল অবস্থা সাকিবের। সবমিলিয়ে ২৩.১২ গড়ে ১৮৫ রান করেছেন। বল হাতেও নিয়েছেন ৯ উইকেট। কিন্তু আগের তিন আসরের চেয়ে এবারই সাকিব কিছুটা অনুজ্জ্বল। ২০১২ সালের প্রথম আসরে খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলের হয়ে ১১ ম্যাচ খেলে ২৮০ রান করেছিলেন এবং বল হাতে নিয়েছিলেন ১৫ উইকেট। সেবার টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারটা তারই হাতে উঠেছিল। ২০১৩ সালের দ্বিতীয় আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে ব্যাটে-বলে প্রতিপক্ষের জন্য বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছিলেন। এবার তিনি ১২ ম্যাচে ৩২.৯০ গড়ে ৩২৯ রান করেন দুটি অর্ধশতকসহ। আর বল হাতে নেন ১৫ উইকেট। এবারও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন সাকিব। তবে গত বছর তৃতীয় আসর থেকেই কিছুটা অনুজ্জ্বল হতে শুরু করেন তিনি। রংপুর রাইডার্সের হয়ে মাত্র ১৭.০০ গড়ে ১৩৬ রান করেন ১১ ম্যাচে। অবশ্য বল হাতে দারুণ করেছিলেন, নিয়েছিলেন ১৮ উইকেট। এবার ব্যাটে-বলে তেমন কিছুই করতে পারেননি। তবে তার নেতৃত্বে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে সেরা অবস্থানে ঢাকা ডায়নামাইটস। শিরোপার অন্যতম দাবিদারও দলটি। সাকিব তার প্রথম ম্যাচে ২০ রান করার পর বল হাতে ২৩ রানে ১ উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর তার ব্যাট বলের পরিসংখ্যানটা ছিল এমন- ০ ও ১/১৮; ১০ ও ২/১৭; ২৪ ও ০/৩৪; ১৩ ও ০/৯; ০/১৭ ও ৮; ১৮* ও ১/৩৬; ৪১* ও ১/৩০; ১/৩১ ও ২২; ২৯ ও ২/১১ এবং ০/২৪। সাকিবের চেয়ে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে এবার এগিয়ে আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবী। তিনি চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে বল হাতে ১১ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে। এর পাশাপাশি ব্যাট হাতে ৪২.৬০ গড়ে ১টি অর্ধশতক হাঁকিয়ে করেছেন ২১৩ রান। এগিয়ে আছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। তিনি এবারের আসরে ১১ ম্যাচে ধারাবাহিকভাবে রানের মধ্যে থেকে করেছেন ৩৫.৪৪ গড়ে ৩১৯ রান। বল হাতেও দু’টি ম্যাচ জিতিয়েছেন দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে। ৯ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। গত তিন আসরে ব্যাট হাতে মাহমুদুল্লাহ করেছেন- ১৮০, ২৩৩ ও ২৭৯ রান। এবার ছাড়িয়ে গেছেন নিজের সেই পুরনো নৈপুণ্যগুলোকে। সেই সঙ্গে মুশফিকুর রহীমের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে ১ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। ৪৮ ম্যাচ খেলে ২৭.৩২ গড়ে ৪ হাফসেঞ্চুরিসহ তার রান ১০১১। মুশফিকের রান ৩৬.৬২ গড়ে ৭ অর্ধশতকসহ ৪৬ ম্যাচে ১১৭২। তবে সবচেয়ে উন্নতি হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গত দুই বছর ধরে ফর্মের তুঙ্গে থাকা তামিম ইকবালের। সব ফরমেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক তামিম এবার ১২ ম্যাচে ৪২৫ রান করে সবার ওপরে। এক আসরে সর্বাধিক ৪৮৬ রান করেছিলেন পাকিস্তানের আহমেদ শেহজাদ ২০১২ সালের প্রথম আসরে। ২০১৩ সালের আসরে দ্বিতীয় সর্বাধিক (এক আসরে) ৪৪০ রান করেছিলেন মুশফিকুর রহীম। একই আসরে হল্যান্ডের রায়ান টেন ডয়েশ্চেট করেছিলেন ৪৩২। এ দু’জনের চেয়ে পিছিয়ে থাকা তামিমের সুযোগ আছে সবার ওপরে ওঠার। একইসঙ্গে ১ হাজার রান পূরণেরও সুযোগ আছে। সেজন্য মাত্র ২৫ রান দরকার তার। ৩৩ ম্যাচে ৩৩.৬২ গড়ে তিনি করেছেন ৯৭৫ রান সর্বাধিক ১১ ফিফটিসহ। ২০১২ বিপিএলে দুই ম্যাচে ৮, ২০১৩ সালের আসরে ১০ ম্যাচে ২৪৪ এবং গত বছর তৃতীয় আসরে ৯ ম্যাচে ২৯৮ রান করেছিলেন তামিম। এবার নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন। এ দু’জন এগিয়ে গেলেও সাকিব পিছিয়ে পড়েছেন।
×